কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন ১০ রেঞ্জ এবং অন্তত ৪০টি বনবিটে রোহিঙ্গাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্বনায়ন প্রকল্পের (হেল্প প্রকল্প) নার্সারি উত্তোলন নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে টেন্ডার আহ্বান করেছে। টেন্ডার নোটিশ প্রচার করলেও ঠিকাদার নিযুক্ত হয়নি এখনো।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গ্রিন বেল্ট ও হেল্প প্রজেক্টের আওতায় প্রথম ধাপে ২০৮০ হেক্টর নতুন করে বনায়ন ও নার্সারি উত্তোলনের জন্য অর্থ ছাড়ের আগেই ডিএফওর চাপের মুখে নিজস্ব অর্থায়নে স্ব-স্ব রেঞ্জ ও বনবিট কর্মকর্তারা নার্সারি উত্তোলন করেছেন। বরাদ্দ না পেয়েও নার্সারি উত্তোলন করায় অর্থ ছাড় এবং প্রজেক্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েকজন রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগাম অর্থ ব্যয় করে নার্সারি উত্তোলনের অর্থ ছাড় আদৌ পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত।
সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের অধীনে ভাসান চরে সবুজ বেষ্টনী স্থাপন এবং কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্বনায়ন প্রকল্পের আওতায় গত ৯ মার্চ দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে।
ওই দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে ভাসানচরে নার্সারি চাষের জন্য পলি-প্রোপিলিন ব্যাগ, দোআঁশ মাটি, পচা গোবর, নারকেল বীজ, রাসায়নিক সারসহ বৃক্ষরোপণের জন্য উপকরণ সরবরাহের দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র আহ্বান করলেও এখনো পর্যন্ত টেন্ডার ড্রপ হয়নি।
উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা (সহকারী বন সংরক্ষণ) মো. শাহীনুর ইসলাম জানান, তার রেঞ্জে ৩০০ হেক্টর বনায়নের জন্য নার্সারি উত্তোলন করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে ও জানুয়ারির শুরুর দিকে নার্সারির কাজ শুরু করা হয়।
এখন পর্যন্ত বরাদ্দের কোনো অর্থ ছাড় পাননি, এমনকি ঠিকাদারের কাছ থেকে আইটেম টু আইটেম কোনো মালামাল ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বুঝে পাননি।
বরাদ্দ ছাড়া কীভাবে নার্সারি উত্তোলন করা সম্ভব হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য বনায়নের অর্থ খরচ করা হচ্ছে, কাজ শেষে বিল জমা দিয়ে বরাদ্দ পেলে তা সমন্বয় করা হবে। তিনি জানান, গত বছরের কিছু মালামাল অবশিষ্ট ছিল, সেগুলোও বর্তমানে নার্সারিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ জানিয়েছেন, তার রেঞ্জে ৩০০ হেক্টর বনায়নের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির চারা উত্তোলন করা হয়। গত ৩ এপ্রিল মধ্য হ্নীলা বিটের নার্সারি উত্তোলনের প্রায় আড়াই লাখ চারাগাছ কেটে নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা হেল্প প্রজেক্টের নার্সারির চারা কেটে নষ্ট করেছে। কারা এবং কী কারণে চারাগাছ কেটে ফেলেছে, তা জানাতে পারেনি। তবে এ ব্যাপারে থানায় জিডি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নার্সারির জন্য কোনো অর্থছাড় না পেয়েও নিজস্ব উদ্যোগে করা হয়েছে। এখন চারাগাছ কেটে ফেলায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অন্যান্য নার্সারি থেকে চারাগাছ সংগ্রহ করে তা আংশিক পূরণের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
টেকনাফ হোয়াইক্যং রেঞ্জের শামলাপুর বনবিট কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা একই কথা জানিয়েছেন। ১০০ হেক্টর বাগানের জন্য হেল্প প্রজেক্টের নার্সারি উত্তোলন অনেক কষ্টের মাধ্যমে করা হয়েছে। পলিব্যাগ, সার গোবর, মাটিসহ অন্য মালামাল নিজস্ব অর্থায়নে করা হয়েছে। পরে বিল দাখিল করে অর্থ ছাড় পাবের।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হেল্প প্রজেক্টের কোনো অর্থ ছাড় দেওয়া হয়নি।
তবে টাকা ছাড় দেওয়া না হলেও কীভাবে নার্সারি উত্তোলন করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দের এক টাকাও পাননি রেঞ্জ ও বনবিট কর্মকর্তারা।
কোনো টাকা ছাড় দেয়নি। সংশ্লিষ্ট টিকারের কাছ থেকেও নার্সারি ও বনায়নের জন্য আইটেম টু আইটেম সামগ্রী বুঝে নেননি। তাহলে ৯টি রেঞ্জের ৪০টি বনবিটে নার্সারি উত্তোলনের জন্য ব্যয় করা অর্থের জোগান এলো কোথা থেকে?
ব্যক্তিগত টাকা খরচ করে নার্সারি করা হলে বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দের টাকাগুলো খরচ করা হবে কোন খাতে? ব্যক্তিগত টাকা খরচ করে নার্সারি সৃজন বন বিভাগের সরকারি কোনো নীতিমালায় পড়ে কি না?
আর রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তা নিজ খরচে নার্সারি উত্তোলনের হেতু কী? ব্যয়িত টাকার উৎস নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। নার্সারি উত্তোলন করতে স্ব-স্ব রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তাকে নিজস্ব অর্থায়নে করার নির্দেশনা দেওয়া হলো কেন? এসব প্রশ্ন এখন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :