ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সিনিয়রদের ডিঙিয়ে জুনিয়রদের পদোন্নতি

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ০৯:২৬ পিএম

সিনিয়রদের ডিঙিয়ে জুনিয়রদের পদোন্নতি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দুদকের মামলার আসামির জন্য ক্লিয়ারেন্স চেয়ে চিঠি
পদোন্নতি আওয়ামী ঘনিষ্ঠকেও

 

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষে (বেবিচক) প্রকৌশল বিভাগে গত দেড় যুগ ধরে এক পদে চাকরি করলেও পদোন্নতি বন্ধ, ডিপিসি হচ্ছে না। বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বছরের পর বছর পদোন্নতি না পেয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন তারা। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়সহ সব সেক্টরে বঞ্চিতদের পদোন্নতি দেওয়া হলেও বেবিচকে এর ব্যতিক্রম। এর আগে সিনিয়র প্রকৌশলীদের ডিঙিয়ে কিছু জুনিয়র প্রকৌশলীকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ চলতি নির্বাহী/তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন ১০-১২ বছর ধরে। এমন তুঘলকি কাণ্ড চলছে বেবিচকে। শুধু তাই নয়, দুদকের মামলায় কারাবরণ করেছেন ইএম বিভাগের এমন এক সংখ্যালঘু প্রকৌশলীকে পদোন্নতি দিতে না পেরে পদোন্নতি বোর্ড ডিপিসি বন্ধ করে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, তাকে আগে পদোন্নতি দেওয়া হবে, এরপর অন্যদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। দুদকের মামলা শেষ হয়ে চূড়ান্ত রায় হতে হতে আরও ১২ বছর লাগতে পারে। তাহলে কি অন্য প্রকৌশলীরা এই ১২ বছর পদোন্নতি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে যাবেনÑ প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে প্রকৌশল বিভাগ থেকে অপসারিত এফএসআর বিভাগে কর্মরত এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে (সিভিল) ডিপিসি করে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি প্রদানের জন্য তাকেসহ আরও ৩ জনের জন্য ‘দুদক ক্লিয়ারেন্স’ চেয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান গত ২৭ আগস্ট দুদকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠির একটি কপি রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে। চিঠির বিষয়বস্ত হচ্ছে: ‘দুর্নীতি সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন সরবরাহকরণ।’ ক্লিয়ারেন্স চাওয়া ওই চিঠিতে ইএম বিভাগের প্রকল্প থেকে আসা দুই প্রকৌশলীর নামও রয়েছে। আর দুদকের মামলার আসামির জন্যও দুদকের ক্লিয়ারেন্স চাওয়া হয়েছে।

১১ বছর একই পদে : ১১ বছর একই পদে চাকরি করছেন প্রকৌশলী জহির। তাকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। অথচ তার জুনিয়র আবু সায়েমকে এসডিই করা হয়েছে, দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চলতি দায়িত্বের নির্বাহী প্রকৌশলীর। সিডি-১ বৈষম্যের শিকার সিভিল ডিভিশনের প্রকৌশলী আল মামুন, নিজাম। আর ইএম ডিভিশনের হাসান, মিজান, সিরাজুল ইসলাম, ফারুক হোসেন। এদের জুনিয়র জাকিয়া সুলতানা, অহিদুজ্জামানকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আবার সিডি/ইএম-এর ৬ জনকে এসডিই করা হয়েছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলীর। সিডির তারেককে সহকারী প্রকৌশলী এবং ইসমাইলকে এসডিই করা হয়েছে। ইসমাইলকে এবার চলতি দায়িত্বের নির্বাহী প্রকৌশলী করা হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

ফোরাম করে এপিপি আটকে নিজেরা চালাচ্ছেন: সিডি-১-এ ফোরাম করে নাকি ঠিকাদারি কাজের প্রাক্কলন-এপিপি আটকে রেখে নিজেরা চালাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। সূত্রমতে, আগে কাজের প্রশাসনিক অনুমোদন পরে এপিপি। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী এর বাস্তবতা জানাননি।

মেম্বার এফএসআর চলে গেছেন। নতুন মেম্বার এফএসআর হিসেবে গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুকিতউল আলম বেবিচকে যোগদান করেছেন। গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুকিতউল আলম ইতিপূর্বে এফএসআর পরিচালক হিসেবে বেবিচকে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বদলির পরও মেম্বার অপস এখনো বহাল। এদিকে নতুন মেম্বার অপস এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খানও বেবিচকে যোগদান করেননি। এ দিকে বেবিচক থেকে বদলি করা হচ্ছে না সরকারের দুই যুগ্ম/অতি. সচিব মেম্বার এডমিন ও মেম্বার অর্থকে। এদের বিরুদ্ধে মানব বন্ধন করা হলেও এরা এখনও বেবিচকে বহাল। বেবিচকের বাতাসে ভেসে বেড়ায় মেম্বার এডমিন সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলককে পালাতে সহায়তা করতে গিয়ে সফল হতে পারেননি। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বেবিচকের সহায়তায় পলককে ধরে ফেলে। শোনা যায়, পলকের বাড়ি আর মেম্বার এডমিনের বাড়ি বৃহত্তর রাজশাহীতে।

ওদিকে মেম্বার অর্থ আওয়ামী দোসর হলেও তাকে এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হয়েছে। জানা যায়, তিনি রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব দিদারুল আলমের ঘনিষ্ঠ।

বেবিচক ঠিকাদাররা জানান, শতকরা ১ ভাগ ঘুষ ছাড়া ঠিকাদারি কাজের ফাইলে স্বাক্ষর করেন না মেম্বার অর্থ। আর এই ঘুষের টাকা আদায় করে থাকেন একযুগ ধরে মেম্বার অর্থের পিএ হাফিজ। 

>এডমিনে ঘুষের ছড়াছড়ি : বেবিচকের এডমিন বিভাগে ঘুষের ছড়াছড়ি, ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে নাÑ এমন কথাই প্রচলিত আছে। ১০-১২ বছর ধরে এডমিনে বসে এ ঘুষের টাকা আদায়ে ভূমিকা রাখছেন গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এডি তিরান হোসেন, ডিডি আবিদুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম, কেরানি রুকনুজ্জামান, মোমেন, জাহিদ। এদেরকে রহস্যজনক কারণে এডমিন থেকে বদলি করা হয় না।

>বেনামি চিঠির গডফাদার : পরিবহনের জ¦ালানি তেল চুরি, স্টোর থেকে পণ্য এধার-ওধার, বেনামি চিঠির গডফাদার, বৈষম্যের শিকারদের আওয়ামী দোসর বানানোর কারিগর এসকে (শাজাহান কবীর) ধরা খেয়ে শাস্তিস্বরূপ সিলেট বিমানবন্দরে বদলি হলেও এখনো বহাল। ঢাকায় বসে ছড়ি ঘুরাচ্ছেন, দ্বিতীয় বেনামি চিঠি ছাড়ার পাঁয়তারা করছেন। তাকে তিনবার বদলির পরও তাকে আরও বড় রকমের শাস্তির চিন্তাভাবনা করছেন পরিচালক এডমিন। তথ্য ফাঁসের অভিযোগে তাকে সাসপেন্ড করা হলো না কেন? ইতিপূর্বে তথ্য ফাঁসের অভিযোগে একজন প্রকৌশলীকে সাসপেন্ড করা হলেও এসকে এর ব্যতিক্রম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই এসকে (শাজাহান কবীর) গত ১৫ বছর যাবত বেবিচকে যারা বৈষম্যের শিকার তাদেরকে আওয়ামী দোসর বানিয়ে বেনামি চিঠি তৈরি করে বিভিন্ন দপ্তরে সরকারি ডাকযোগে পাঠাচ্ছেন। এ জন্য খিলক্ষেত পোস্ট অফিসের পিয়ন আব্দুল কাদেরকে টাকা-পয়সা দিয়ে বেনামি চিঠি বিতরণের জন্য দায়িত্ব দেয় এই এসকে। কিন্ত বিধি বাম, ওই পোস্ট অফিস পিয়ন কাদির বেবিচকের সদর দপ্তরে চিঠি বিতরণ করতে এসে ধরা পড়ে এসকের (শাজাহান কবীর) নাম বলে দেয়। পরে মুচলেকা দিয়ে ওই পিয়ন ছাড়া পায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শাজাহান কবীর সিএটিসিতে কর্মরত থাকার পর সিএটিসির পরিচালক প্রশান্ত কুমারের দুর্নীতির কল্পকাহিনি বানিয়ে দুদকে বেনামি চিঠি দিয়ে হয়রানি করান, গণমাধ্যমে রিপোর্ট করান, পরে তদন্তে ধরা পড়লে তাকে সিলেট বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি এখনো সিলেটে যোগদান করেননি।

সরকারি সার্কুলারে বেনামি চিঠি আমলে নেওয়ার নির্দেশনা না থাকলেও বেবিচক অতি উৎসাহী হয়ে তা আমলে নিয়ে কাউকে কাউকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। সিএটিসির পরিচালকের বেনামি চিঠির কারিগর এসকের নাম ফাঁস হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আইওয়াশের জন্য তাকে সিলেটে বদলি করা হয়েছে মাত্র। বেবিচকে এ ধরনের তুঘলকি কাণ্ডে সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। যেকোনো সময় তা বিক্ষোভে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

আরবি/জেডআর

Link copied!