রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ০১:০৩ এএম

জরুরি পণ্যে কাটছাঁট করে চিকিৎসা

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ০১:০৩ এএম

জরুরি পণ্যে কাটছাঁট করে চিকিৎসা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশে ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত কয়েক কোটি মানুষ। একজন রোগীর গড় চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৪ ভাগই যায় ওষুধ কেনার পেছনে। ফলে, ওষুধ কিনতে গিয়েই প্রতিবছর দরিদ্র হন অনেক রোগী। 

এসব রোগীর কথা চিন্তা করে এবার তিন ভাগের এক ভাগ দামে ওষুধ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব ফার্মেসিতে মিলবে ২৫০ ধরনের ওষুধ। তা দিয়েই ৮৫ ভাগ রোগীর চিকিৎসা সম্ভব। 

কিন্তু গত ৩১ বছরেও নির্ধারিত ১১৭টি ওষুধের দাম তালিকা পরিবর্তন করেনি কোনো সরকার। এসব ওষুধের বেশির ভাগেরই নেই ব্যবহার, আর যেগুলো আছে সেগুলো পাওয়া যায় না কোনো ফার্মেসিতে। অন্যান্য ওষুধেরও মূল্য লাগামছাড়া। 

কয়েক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে জীবন বাঁচাতে বাড়তি দাম দিয়েই জরুরি ওষুধ কিনতে হচ্ছে ও রোগী ও তাদের স্বজনদের। এর জন্য কাউকে কাউকে জরুরি পণ্যে কাটছাঁটও করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি অন্তবর্তী সরকারের নেওয়া ‘সরকারি ফার্মেসি’ কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। 

কিটোরোলাক ট্রোমেটামল গ্রুপের ব্যথার ওষুধ টোরেক্স। এর ১০ এমজির ৫০টি ট্যাবলেটের এক প্যাকেটে গায়ে বিক্রয়মূল্য গত আগস্টেও লেখা ৬০০ টাকা। এতে করে প্রতি পিস ট্যাবলেটের দাম পড়ে ১২ টাকা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সেপ্টেম্বর মাসে প্রস্তুতকৃত অপর একটি প্যাকেটের গায়ে মূল্য ধরা হয় ১০০০ টাকা।

 যেখানে প্রতিটি ওষুধের মূল্য ধরা হয়েছে ২০ টাকা। মাত্র ১ মাসের ব্যবধানে ওষুধটির দাম বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। 

গত বছর ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের সময় দাম বেড়েছিল নাপা, ফেক্সো-ফেনাডিন, ডক্সিভা, সেকলো, অমিডন, মন্টিয়ার-মোনাস, এমকাস, রিভার্সএয়ারের মতো বহুল ব্যবহৃত ওষুধগুলোর।

 চলতি বছরের শুরু থেকে আবারও ওষুধের বাজারে তৈরি হয় অস্থিরতা। ওই সময় ২০ টাকার নাপা সিরাপ বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়। ৪৫ টাকার সেকলোর পাতা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের দাম।

 সেফথ্রি বা সেফিক্সিম জাতীয় ওষুধের পিস প্রতি বাড়ে ১০ টাকা করে। বছর শেষে আবারও বাড়ানো হয় বিভিন্ন ধরনের ওষুধের দাম।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক মাস আগেও ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কমেট ৫০০ এমজির দাম ছিল ৫ টাকা পিস,  যা বর্তমানে দোকানভেদে ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

একই রকমভাবে জিমেক্স ৩০ এমএল-এর দাম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, একই ওষুধের ৫০ এমএল ১৮৫ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। এনাডল এসআর নামের ক্যাপসুলটি ১০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৭ টাকা। 

ফাইলোপেন ফোর্ট সিরাপ ৯৮ টাকা থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কার্ডি কিউ.৫০ নামের ক্যাপসুলটি ১৪ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এলাট্রল সিরাপ ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুভা ১০এমজি বিক্রি হচ্ছে ২২ টাকায়। 

ডার্মাসল এন অয়েন্টমেন্ট ৮০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এপিট্রা ০.৫ এমজি ৬ টাকা পিস থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকায়।

সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি এলাকার ওষুধের ফার্মেসিগুলো ঘুরে দেখা যায়, ইকোস্প্রিন ছিল ৬ টাকা। সেই জায়গায় বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। ৬০ পয়সা ট্যাবলেট প্রতি দাম থাকলেও তা বাড়িয়ে এখন ৮০ পয়সা করা হয়েছে। 

সেই হিসাবে ৮ টাকা পাতা হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রেতারা তা রোগীদের কাছে বিক্রি করছেন ১৫ টাকায়। পাতা প্রতি বেশি রাখা হচ্ছে ৭ টাকা করে। একইভাবে জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত নাপা ট্যাবলেটের ১ পাতার আগের দাম পাইকারি পর্যায়ে ছিলো ৭ টাকা। 

ভোক্তাদের কাছে তা বিক্রি হতো ৮ থেকে ১০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা। লোসারটান পটাশিয়াম ৫০ মিলিগ্রামের প্রতি পিসের দাম আট থেকে ১০ টাকা করা হয়েছে। 

প্যারাসিটামল ৫শ মিলিগ্রামের ১০ পিস ওষুধের দাম আট টাকা থেকে ১২ টাকা হয়েছে। প্যারাসিটামল ৬৬৫ মিলিগ্রাম ১০ পিস ওষুধের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। 

এছাড়া, বর্তমান নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় জ্বর-সর্দিতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ফেক্সোফেনাডিন প্রতি পিস ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা হয়েছে। অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রতি পিস ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা হয়েছে। ভিটামিন বি১ বি৬ বি১২-এর প্রতি পিসের দাম ৭ টাকা থেকে দুই ধাপে দাম বাড়িয়ে ১০ টাকা হয়েছে। 

ইসমিপ্রাজল-এর প্রতি পিসের দাম ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা হয়েছে। লোসারটান পটাশিয়াম ৫০ মিলিগ্রামের প্রতি পিসের দাম ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা করা হয়েছে। 

প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রামের ১০ পিস ওষুধের দাম ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা হয়েছে। প্যারাসিটামল ৬৬৫ মিলিগ্রাম ১০ পিস ওষুধের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। প্যারাসিটামল সিরাপের দাম হয়েছে ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। 

ডলারের দাম বাড়ার কারণেই দামের ঊর্ধ্বগতি দাবি করে ওষুধশিল্প মালিকদের সংগঠনের মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ওষুধের কাঁচামাল আমদানির জন্য আগে এলসি খুলতে লাগত ১ ডলারের বিপরীতে ৮০ টাকা।

 এখন যখন শিপমেন্ট এসে পৌঁছাচ্ছে, তখন ডলারের দাম উঠেছে ১১৫ থেকে ১১৯ টাকায়। প্রতি ডলারে ৩০ টাকার মতো বেশি দিতে হচ্ছে। প্রাইস পলিসি মোতাবেক প্রত্যেক বছরের বাজারের আর্থিক অবস্থা যাচাই করে এমআরপি পণ্যের দাম নির্ধারণ করার কথা। 

কিন্তু ২০ বছরেও তা করা হয় নি। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দামও চড়া। এখন কিছু ওষুধের দাম না বাড়ালে প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা মুশকিল। আমরাও আসলে অসহায়ই।

ওষুধের দাম কিছুটা বাড়ার কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, বর্তমানে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। আর ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয়। সেই অনুযায়ী, কিছু দামে সমন্বয় করা হয়েছে। 

তবে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম এক পয়সাও বাড়ানো হয়নি। ১১৭টি ওষুধের দাম বিগত সরকার আগে যা ঠিক করে রেখেছিল, সেগুলো আমরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছি। তবে যেসব পণ্য আমরা বিদেশি থেকে আনা হয়, সেগুলোর দাম  বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। 

কিন্তু ক্রয়-ক্ষমতা দূরে থাক সংসারের খরচ কাটছাট করে ওষুধের বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে দাবি করে রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা নুসরাত আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমি ডায়াবেটিসে ভুগছি। সঙ্গে আরও নানা রোগ ভর করেছে। নিয়মিত ওষুধ খেতেই হয়। 

কিন্তু সম্প্রতি ওষুধের বাড়তি দাম মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজার খরচ কমিয়ে, সকালে একটা ডিম না খেয়ে বা সন্ধ্যার নাস্তায় শুধু চা-বিস্কুট খেয়ে এই বাড়তি দাম মেটাচ্ছি।

একইভাবে দুঃখের কথা জানালেন, রাজধানীর উত্তরার আভা হেলথকেয়ার ফার্মাতে শিশু সন্তান সুমনের জন্য নাপা সিরাপ কিনতে আসা টঙ্গির শিলমুইন এলাকার বাসিন্দা শোভন মিয়া। ওষুধের বাড়তি দামে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, চাল, ডাল, তেল, সবজি সব কিছুর দাম উর্দ্ধমুখী। 

যেকোন কিছুর দাম বাড়লে সেটা খাওয়া কমিয়ে দেই। তেলের দাম বাড়ার পর তেল কেনা কমিয়েছি। কিন্তু ওষুধের প্রয়োজনীয়তা কমাবো কিভাবে? শিশুর যদি জ্বর হয় নাপা সিরাপ খাওয়াতেই হয়। এদিকে বাসায় বয়স্ক মা উচ্চ রক্তচাপের রোগী। 

নিয়মিত তাকে ওষুধ খেতে হয়। আগে এক পাতা ওষুধ ৮০ টাকায় কিনতাম। এখন সেটা ১শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আয় একই থাকছে খরচ বেড়েই চলেছে। বাঁচতে গেলে ওষুধ তো কিনতেই হবে। এ খরচ আমি কীভাবে কমাব?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দেশের আনাচ-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো ফার্মেসি রয়েছে। এসব ফার্মেসিতে ইচ্ছামতো ওষুধের দাম আদায় করছেন ব্যবসায়ীরা। জনগণের অজ্ঞতার সুযোগে তাদের দিনের পর দিন তাদের ঠকানো হচ্ছে। 

কিন্তু তদারিক করার কেউ নেই। এখন সরকার দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ফার্মেসি করার উদ্যোগ নিচ্ছে। বলা হচ্ছে তিন ভাগের এক ভাগ দামে সেখানে জরুরি ওষুধ পাওয়া যাবে। এই দামের তদারকি কে করবে? জনবল কি সরকারের আছে? নইলে এর সুযোগ এখনকার মতো কতিপয় ব্যবসায়ীরাই নেবে। জনগণের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। 

তবে এই ফার্মেসি কার্যকর করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ল্যাব সার্ভিস আছে, অন্যান্য প্রাইমারি হেলথকেয়ার সার্ভি আছে কিন্তু কোথাও কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল সার্ভিস নেই। এটা একটা নতুন বন্দোবস্ত। এর বাস্তবায়নে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!