ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

বেবিচকে এখনো সেই পান্না

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪, ০১:০৯ এএম

বেবিচকে এখনো সেই পান্না

ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান পান্না। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের করে দেওয়া সেই ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান পান্না বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষে (বেবিচক) বসে আছেন এখনো। তার সাথে নেতৃত্বদানকারি উপসচিব নাজমুস সাদাত সেলিমকে ওএসডি করা হলেও পান্না কোন খুঁটির জোরে এখনো বহাল তা অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে। খালেদা জিয়াকে এক কাপড়ে তার বাড়ি থেকে বের দেওয়ার কৃতিত্ব নেওয়া তৎকালীন সেই ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান পান্না বেবিচকে সিএটিসিতে ক্লাস নেওয়ার সময় এ কথা বীরদর্পে প্রচার করে বাহবা নিয়েছেন। বেবিচক কর্মচারীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে তারা বেবিচক থেকে তাকে বের দেবেন বলে শোনা যায়।

পরিচালক ইসরাত জাহান পান্না প্রায় সময়ই বেবিচক চেয়ারম্যানের অফিসকক্ষে বসে থাকেন বলে জানা যায়। আগের চেয়ারম্যানের আমলেও তিনি চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে থাকতেন। বেবিচক চেয়ারম্যানকে শলাপরামর্শ দিয়ে থাকেন। এবার ঠিকাদারি কাজের দিকেও নজর পড়েছে এই পান্নার। তিনি বেবিচক চেয়ারম্যান নাকি ঠিকাদারি কাজ নিয়ে নানা মতামত দিয়ে থাকেন।
পান্না ছাড়া আরও দুজন আওয়ামী দোসর বেবিচকে এখনো বহাল। এরা হলেনÑ মেম্বার এডমিন এবং মেম্বার অর্থ। এদের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হলে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। কিন্তু ওই তিন কর্মকর্তা এখনো বেবিচকে বহাল তবিয়তে আছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ইসরাত জাহান পান্না বেবিচকে পরিচালক সম্পত্তি শাখার দায়িত্ব পালন করছেন। বেবিচকের জায়গা-জমি নামকাওয়াস্তে লিজ দেওয়ার কারিগর এই ইসরাত জাহান পান্না। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন বিমানবন্দরের দোকানপাট, হোটেল, লাউঞ্জ, বিজ্ঞাপনী সংস্থা আওয়ামী দোসরদের নামে নতুন করে বরাদ্দ এবং নবায়ন করা হচ্ছে। আওয়ামী সুবিধাভোগী অভিনেত্রী শমী কায়সারের ধানসিঁড়ি, জাতীয় পার্র্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মেয়ের জামাই অভিনেতা মাহফুজের নকসিকাঁথা লাউঞ্জ, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ভাতিজার প্রতিষ্ঠানের নামে লাউঞ্জ নবায়ন ছাড়াও শাহজালালে আরও আওয়ামী দোসরদের প্রতিষ্ঠান নবায়ন করা হয়েছে। অন্যান্য বিমানবন্দরেও নবায়ন প্রক্রিয়া চলছে। এর সাথে জড়িত ডিডি সাধন কুমার মোহন্তকে বলিরপাঠা বানানো হলেও পরিচালক পান্নার কিছুই হয়নি। তাকে জবাবদিহি পর্যন্ত করতে হচ্ছে না। বিমান বন্দরের গোল চত্বর সংলগ্ন মনোলোভা রেস্টুরেন্ট গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও পাশে হোটেল ওয়ান্ডার-ইন এখনো দিব্যি ব্যবসা করছে, লিজের জমির পরেও পাশে আরও ১ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে ওয়ান্ডার-ইন হোটেল কর্তৃপক্ষ। এসব অপকর্মে নেতৃত্ব দান করছেন ইসরাত জাহান পান্না। সম্পত্তি শাখার মিজানুর রহমান এবং আল আমিন পান্নার ডানহাত হিসেবে কাজ করছে। ফলে ডিডি সাধন কুমার মোহন্তকে বদলি করা হলেও মিজান-আলামিন এখনো সম্পত্তি শাখায় বহাল।

একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অভিনেতা মাহফুজের সাথে অর্ধাঅর্ধি পাটনারশিপে বিভিন্ন বিমানবন্দরে লাউঞ্জ ব্যবসা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। দোকান বরাদ্দ দেওয়ার নামে থার্ড টার্মিনাল থেকে কেটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে-যা তদন্ত করলে বের হয়ে আসতে পারে।

পরিচালক এডমিনের সহপাঠী যখন পরিচালক মানবসম্পদ : বেবিচকে পরিচালক এডমিনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী পরিচালক মানবসম্পদ ইকরাম উল্লাহ। পরিচালক এডমিনের নেতৃত্বে প্রমোশনের পর প্রমোশন দিয়ে ইকরাম উল্লাহকে ডিডি থেকে রাতারাতি পরিচালক করে এখন তার পাশে পরিচালক মানবসম্পদের দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। পরিচালক ইকরাম উল্লাহর পদোন্নতিতে এক মাস ধরে মিষ্টি বিতরণ চলছে বলে কর্মচারীরা জানান।

এ ব্যাপারে পরিচালক ইকরাম উল্লাহ জানান, যারা আমাকে অভিনন্দন জানাতে আসছেন তারাই মিষ্টি নিয়ে আসছেন, আমাকে তেমন মিষ্টি কিনতে হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, বেবিচকে মুরাদীর প্রমোশনে ১৯ মণ মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিল।

১৪ প্রকৌশলীর দুর্নীতির তথ্য চেয়ে মন্ত্রণালয়ের চিঠি : বেবিচকে ১৪ প্রকৌশলীর দুর্নীতির তথ্য চেয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সিএ অধিশাখা-১ সৈয়দ মাহমুদ হাসান এক দাপ্তরিক চিঠি জারি করেছেন।

যাদের দুর্নীতির তথ্য চাওয়া হয়েছে তারা হলেন : প্রকল্প প্রকৌশলী যাদের ১৯৯৬ সালের পদবি এবং ২০১০ সালের পদবী সাংঘর্ষিক, যাদেরকে ফিডার পদে ৭ বছরের জায়গায় এক বছরের মধ্যে পদোন্নতি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী করা হয়েছে, এদেরকে প্রকল্প থেকে পদ পরিবর্তন করে রাজস্ব খাতে নিয়ে আসার জন্য ৫ মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করতে হয়েছে। এতে করে সরকারের লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এখন তাদের আবার প্রধান প্রকৌশলী করতে চায় বেবিচক। সেই ২ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হলেন জাকারিয়া এবং শুভাশিষ বড়ুয়া।

অন্যরা হলেন :  ইএম বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আছালত হোসেন খান, শাহিনুর আলম, আয়শা হক, সফিকুল আলম, হাসান মিয়া, মেহেদী আল মিজান, এনামুল কবীর। সিডির সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, মো. জহিরুল ইসলাম, মো. আব্দুল মালেক, শহিদুল আফরোজ, হাবিবুর রহমান।

এদের মধ্যে হাবিবুর রহমান প্রকৌশল বিভাগে নেই, তিনি চাকরি করছেন এফএসআর বিভাগে। ফিডার পদে তার ৩ বছর পূর্ণ হয়নি বলে জানা যায়। ছাত্রদল করার সুবাদে তাকে গত সরকারের আমলে প্রকৌশল বিভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এখন তাকে আওয়ামী দোসরারই প্রকৌশল বিভাগে প্রধান প্রকৌশলী করার ফন্দি আঁটছেনÑ যদিও তার ফিডার পদ পূর্ণ হয়নি। উল্টো তার দুদক ক্লিয়ারেন্সের জন্য বেবিচক চেয়ারম্যান দুদকে চিঠি পাঠিয়েছেন।

তার পক্ষে যাতে গণমাধ্যম কাজ করে এ জন্য দু’জন গণমাধ্যমকর্মীকে কয়েক কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ ‘এনাম’ দেওয়া হয়েছে বেবিচকের সর্বত্র বলাবলি হচ্ছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!