বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম

গুলশান লেকে মরা মাছে সয়লাব

মোস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম

গুলশান লেকে মরা মাছে সয়লাব

রাজধানী গুলশান লেকে কোথাও কোথাও মারা যাওয়া মাছের স্তুপ জমেছে। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

একটি নয় দুটি নয়। শত শতও নয়। বলা যায় হাজার হাজার মাছ।

আবার এগুলো জীবিতও নয়, মৃত সবই।

চোখ যেদিক যায় সেদিকেই আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভেসে। কোথাও কোথায় আবার জমে স্তুপও।

এটি রাজধানী গুলশান লেকের চিত্র। রোববার (৬ এপ্রিল) সকালের দৃশ্য ছিল এমনই।

এসব মৃত মাছ সরাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন লেকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।

কিছু মাছ সরাতে পারলেও অধিকাংশ মাছই থেকে যাচ্ছে লেকের পানিতেই।

ফলে মাছ পঁচে নষ্ট হচ্ছে পানিতে। তাতে ছড়াচ্ছে পঁচা দুর্গন্ধ। এতে অতিষ্ঠ লেকপাড় বাসী ও দর্শনার্থীরা।

 

স্থানীয় ও লেকে দায়িত্বরত কর্মীরা জানিয়েছেন, লেকের মাছ মারা যাচ্ছে বেশকিছুদিন ধরেই। মূলত অতিরিক্ত দুষণে পানিতে গ্যাস হয়েছে। যে এ কারণে প্রতিদিনই বহু মাছ মরছে।

মারা ছোট থেকে বড় আকৃতির সবধরণের মাছই মরা গেছে।

তবে মৃত মাছ উঠানো বা কিছু ময়লা উঠানোর বাইরে জীবিত মাছ রক্ষায় কোন কার্যক্রম আছে কিনা তা কেউ বলতে পারেননি।

লেকটি গুলশান, নিকেতন, বাড্ডা, শাহজাদপুর এবং বারিধারা কূটনৈতিক অঞ্চলের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত। এটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায় পড়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ডিএনসিসি’র উপপ্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ মফিজুর রহমান ভুঁইয়া রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, লেকটি  আমাদের এলাকায় হলেও এটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দায়িত্বে। বিষয়টি তারাই বলতে পারবে।

 

যোগাযোগ করা হলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উপপরিচালক (বোর্ড, জনসংযোগ ও প্রটোকল) সুজন কুমার বসুনিয়া রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিষয়টি তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলতে পারবেন।

তবে রাজউকের গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাইছারের নাম্বারের বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি তাকে খুদে বার্তা পাঠিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে রাজউক সূত্র জানায়, মাছ রক্ষায় ভাসমান কিছু ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার ছাড়া অন্য কোন কার্যক্রম নেই।

পরিস্থিতি ভয়বহ

রোববার সকালে গুলশান লেকের দুই পাড় ঘুরে দেখা গেছে, পুরো লেক জুড়েই মরা মাছ ভেসে আছে। বাতাসে কোথাও কোথাও মৃত মাছের স্তুপ জমে গেছে।
অনেক মৃত মাছ লেকের পাড়ে পড়ে থাকতেও দেখা গেছে।

এদিন শাহজাদপুর-গুলশান রোডের পাশে পঁচা মাছের বিশাল স্তুপ জমতে দেখা গেছে। মাছ পঁচা গন্ধে তখন সেখান দিয়ে সাধারণ মানুষ নাক চেপে যাতায়াত করছিলেন।

তবে সে সময়ই ওই স্তুপ সরাতে একটি নৌকা নিয়ে আসেন দুজন পরিচ্ছন্ন কর্মী। তারা দীর্ঘ সময় ধরে মরা পঁচা মাছ ও ময়লা উঠানোর কাজ করেন। সকালে কাজ শুরু হলে দুপুর গড়াতে থাকলেও তাদের কাজ করতে দেখা যায়।

এই দুই পরিচ্ছন্ন কর্মী অবশ্য তাদের পরিচয় দেননি। একজন ছবি তুলতেও নিষেধ করেন।

তবে অন্যজন রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, এভাবে মাছ প্রতিদিনই মরছে।

‘মাছ কিছুদিন ধরেই মরতাছে। বাতাসে এখানে (মৃত মাছ) জমছে।  দুর্গন্ধে মানুষের সমস্যা হচ্ছে। তাই আমরা দ্রুত এগুলো সরাতে আসছি’, বলেন তিনি।

লেকপাড়বাসীর দুর্ভোগ

গুলশান ১ এলাকায় বসবাস করেন হেকমত উল্লাহ। তিনি প্রায় প্রতিদিনই লেকের পাড়ের রাস্তায় হাটতে আসেন। রোববার সকালেও তিনি ঘুরতে আসেন। তার মুখে ছিল ডাবল মাস্ক।

রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা হলে তিনি মাছ নিয়েই প্রথম কথা তুলেন।

‘আমার ডায়াবেটিস আছে। প্রতিদিন হাঁটার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ ঠিকঠাক হাটতে পারছি না। আসলে লেকে আসলেই মাছ পঁচা গন্ধ এসে নাকে লাগে। এতো উৎকট গন্ধ যে একবার নাকে ঢুকলে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। এ কারণে কিছুদিন ধরে নিয়মিত হাটা অনিয়মিত হয়ে গিয়েছে।’

স্থানীয় এই বাসিন্ধার ভাষ্য, ভোরে গন্ধ বেশি হয়। তখন ডাবল মাস্কেও কাজে আসে না। পচাঁ গন্ধ নাকে ঢুকেই।

‘এই গন্ধ বাসায় গিয়েও অনুভব করি। খেতে পারি না। কিছুদিন ধরে মাছও খেতে পাচ্ছি না। মাছ দেখলেই গন্ধ পাই’, যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘হাটা জরুরী তাই বিভিন্ন সময় আসি। এতে বুঝতে পারি যে বেলা বাড়লে ও সূর্য উঠলে গন্ধটা কিছু কম হয়। তাই এখন একটু দেড়িতে আসি। তবুও গন্ধ পাই। গন্ধ এখন অনেকটা সয়ে গেছে।’

 

হেকমত উল্লাহ’র মতো আরও অনেকেই লেকের মাছ পঁচা গন্ধের করুণ অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন।

গুলশান এলাকার বাসিন্দা রেহমান চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, তিনি মাছ খেতেই পছন্দ করেন না।

‘আমি ছোট সময় থেকেই মাছ খেতে পারি না। মাছ অনেক গন্ধ লাগে। কিন্তু এই লেকে হাটতে এসে পঁচা গন্ধে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।’

একই এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ আলমের মাছ অনেক পছন্দের। কিন্তু তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘লেকের মাছ পঁচা গন্ধে এখন মাছ খেতে পারি না।’

শাহজাদপর ঝিলপাড়ের বাসিন্দা জহির আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘লেকের পানির গন্ধ তো আছেই। তার সঙ্গে এখন মাছ পঁচা গন্ধ বাসায় ঢুকছে। আমাদের বসবাস করা দিনদিন বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

গুলশান মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী স্নেহা ও ফারজানা। এই দুই বান্ধবী রোববার দুপুরের আগে লেকে ঘুরতে আসে।

তারাও জানাল, পচাঁ গন্ধে লেক পাড়ে টিকা যাচ্ছে না।

আরবি/ফিজ

Link copied!