ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অবশেষে বেবিচক পরিচালক নুরুল ইসলাম বদলি

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম

অবশেষে বেবিচক পরিচালক নুরুল ইসলাম বদলি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অবশেষে পরিচালক (মানবসম্পদ) মোহাম্মদ নূরুল ইসলামকে বদলি করেছে। সদস্য (অপস) এর একক প্রচেষ্টায় তাকে বদলি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। প্রায় আড়াই যুগ পর নূরুল ইসলামকে ব্লাকবল পদ থেকে বের করে এনে বদলি করা হলো। এত বছর তিনি প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে বসেছিলেন। বেবিচক তার জন্য পরিচালক মানবসম্পদ পদ সৃষ্টি করে তাকে ওই পদে পদায়ন করে। এর আগে তাকে এডি প্রশাসন এবং ডিডি প্রশাসনে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত করে বেবিচক। তাকে গত ৮ সেপ্টেম্বর বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বেবিচক।

ওই প্রজ্ঞাপনে পরিচালক প্রশাসন আবু সালে মোহাম্মদ জংগি মুছা, সেই উপপরিচালক সাধন কুমার মোহন্ত যাকে ব্যবসায়ীরা ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ করাসহ নানা অভিযোগে মেম্বার অপসের রুমে লাঞ্ছিত করে তাদের নামও রয়েছে।

এডি আনোয়ার হোসেনকেও বদলি করা হয়েছে। তবে তার বদলি আইওয়াশ মাত্র। কারণ তিনি যেখানে কর্মরত-পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও মনিটরিং বিভাগ, সিএএবি সদর দপ্তর, ঢাকা এখানেই কর্মরত রেখে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে  সহকারী পরিচালক এটিএম, সিএএবি সদর দপ্তর, ঢাকায় বদলি করা হয়।

ডিডি সাধন কুমার মোহন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে বিভিন্ন লাউঞ্জে এবং বিজ্ঞাপন সংস্থার কাছ থেকে বেবিচকের নামে টাকা আদায় করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসায়ীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন। এই কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসায়ীদের থেকে ভাড়া বাবদ লাখ লাখ টাকা আদায় করে বেবিচকের ভাড়া পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ। এই ব্যবসায়ীদের টাকায় বিমান টিকিটে সাধন কুমার মোহন্ত সপরিবারে আমেরিকা ভ্রমণ করেন।

সাধন মোহন্ত আওয়ামী দোসরদের নামে কোটি কোটি টাকার লাউঞ্জ নবায়ন করে দেন। বেবিচক বোর্ড কর্তৃপক্ষ নবায়ন অনুমোদন দিয়েছে বলে তিনি বলে বেড়ান। বদলিই কি তার শাস্তি। তার ব্যাপারে কোনো তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি, তাকে সাসপেন্ড করা হয়নি।

সাধন কুমার মোহন্ত ইতিপূর্বে ৪ বিমানবন্দর- যশোর, সৈয়দপুর, কক্সবাজার এবং চট্টগাম বিমানবন্দরের ম্যানেজার ছিলেন। এসব বিমানবন্দরে দায়িত্বকালীন নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। তার চাই চাই, খাই খাই স্বভাব আছে বলে জানা যায়। এবার তিনি মেম্বার অপসের অধীনে শাহজালাল বিমানবন্দরের সম্পত্তি দেখভাল করতেন। তার ২ ছেলে বিদেশে পড়াশুনা করছে বলে জানা যায়।

এদিকে মোহন্তের উইকেট পড়ে গেলেও তার দোসর মিজান-আলামিন এখনো সম্পত্তি শাখায় বহাল। তারা টেন্ডার দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মে জড়িত বলে জানা যায়। টেন্ডারে কে কাজ পেল, কে পেল না, তা তারা অগ্রিম জানিয়ে দেন, টেন্ডারে ঘষামাজাকরণেও তারা সিদ্ধহস্ত বলে জানা যায়।

শাহজালাল বিমানবন্দর এর আশপাশে কার্গো আমদানি, রপ্তানি ভিলেজে দোকানপাট বসার সুযোগ করে দিয়ে তারা রীতিমতো চাঁদাবাজি করে থাকেন বলে জানা যায়। তাদের নেতৃত্বে ইজারায় বরাদ্দ্কৃত জায়গার পাশে আরও জায়গা দখল করার সুযোগ করে দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন বলে জানা যায়। যেমন বিমানবন্দর গোলচত্বর হোটেল ওয়ান্ডার ইন। ইজারাকৃত জায়গার বাইরে আরও প্রায় ১ বিঘা জায়গা দখল করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মেয়ের জামাই নায়ক মাহফুজ ও অভিনেত্রী শমী কায়সারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ধানসিড়ি-নকসিকাথার নামে শাহজালাল বিমানবন্দরে বরাদ্দকৃত লাউঞ্জ আবার এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নবায়ন করা হয়েছে ডিডি মোহন্তের নেতৃত্বে।

শুধু শাহজালালেই নয়, চট্টগাম শাহ আমানত বিমানবন্দর, কক্সবাজার, সৈয়দপুর, সিলেট, রাজশাহী বিমানবন্দরেও শমী-মাহফুজের প্রতিষ্ঠান নকসিকাথা এবং ধানসিড়ির নামে লাউঞ্জ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন তা নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। সাবেক সচিব মহিবুর রহমান এবং বেবিচকের একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ ব্যাপারে কলকাঠি নাড়েন।

এদিকে সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ, রাষ্ট্রপতির পিএস দিদারুল আলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেবিচকের সদস্য এসএম অর্থ লাবলুর রহমানের বদলি দাবিতে ৯ সেপ্টেম্বর সদর দপ্তরের সামনে বেবিচক কর্মচারীরা দিনভর মানববন্ধন-সমাবেশ করেছে। ওই সমাবেশ থেকে কর্মচারীরা এই আওয়ামী দোসরকে বেবিচক থেকে বদলি করার জন্য জোর দাবি জানান। অন্যদিকে কর্মচারীরা পরিচালক নূরুল ইসলামের বদলি বাতিলের দাবিও জানান।

এর আগে সদস্যের (অর্থ) বদলির দাবিতে বেবিচক কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি প্রদান করেন এবং বেবিচক সদর দপ্তরে ব্যানার টানিয়ে দেন। এনিয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্টও প্রকাশিত হয়। কিন্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার (মেম্বার অর্থ) ব্যাচমেট হওয়ায় সদস্য অর্থকে বেবিচক থেকে বদলি করে মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না বলে জানা যায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যেখানে আওয়ামী দোসরদের ওএসডি করা হচ্ছে সেখানে বেবিচকে কর্মরত আওয়ামী দোসর, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ সরকারের যুগ্ম সচিব পদ থেকে এসএম লাভলুর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হয়েছে। তিনি এখনো বেবিচকে বহাল।

আরবি/জেডআর

Link copied!