দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা শহরে অবস্থিত ‘জ্যাকব টাওয়ার’ পর্যটকদের জন্য নির্মিত একটি ওয়াচ টাওয়ার। এই টাওয়ার থেকে চারপাশের ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) এবং বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব টাওয়ারটি নিজের নামে নামকরণ করেন।
তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতা জ্যাকব টাওয়ারের নাম পরিবর্তন কর ‘চরফ্যাশন টাওয়ার’ নামকরণ করেন। এরপর থেকে টাওয়ারটি নিয়ে সমালোচনা থামছেই না। একে একে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য।
চরফ্যাশন খাসমহল মসজিদের মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে বিশাল টাওয়ার নির্মাণ এবং তা নিজের নামে নামকরণ করেন। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, টাওয়ার থেকে আয়ের ২৫ শতাংশ মসজিদের জন্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়া, নির্মাণ ব্যয়ের হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতার ঘাটতি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুউচ্চ টাওয়ার হিসেবে জ্যাকব টাওয়ার উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এটি ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ভোলার সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, এমপিসহ ধনী ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিকভাবে ২০১৩ সালে চরফ্যাসনের খাসমহল জামে মসজিদের একটি মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সৌদি আরবের মক্কার শায়েখ আল্লামা আবদুল হাফিজ মক্কি ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সৌদি সরকারের তহবিল এবং জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে ২০১৫ সালের মধ্যে মিনারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
তৎকালীন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব মসজিদের মিনারের পরিবর্তে সেখানে টাওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। পৌরসভার তহবিল থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে সর্বমোট ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২৫ ফুট উচ্চতার জ্যাকব টাওয়ার নির্মাণ করেন। পরে মসজিদ কমিটির কাছ থেকে প্রভাব খাটিয়ে একটি রেজল্যুশন করিয়ে টাওয়ার নির্মাণের বৈধতা দেওয়া হয়।
রেজল্যুশন অনুযায়ী, টাওয়ার থেকে আয়ের ২৫ শতাংশ মসজিদের জন্য বরাদ্দের কথা থাকলেও সেটি দেওয়া হয়নি। মসজিদের মুসল্লিদের অভিযোগ, টাওয়ার নির্মাণের আড়ালে সরকারি অর্থ লুটপাট ও আত্মসাৎ করা হয়েছে।
টাওয়ারটি মসজিদের মিনার হিসেবে ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন মুসল্লি রফিকুল ইসলাম, মো. ছাদেক, ইউনুছ আলীসহ অনেকেই। এছাড়া টাওয়ারটি মসজিদের প্রবেশপথে অবস্থিত হওয়ায় মুসল্লিদের পবিত্রতা ও সুবিধা বিবেচনার কথাও উল্লেখ করেন তারা।
সরকার পরিবর্তনের পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় টাওয়ারের উদ্বোধনী ফলক ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ছাত্র-জনতা নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘চরফ্যাশন টাওয়ার’। তবে টাওয়ারটির আয়-ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান পৌর কর্তৃপক্ষ।
চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসান জানান, আগের অনিয়ম দূর করে টাওয়ারটি এখন নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনার চেষ্টা চলছে। আয়ের নির্দিষ্ট অংশ মসজিদের জন্য আলাদা অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হবে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার বলেন, এটি মূলত দুই প্রতিষ্ঠান মসজিদ ও পৌরসভার সম্পত্তি। মসজিদকে আয়ের একটি অংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ভবিষ্যতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে আয়ের নির্দিষ্ট অংশ মসজিদের জন্য আলাদা হিসাবে জমা দেওয়া হবে
আপনার মতামত লিখুন :