ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

উড়ন্ত মশা না মারলে, অক্টোবর হবে ভয়াবহ

মাইদুর রহমান রুবেল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৬:২৭ পিএম

উড়ন্ত মশা না মারলে, অক্টোবর হবে ভয়াবহ

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: মারাত্মক ডেঙ্গু আতঙ্কে রাজধানীবাসী। তিলোত্তমা নগরী ঢাকা এখন যেন এক আতঙ্কের নাম। নগরীর ঘরে ঘরে হানা দিয়েছে জ্বর। কানায় কানায় ভর্তি হাসপাতালগুলো। দীর্ঘদিন মশা মারা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও অবশেষে ঢিমেতালে শুরু হয়েছে ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রম। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হাসান আরিফ বাস্তবতা স্বীকার করে বলেছেন, লোক দেখানো কাজ করে ডেঙ্গু সংক্রমণ থামানো সম্ভব নয়। আর কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশারের মতে এখনই উড়ন্ত মশা মারতে না পারলে, অক্টোবরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরো বাড়বে।

চলছে ডেঙ্গুর ভরা মৌসুম। জোয়ারের মতো রোগি ভর্তি হচ্ছে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। ঠাই নেই ঢাকা মেডিকেলের বিছানায়, বাধ্য হয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। পুরনো ঢাকা থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন নাজির হোসেন। তার দাঁত দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বলছেন তার অবস্থা সত্যি ঝুকিপূর্ন। সাধ্যমতো চিকিসা চলছে বলেও জানান তারা। মালিবাগ থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন সুমাইয়া বেগম। স্যালাইন চলছে। পাশে মনমরা হয়ে বসে আছে দুই সন্তান। বাবা গেছে খাবার আনতে। সুমাইয়া জানান তাদের এলাকায় গত কয়েকমাসে মশার ওষুধ দিতে দেখেননি তিনি। মশার জন্য ঘুমাতে পারেননা তারা।

একই চিত্র মুগদা মেডিকেলেও। সেখানে ঠাই নেই তিল ধারনের। রোগির তুলনায় চিকিৎসক কম হওয়ায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার ও নার্সদের। মুগদা মেডিকেলের পরিচালক ডা. এস এম হাসিবুল ইসলাম বলেন এখন ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। আমাদের পরামর্শ হলো জ্বর দেখা দিলে দ্রুতই চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হওয়া উচিত। কোন মতেই অবহেলা করা উচিত নয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগিকে বেশি বেশি লিক্যুইড খাওয়ানোর পরামর্শ এই চিকিৎসকের। সাথে ভিটামিন সি বেশি পরিমানে রোগিকে দিতে হবে।

মহাখালির ডিএনসিসি ডেডিকেটেড ডেঙ্গু হাসপাতালে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে এই হাসপাতালে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে ১শরও বেশি রোগি। ডিএনসিসি ডেডিকেটেড ডেঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. টি কে বর্মন জানান ডেংগুর চারটি ধরণ রয়েছে। কেউ একবার আক্রান্ত হলে তার আরও তিনবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তবে যে ধরনে একবার আক্রান্ত হন সে ধরনে আর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে না।

ডেঙ্গু যখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তখন মশক নিধন কার্যক্রম পরিদর্শনে আরমানিটোলায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা। এডিসের লার্ভা নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১২টি টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন উপস্থিত কর্মকর্তাদের । বলেন লোক দেখানো কার্যক্রম চালিয়ে মশা মারা সম্ভব নয়। আমি দেখলাম এখন পরিস্কার করছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মাত্র ঝাড়ু দিয়েছে। আমি আসলে কাজ হবে না আসলে হবে না তা তো চলবে না। এই উপদেষ্টা বলেন শুধু সিটি কর্পোরেশনের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজ বাড়ির আঙ্গিনা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে। মশা যাতে বংশ বিস্তার করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। 

যেসব এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি সেসব এলাকায় মশা মারার জন্য ইতোমধ্যে ১২ টি বিশেষ টিম গঠন করে দিয়েছে তারা কাজও শুরু করেছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামে এসব টিম কাজ করছে বলেও জানান এই উপদেষ্টা। যার যার অবস্থান থেকে প্রত্যেককেই সচেতন হয়ে ডেঙ্গু নিধনে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সকালে আরমানিটোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। বলেন, ডেঙ্গুর সময়ে প্রথম দিনে জ্বর হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া ডেঙ্গু নিধনে ঢাকা যারা দায়িত্বে আছেন তাদের সচেতন হয়ে কাজ করার আহ্বান ও জানান তিনি। নিজ উদ্যোগে পাড়ায় পাড়ায় এবং মহল্লায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করার কথা ও বলেন হাসান আরিফ। তিনি বলেন প্রতি বছর যখন ডেঙ্গুর সংক্রামন বেড়ে যায় তখন সবাই লাফালাফি শুরু করে দেই। এটা যাতে আর না হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, তিন পদ্ধতিতে ডেঙ্গুর লাগাম টেনে ধরা সম্ভব। হটস্পট ম্যানেজম্যান্ট, বেডিংসোর্স ম্যানেজম্যান্ট, লার্ভিসাইট ম্যানেজম্যান্ট। সেজন্য নগর কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা প্রয়োজন। এখন ডেঙ্গু যেই অবস্থায় আছে সেটি নির্মুল করতে হবে। তিনি বলেন আমরা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষনা করে আগেই জানিয়েছিলাম সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডেঙ্গুর আক্রমন প্রকট হবে। তার ফল এটি। এখন ডেঙ্গু উড়ন্ত অবস্থায় আছে। এই উড়ন্ত মশা না মারতে পারলে আগামী অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বাড়বে। যে বাড়ীতে ডেঙ্গু রোগি আছে তার তালিকা করে সেই বাড়ীর ২শ গজের মধ্যে ফগিং করে উড়ন্ত মশা মেরে ফলেতে হবে। না হয় ডেঙ্গু রোগিকে কামড়ে মশা সুস্থ মানুষকে আক্রান্ত করবে।

জ্বর একদিনের বেশি স্থায়ী হলেই অবহেলা না করে চিকিৎসকের  কাছে যাওয়ার পরামর্শ বিশষজ্ঞদের। ডেঙ্গুকে অবহেলা না করে যথাসময়ে পদক্ষেপ নিলে মৃত্যুঝুকি থেকে রোগি বাচাঁনো সম্ভব।

আরবি/এস

Link copied!