মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৫

শেষ মুহূর্তে বায়তুল মোকাররমে জমজমাট

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৫, ১২:৫৯ এএম

শেষ মুহূর্তে বায়তুল  মোকাররমে জমজমাট

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

খয়েরি রঙের পাঞ্জাবিটা খুব পছন্দ হয়েছে সোহাগ হোসেনের। বিশেষ করে বুকে ও হাতায় সুতার কাজ। তবে, দোকানি দাম কমাতে নারাজ, ৬০০ টাকা বেঁধে দিয়ে সেখানেই অনড়। শেষ পর্যন্ত ‘আমার কথা থাক, আপনার কথাও থাক বলে- সমঝোতায় এলেন ক্রেতা। এগিয়ে দিলেন সাড়ে পাঁচশ টাকা। 

বিক্রেতা এবার ব্যাগে ভরে দিলেন পাঞ্জাবিটা। গতকাল বুধবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাতের ঈদের কেনাকাটার দৃশ্য এটি। শেষ মুহূর্তের ঈদ কেনাকাটায় জমজমাট বায়তুল মোকাররমের ফুটপাতে পা ফেলার জায়গা নেই।

 ফুটপাতের পণ্যের ক্রেতা একেবারে নিচের আয়স্তর থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত। শেষ মুহূর্তে শোনা গেল দাম নিয়ে অনুযোগ। ক্রেতারা বলছেন শেষদিকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ফুটপাতের দোকানগুলো কোনোভাবেই দাম ছাড়ছে না। তবে, সময় যেহেতু নেয় কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামেই। 

সরেজমিতে বায়তুল মোকাররম এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন সবাই। ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারাও। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

রাজধানীতে বিপণিবিতান ছাড়াও ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে ফুটপাতের দোকানগুলোয়। বায়তুল মোকাররমের ফুটপাতে এখনই পা ফেলার জায়গা নেই। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্রেতাদের হাঁকডাক আর ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম এখানকার ফুটপাত। বড় বিপণিবিতান থেকে দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় এখানে কেনাকাটা করতে আসছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।

বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেট, জিরো পয়েন্ট, জিপিও’র দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তর পাশের সব ফুটপাতেই মানুষ আর মানুষ পা ফেলার জাইগা নেয়। মাছের মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চলছে ঈদ কেনাকাটা। শেষ মুহূর্তে কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি জমজমাট বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট। 

সেখানে এমনিতেই সারা বছর পাঞ্জাবি বিক্রি হয়। তবে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আরও নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। দোকানের পরিধি দক্ষিণ গেটের মূল সড়ক থেকে গিয়ে ঠেকেছে মসজিদের ভেতরে প্রবেশের সিঁড়িতে। অন্য সময় সিঁড়িতে দোকান বসায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে তা কিছুটা শিথিল। তাই বিনা বাধায় চলছে বেচাকেনা।

দক্ষিণ গেটের ব্যবসায়ীরা বলেন, বায়তুল মোকাররমের আশপাশের ফুটপাতগুলোয় ঈদকে কেন্দ্র করে ২০০ বেশি নতুন দোকান বসেছে। এর বাইরে সেখানে নিয়মিত দোকান রয়েছে আরও তিন শতাধিক। এসব দোকানে নারী-পুরুষের পোশাক, জুতা, পাঞ্জাবি, টুপি, শিশুদের পোশাক, খেলনা, প্রসাধনী, ব্যাগ সবকিছুই পাওয়া যাচ্ছে। দক্ষিণ গেটে আপিফ সানি নামে এক ক্রেতা বলেন, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে যে পাঞ্জাবির রেগুলার মূল্য ৩০০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। কোনোভাবেই দাম ছাড়ছে না তারা। 

এদিকে, পশ্চিম পাশের দেয়ালসংলগ্ন দোকানগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে অপেক্ষাকৃত ভিন্ন ধরনের নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি। যার দামও কিছুটা বেশি- এম্ব্রয়ডারি ডিজাইনের পাঞ্জাবির দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। সাধারণ ডিজাইনের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। 

শিশুদের পাঞ্জাবি-পাজামার সেট ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। জিপিও’র পশ্চিম-দক্ষিণের পুরোটাতেই পাঞ্জাবির সমাহার। সেখানে বিভিন্ন দামের অফার দিয়ে মাইকিং করছেন বিক্রেতারা। বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটের দেয়াল ঘেঁষে ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট নিয়ে বসেছে কমপক্ষে ৫০টির মতো দোকান, সঙ্গে রয়েছে ২০টির বেশি ভ্যান। 

বিক্রেতারা জানান, তারা সারা বছরই এখানে ব্যবসা করেন। সবসময় বিক্রি হয় গড়পড়তা। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে শেষদিকে ভালো ব্যবসা হচ্ছে। এবারের রমজানের শুরুতে টুকটাক বিক্রি হলেও ১৫ রমজানের পর থেকে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়েছে এখন তো শেষ সপ্তাহ চলছে কথা বলার সময় পাচ্ছি না। 

ভ্যানে করে পোশাক বিক্রি করছেন, ব্যবসায়ী আহসান কবির নানু। তিনি জানান, এখানে মূলত ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করি। ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে জিন্সের প্যান্ট ও ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে ফুলশার্ট। এবং পাঞ্জাবি বিক্রি করছি ৪০০ টাকা করে। জিরো পয়েন্টের জুয়েলারি দোকানের সামনের ফুটপাতে বসেছে শিশুদের পোশাকের দোকান। মেয়ে শিশুদের নান্দনিক কারুকার্যের ফ্রক ও প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। জিরো থেকে দুই বছরের শিশুদের শার্ট-প্যান্ট বা গেঞ্জির সেটও কেনা যাচ্ছে সাশ্রয়ী দামে।

একই সারিতে বসেছে বিভিন্ন ডিজাইনের জুতার দোকান। সেখানে নারী-পুরুষ ও শিশুর জুতা বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। বাহারি সাইজ ও ডিজাইনের জুতা পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন ব্যাগ ও স্যুটকেস কেনাবেচা হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে মানিব্যাগ, থান কাপড়, বোরকা, শিশুদের ঘড়ি-চশমা।

এ মার্কেট থেকে স্ত্রী-কন্যার জন্য জুতা কিনতে আসা আলী তানিম বলেন, ‘অন্য ফুটপাতের চেয়ে বায়তুল মোকাররম এলাকায় কেনাকাটা করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এখানে প্রয়োজনীয় সবকিছুই পাওয়া যায়। তা ছাড়া ফুটপাত হলেও এখানে কিছুটা উন্নত পণ্য পাওয়া যায়, দামে কম মানে বেশ ভালো। মেয়েকে সঙ্গে এনেছি, আর মায়ের জুতার মাপ নিয়ে এসেছি, তাদের জন্য জুতা কিনব আগে তারপর আমার জন্য।’

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!