বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৫, ১০:১৬ এএম

শঙ্কা থাকলেও সম্ভাবনার স্বপ্ন বুনছে দ্বীপবাসী

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৫, ১০:১৬ এএম

শঙ্কা থাকলেও সম্ভাবনার  স্বপ্ন বুনছে দ্বীপবাসী

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নৌপথের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পেরিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন এক স্বপ্ন বুনছে সন্দ্বীপবাসী। যে অঞ্চলে কোমরসমান পানি বা হাঁটু পরিমাণ কাদা মাড়িয়ে নীড়ে ফেরার কোনো পথ ছিল না শত শত বছর, ফেরি সার্ভিস চালুর মধ্য দিয়ে সেই অঞ্চলে গাড়ি চালানোর স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে মানুষের। শুধু শখের বসেই নয়, পরিবহনের এই সুুযোগ সৃষ্টি হওয়ার কারণে শতভাগ বদলে যাবে সন্দীপবাসীর জীবনমান।

বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া নৌপথে ফেরি চালাতে শঙ্কা রয়েছে বলেও জানায় বিআইডব্লিউটিএ। বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র উত্তাল থাকে বিধায় এই পথে বর্ষা মৌসুমে ফেরি চালানো সম্ভব নয়। সে হিসেবে এই পথে ফেরি চলার সুযোগ পাবে পাঁচ মাস। দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার কারণে ফেরি সার্ভিসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়র সম্ভাবনা রয়েছে। জোয়ার-ভাটার তারতম্য ৩ থেকে ৪ মিটার হয় এমন কোনো পথে দেশে কোথাও ফেরি না থাকার কথাও জানায় কর্তৃপক্ষ। 

আজ সোমবার থেকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌ-রুটে প্রথম ফেরি সার্ভিস। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায়, প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার প্রধান উপদেষ্টার দুজন বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরী ও অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘আমরা সম্ভাবনাময় একটি স্বপ্নপূরণের প্রহর গুনছি। ফেরি চলাচলের মধ্য দিয়ে সন্দ্বীরে মানুষের যাতায়াতের একদিকে যেমন দুঃখ-দুর্দশা ঘুচবে, অন্যদিকে খুলবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। এই অঞ্চলে স্থল বাণিজ্যসহ নৌবাণিজ্যের অপার সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কৃষি, মৎস্যসহ স্বাস্থ্য খাতে আসবে নতুন গতি। এ ছাড়া পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে সাজানো যাবে দ্বীপের সমুদ্র উপকূল। যোগ করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে প্রায় ৪ লাখ মানুষ বসবাস করে। দৈনন্দিন কাজ, জীবন-জীবিকা, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো জরুরি কাজে এই জনপদের বাসিন্দাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ কিমি উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে জেলা শহর চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। 

এই পথ পাড়ি দিতে শিশু, নারী ও বয়োবৃদ্ধ যাত্রীরা নৌযাত্রায় প্রতিনিয়ত অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে। কখনো একবুক, কখনো বা কোমরপানি, আবার কখনো হাঁটু পরিমাণ কাদা মাড়িয়ে কূলে উঠতে হয়। সূর্য ডোবার পর বন্ধ হয়ে যায় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সব যোগাযোগ। 

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দিনের পর দিন থাকতে হয় বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। এই সবকিছু বিবেচনা করে ২০২২ সালে সন্দ্বীপ ফেরি সার্ভিসের উদ্যোগ নেওয়া হলেও গতিহীন এই প্রকল্পে প্রাণের সঞ্চার করেন সন্দীপের সন্তান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। চট্টগ্রাম- সন্দ্বীপ নৌ-রুটে ফেরি সার্ভিস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এই দ্বীপেরই সন্তান। সে দায় থেকে দ্বীপবাসীর জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি।’ 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের বাঁশবাড়িয়া ঘাট থেকে ফেরি সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া এলাকায় গিয়ে ভিড়বে। এজন্য বাঁশবাড়িয়া ঘাটে বেড়িবাঁধ থেকে সাগরের ফোরশোর এলাকায় বল্ক দিয়ে প্রায় ৮০০ মিটারের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। একইভাবে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫০০ মিটার সড়ক। 

এ ছাড়া গুপ্তছড়া ঘাট এলাকায় আরও ২০০ মিটার সড়ক নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। ফেরি চলাচলে নির্মাণ করা হয়েছে জেটি, গাড়ি পার্কিং ইয়ার্ডসহ অন্যান্য অবকাঠামো। দুপাশে বসানো হয়েছে পন্টুন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কপোতাক্ষ ফেরিতে ছোট গাড়ি ৩৩ থেকে ৪০,  ট্রাক ১২ থেকে ১৫, বাস ১২টা চলতে পারবে। চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ নৌ-রুটে প্রায় ১৭ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা।

এক টন পর্যন্ত পণ্যবাহী যানবাহন ছোট ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি (এক টনের অধিক তিন টন পর্যন্ত) ১ হাজার ৫০০ টাকা,  ট্রাক-ট্যাংক লরি-কাভার্ড ভ্যান (৩ টনের অধিক ৫ টন পর্যন্ত) ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৫ টনের অধিক ৮ টন পর্যন্ত ২ হাজার টাকা, ৮ টনের অধিক ১১ টন পর্যন্ত হলে ২ হাজার ৭০০ টাকা, ১০ চাকাবিশিষ্ট সাধারণ পণ্যবাহী যানবাহনের ক্ষেত্রে (গ্যাস, বিস্ফোরক দ্রব্য বাহিত ও নন স্ট্যান্ডার্ড যানবাহন ব্যতীত) গাড়ির বডির ওজনসহ ৩০ টন পর্যন্ত হলে নির্দেশিত হারে ভাড়া আদায়যোগ্য হবে ৫ হাজার ৭০০ টাকা।

এ ছাড়া যেসব ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংক লরির ধারণক্ষমতা ৩-৮ টন অথচ সাইজে বড় বাস-কোচের সমান ২ হাজার ৭০০ টাকা;  মিনিবাস, কোস্টার (২৫ ফুটের ঊর্ধ্বে নয়) ১ হাজার ৭৫০ টাকা; মাঝারি মাপের বাস-কোচ (৩৫ ফুটের ঊর্ধ্বে নয়) ২ হাজার ৪৫০ টাকা; বড় বাস-কোচ (৩৫ ফুটের ঊর্ধ্বে) ২ হাজার ৬৫০ টাকা; মাইক্রো বাস, অ্যাম্বুলেন্স, বড় টেম্পো, হিউম্যান হলারজাতীয় যানবাহন ১ হাজার ৪০০ টাকা; স্টেশন ওয়াগন, ল্যান্ডক্রুজার, স্কাউট-জাতীয় গাড়ি, বড় জিপ, প্রাডো নিশান, পাজেরো, প্যাট্রল-জাতীয় লরি, জিপ-জাতীয় যানবাহন ১ হাজার ৩০০ টাকা; কার, টেম্পো ট্রেইলার পৃথকভাবে অথবা ট্রাকের সঙ্গে এ ধরনের যানবাহন ৭৫০ টাকা;  মোটরসাইকেল ১ হাজার ৫০০ টাকা; সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান, রিকশা ৪০০ টাকা; বাইসাইকেল ৭৫ টাকা;  ডিলাক্স, উচ্চশ্রেণির যাত্রী টিকিট ১০০ টাকা এবং সুলভ শ্রেণির যাত্রী টিকিট ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!