ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
রিমান্ডে সালমান

শেখ রেহানা-জয়কে দেড় লাখ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে

এনামুল হক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪, ০৩:৪৩ এএম

শেখ রেহানা-জয়কে দেড় লাখ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে

শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সালমান এফ রহমান। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সাত সমুদ্র্র পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন আলোচিত সালমান-আনিসুল জুটি। মিয়ানমার-ভারত পাড়ি দিতে চেয়েও সুবিধা করতে পারেনি। উপায় না পেয়ে বঙ্গোপসাগরে সাতদিন ভেসে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারিবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে ১৩ আগস্ট নৌপথে পালানোর সময় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে এ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকার চারপাশের ভয়ংকর অবস্থা বুঝতে পারেন সালমান এফ রহমান। বিমানবন্দরসহ সব জায়গা থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে সরাসরি চলে যান উত্তরায় নিজের মালিকানাধীন একটি জুট মিলে।

সেখানে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করতে মুখভর্তি সফেদ সাদা দাড়ি নিজেই কাটেন। পরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে রাতে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়ে জুট মিল ত্যাগ করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে এসব কথা বলেন তিনি।

সালমানের বরাত দিয়ে গোয়েন্দারা জানান, বেক্সিমকো গ্রুপে কর্মরত নৌবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে নৌপথে দেশ ছাড়ার পরামর্শ দেন। সেই কর্মকর্তাই মোটা অঙ্কের টাকায় তাকে ম্যানেজ করে দেন একটি ইঞ্চিনচালিত ট্রলার।

রাজধানীর ৩০০ ফুট সড়কের কাঞ্চন ব্রিজ এলাকা থেকে ওই ট্রলারে চড়েন সালমান।

সঙ্গে নেন স্যাটেলাইট ফোন, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, প্রয়োজনীয় সামগ্রী। সঙ্গী হিসেবে ডেকে নেন তার ঘনিষ্ঠজন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে। নৌযানটি চলে যায় সোজা ভোলায়। যাওয়ার সময় মাঝ পথ থেকে সঙ্গে নেওয়া হয় যাবতীয় খাদ্য ও জরুরি সামগ্রী।

টানা সাত দিন বঙ্গোপসাগরে ভাসতে থাকেন তারা। সুযোগ খুঁজতে থাকেন মিয়ানমার পাড়ি দেওয়ার। মাঝখানে ভারতে পাড়ি দিতে সুন্দরবনের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকার কাছাকাছি পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তবে পরিস্থিতি সুবিধাজনক মনে না হওয়ায় নৌকার সারেং ফের ফিরে আসেন ভোলা এলাকায়। সিদ্ধান্ত নেন মিয়ানমার পাড়ি দেবেন।

কোস্টগার্ড সদস্যরা শুরুতে সালমানকে চিনতে পারেননি বলে দাবি করেছেন সালমান। বলেছেন, শেভ করার পর তিনি নিজেই নিজেকে চিনতে পারছিলেন না। কোস্টগার্ডের সদস্যরাও তাকে শুরুতে চিনতে পারছিলেন না। তারা প্রথমে আনিসুল হককে চিনে ফেলেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আনিসুলই কোস্টগার্ডের সদস্যদের সালমানকে চিনিয়ে দেন। 
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ আগস্ট সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক পালানোর চেষ্টা করছেন গোয়েন্দা সূত্রে এমন খবর পেয়ে রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় অভিযানে যায় পুলিশের একটি দল। নিরাপদ রুট মনে করে এ দুই নেতা নৌপথে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, তখন সেখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন ১৪ আগস্ট নিউমার্কেট এলাকায় দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলীকে (২৪) হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তাদের দুজনের দশদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ।

প্রথম দফার রিমান্ড শেষে ২৪ আগস্ট নিউমার্কেট এলাকায় অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সবুজ আলী (২৬) এবং লালবাগে খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ নামের একাদশ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় সালমান ও আনিসুলকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত ১৬ ও ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তারা নিহত হন।

এরপর গত ২৯ আগস্ট ঢাকার বাড্ডায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সুমন সিকদার (৩১) নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাদের নতুন করে ৫ দিনের রিমান্ড দেন আদালত।

সালমানের বরাত দিয়ে তদন্ত সূত্র জানায়, এস আলমের মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হওয়া দেড় লাখ কোটি টাকার অর্ধেকই শেখ রেহানা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এসব অনিয়ম হয়। তবে এসব বিষয়ে কেউ ‘টুঁ’ শব্দ করার সাহস করেনি।

আরবি/জেডআর

Link copied!