ঢাকা শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
রাজধানীর সড়কে যানজট-বিশৃঙ্খলা

শৃঙ্খলা ফেরাতে ৬ রূপরেখা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ০১:০৬ এএম

শৃঙ্খলা ফেরাতে ৬ রূপরেখা

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বহুকাল ধরেই তীব্র যানজটে নাকাল ঢাকাবাসী। নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত রাজধানীর ট্রাফিকব্যবস্থা। এ কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতি অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা। অসহনীয় এই অবস্থা থেকে উত্তরণ  ও নগরজীবনে স্বস্তি দিতে এবার উদ্যোগী হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

মহানগরীর যানজটসহ সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে দায়িত্ব দিয়েছেন বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের। প্রাথমিকভাবে ৬ দফা রূপরেখা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তারা।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে প্রয়োজন গণপরিবহনব্যবস্থার উন্নতি করা এমনটাই বলছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে ঢাকার ট্রাফিকব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রতিদিনের প্রায় ২ কোটি ট্রিপের ৭০ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে বাসে। রাষ্ট্রের একক মালিকানায় চালাতে হবে সব বাস।

গেল ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুলিশের অনুপস্থিতিতে অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়ে ঢাকার ট্রাফিকব্যবস্থা। যানজট সংকট নিরসনের রূপরেখা খুঁজতে দেশীয় ও স্বল্প খরচে সমাধানের পথে হাঁটতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার। উপায় খুঁজে বের করতে প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব দেন বুয়েটের দুই বিশেষজ্ঞকে। এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে ছয় দফা প্রস্তাবনা। পরিকল্পনা আছে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্ট মোড় থেকে আবদুল্লাপুর পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে কার্যকরের।

এতে বলা হয়েছে এক, প্রধান সড়ক থেকে নিবন্ধনহীন রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক অপসারণ। দুই, ট্রাফিক পুলিশকে আইন প্রয়োগে সক্রিয় করা। তিন, প্রতিটি রাস্তার মোড়ের ৫০ মিটার ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কে ১০০ মিটারের মধ্যে যানবাহন পার্কিং না করা। চার, নির্ধারিত স্থানে সুশৃঙ্খলভাবে যাত্রী ওঠা-নামা নিশ্চিত করা। পাঁচ, কম ব্যস্ত সিগনালে ২ থেকে ৩ মিনিট এবং ব্যস্ত সিগনালে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সিগনালসাইকেল নিশ্চিত করা। ছয়, তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানে ৬ থেকে ৮টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক মনিটরিং টিম গঠন করা।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, সড়কে ট্রাফিক পুলিশ রেখেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আমাদের যে পরিমাণ বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা আছে সেখানে ব্যাকরণ কাজ না করে আধুনিক কিছু চাপানো যাবে না। আমরা যেটি চিন্তা করছি, সেটি হচ্ছে অনেকটা সেমি-অটোমেটেড। ফ্লেক্সিবল সিগনাল লাইট বলছি। এখানে অটোমেশন থাকবে আবার সেই সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ ম্যানুয়ালি এটি টাইম পরিবর্তন করতে পারবে। এই ট্রাফিকব্যবস্থাপনা দেখভালের মূল দায়িত্ব পালন করবে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আর বাস্তবায়নে থাকবে ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ। এই পরিকল্পনা কতটা সুফল আনবে এমন প্রশ্নে আশাবাদী পুলিশ।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খোন্দকার নাজমুল হাসান বলেন, যখন মানুষ সিগনালে অভ্যস্ত হবে তখন একজন কনস্টেবল পুরো ট্রাফিক সিগনালটা কন্ট্রোল করতে পারবে যেখানে বর্তমানে ৫ জন কাজ করে। তবে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেলে বাকি ৪ জন অন্য কাজগুলো দেখভাল করতে পারবে। তখন মানুষ ইচ্ছা করে সিগনাল অমান্য করবেন না। পুলিশ আইন প্রয়োগ করে কখনোই ট্রাফিক সিস্টেম উন্নত করতে পারবে না। চালক এবং যাত্রী যদি আইন মানে তখন পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে সুবিধা হবে আর ট্রাফিক সিস্টেমও উন্নত হবে।

বুয়েট শিক্ষক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যে বাসগুলো রুট পারমিট নেই সেগুলোকে রুট থেকে বের করে দিতে হবে। যে বাসগুলো চলার উপযোগী সরকারকে সেগুলো নিয়ে প্রথম কাজ করতে হবে। ধীরে ধীরে বিনিয়োগ হবে এবং বাসের মান পরিবর্তন হবে, আলাদা লেন থাকবে। চাইলে সিগনালে তাদের প্রায়োরিটি দেওয়া হবে। তখন বাসগুলোকে একটা শৃঙ্খলায় আনা যাবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!