ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৪

গোপনে দেশ ছাড়ছেন পুলিশ সদস্যরা

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৩:১২ পিএম

গোপনে দেশ ছাড়ছেন পুলিশ সদস্যরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জুলাই-আগষ্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এবং বিভিন্নভাবে সুবিধাভোগী প্রভাবশালী পুলিশ সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান। ইতোমধ্যে অনেকে গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। দুর্নীতিবাজ এবং ছাত্র-জনতার হত্যাযজ্ঞে সরাসরি জড়িত হাসিনার দোসর পুলিশ সদস্যরা সরকারের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিমানবন্দর, স্থলবন্দর এবং সীমান্ত দিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন পর্যায়ের ১৮৭ জন সদস্য এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি। তাদেরকে আর চাকরিতে ফেরার সুযোগ নেই, বরং বিচারের মুখোমুখি হতে বলে জানিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। তবে এর বাইরেও অনেক পুলিশ সদস্য নানা কৌশল বা কারণ দেখিয়ে কর্মস্থলে এখনো অনুপস্থিত। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো পুলিশ সদস্যরাও পলাতক। এর বাইরে কর্মস্থলে যোগ না দেয়াদের কোনো হদিস মিলছে না। গোয়েন্দা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য পলাতক রয়েছেন। তাদের সবাই নানান উপায়ে দেশ ছেড়ে পালাতে চেষ্টা করছেন।

গত দেড় দশকের স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ পুলিশের আলোচিত ও সমালোচিত যেসব পুলিশ কর্মকর্তারা সরাসরি কাজ করেছেন গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাদেরকে আর প্রকাশ্যে কোথাও দেখা যায়নি। গোপালগঞ্জের পুলিশ বা পুলিশ লীগের সদস্য বলে পরিচিত ক্ষমতার অপব্যবকারী প্রভাবশালী এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার করে বিদেশে বিপুল গড়ে তোলা, গুম খুন হত্যা নির্যাতনসহ বিরোধীদল বা বিরোধীমত দমন-পীড়নে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিজেদের অপকর্ম এবং অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণেই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে বা আইনের মুখোমুখি না হতে হাসিনার দোসর পুলিশ সদস্যরা দেশ ছেড়ে পালাতে চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ বাহিনীকে সবচেয়ে বেশী আক্রোশের শিকার হতে হয়। এর মূল কারণ পুরো বাহিনীকে দলীয়করণ এবং হাসিনার অনুসারী বানিয়ে ফেলা। যার খেসারত দিতে হচ্ছে রাষ্ট্রের গুরুর্ত্বপূর্ন এই বাহিনীকে। বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে পুলিশকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে।

ইতোমধ্যে পুলিশের সাবেক দুই কর্মকর্তা এ কে এম শহীদুল হক, আছাদুজ্জামান মিয়া, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিবির ডিসি মশিউর রহমান ও ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফীসহ সাত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ২৬ জন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। যেকোনও সময় এসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এপর্যন্ত ১৮৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা হয়েছে। ২৩ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে সরকার। এছাড়াও দেশ ছেড়েছেন একাধিক কর্মকর্তা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যারা চাকরিতে ফিরতে পারবেন না তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ এরই মধ্যে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ আইন অনুযায়ী চলবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে গ্রেপ্তারের অনুমতি নেওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান ও ঢাকার সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহিদুর রহমান। এ তালিকায় আরো রয়েছেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, ওয়ারী জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এস এম শামীম, উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম, ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের সাবেক সহকারী কমিশনার তানজিল আহমেদ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) উত্তরার সহকারী পুলিশ সুপার (চট্টগ্রামের হাটহাজারী মডেল থানার সাবেক ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম। রফিকুলকে ২২ সেপ্টেম্বর চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু ঢাকায় পুলিশের কমপক্ষে ৯৯ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) ৫০ থানায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হবে। ইতোমধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ও গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল ইসলাম কাজলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব এলাকায় পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীরা নিহত হয়েছেন, সেসব এলাকার উপকমিশনার, অতিরিক্ত উপকমিশনার ও সহকারী কমিশনারদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৫ আগষ্ট থেকে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। হত্যাযজ্ঞে জড়িত থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ তৈরি হয় পুলিশের বিরুদ্ধে। ঢাকাসহ সারাদেশের অধিকাংশ থানা এবং পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫ আগস্টের পর নিরাপত্তার স্বার্থে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তা। এর পর এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি পুলিশে। অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, অনেকে রয়েছেন আত্মগোপনে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পুলিশের পলাতক কর্মকর্তাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তাকে এখনো চাকরিচ্যুত করা হয়নি। পলাতক হিসেবে হারুনকে পুলিশ সদর দপ্তরের তালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে। ৫ আগস্টের আগে-পরে সংঘটিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামির তালিকায়ও শীর্ষে হারুন অর রশীদ। এসব মামলার মধ্যে ২০১১ সালে যে ঘটনা কেন্দ্র এই কর্মকর্তা লাইমলাইটে আসেন সেই তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নাল আবদিন ফারুককে নির্যাতনের মামলাও আছে। ১৩ বছর পর গত ১৯ আগস্ট জয়নাল আবদিন ফারুক নিজেই বাদী হয়ে ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। এ পর্যন্ত ৩৮টি মামলায় তার নাম পাওয়া গেছে।

সবশেষ এই কর্মকর্তা ডিএমপির ডিবিপ্রধান হিসেবে বেশি সমালোচিত হন। ৫ আগস্টের পর থেকে তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। একটি সূত্রমতে, হারুন মারধরের শিকার হয়ে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আবার অন্য একটি সূত্রমতে, তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালিয়েছেন।

জানা গেছে, ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার কথাও উঠেছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে অনুযায়ী গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে কোনো এক সময় তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। পাচারকারীদের এ সংক্রান্ত কয়েকটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্ত পার করার সময় বিপ্লব কুমারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেওয়া হয় বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মীর রেজাউল আলম গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এমএইচ১০৩ এর একটি ফ্লাইটযোগে সিডনির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার নামে একাধিক মামলা হয়েছে। দুদকে তার নামে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপি মীর রেজাউল আলম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও, অপারেশন শাখার দায়িত্বে এবং কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়াও সাবেক ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গত ২০ আগস্ট ব্যাংককের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগের জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। কিন্তু ডিবিকে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জানানো হলে খন্দকার গোলাম ফারুকের দেশ ত্যাগের বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়। পরে অবশ্য তিনি বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফিরে যান। খন্দকার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে।

আত্মগোপনে যারা:

কর্মস্থলে যোগ না দেওয়া ১৮৭ সদস্যের যে তালিকা পুলিশ সদর দপ্তর দিয়েছে, এর মধ্যে ডিআইজি থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন ১৬ জন। পুলিশ পরিদর্শক আছেন ৫ জন, উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন ১৪ জন। অন্যদের মধ্যে এএসআই ৯ জন, নায়েক ৭ জন ও কনস্টেবল ১৩৬ জন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, কাজে যোগ না দেওয়া শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান (স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসরের আবেদন করেছেন), ডিএমপির সাবেক যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ডিবির সাবেক যুগ্ম কমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান, রংপুর মহানগর পুলিশের (আরপিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার উত্তম কুমার পাল এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার।

পুলিশ সুপার থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আত্মগোপনে থাকা অন্য আট কর্মকর্তা হলেন- আরপিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন, আরপিএমপি ডিবির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহ নূর আলম, ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান ও মো. ইফতেখার মাহমুদ, আরপিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান ও মো. আল ইমরান হোসেন এবং সিরাজগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার রানা।

পরিদর্শক পদে কর্মস্থলে যোগ না দেওয়া কর্মকর্তারা হলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানার সাবেক ওসি মো. মাহফুজার রহমান, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ মডেল থানার পরিদর্শক খাদেমুল বাহার বিন আবেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সার্কেলের পরিদর্শক মো. ইউসুফ হাসান, ডিএমপির সাবেক পরিদর্শক জাকির হোসাইন ও ঢাকা জেলা পুলিশের পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে মধ্য জুলাই থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা শহরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় অসংখ্য ছাত্র-জনতা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে সাবেক মন্ত্রী-এমপি, নেতাকর্মী, পুলিশ, বিচারক ও আমলাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় মামলা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সারাদেশে মামলা হয়েছে দুই শতাধিক। ঢাকায় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তিন শতাধিকের বেশী। এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক শতাধিক পুলিশ সদস্যের নাম রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনে গুলি চালিয়ে লাশ ফেলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন শতাধিক পুলিশ সদস্য। অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন।

পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে। এর পরের অবস্থানে রয়েছেন পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপি যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার,  স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইকবাল হোসাইন, যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান ৮ ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ। মামলাগুলোর মধ্যে অধিকাংশই হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। মামলায় নাম রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, সহকারী পুলিশ কমিশনার, একাধিক থানার ওসি, ইন্সপেক্টর, এসআই ও কনস্টেবলদেরও। সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে যাত্রাবাড়ী থানায়।

উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা:

সরকার পতনের পর ভাইরাল এক ভিডিওতে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করা নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামালকে ব্রিফ করছেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। তার মোবাইলে একটি ভিডিও দেখিয়ে তিনি বলছিলেন, গুলি করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়......। এ সময় সেখানে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও উপস্থিত ছিলেন।

৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন বিকেলেও গুলি চালায় পুলিশ। এসব গুলিতে অনেকে নিহত হন। নিহতদের মধ্যে অনেকের মরদেহের হদিস পর্যন্ত মেলেনি এখনো। এর মধ্যে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানা এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন মো. হৃদয় (২০) নামে এক কিশোর। ঘটনার দিনের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ছেলেটিকে গুলি করার পর বস্তায় ভরে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ওই দিন তার মতো আরও কয়েকজনের মরদেহ গুম করেছে থানা পুলিশ।

একইভাবে ৫ আগস্ট দুপুরের পর ঢাকার আশুলিয়া থানার প্রধান ফটকসংলগ্ন স্থানে একটি ভ্যানে রাখা ছিল বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ। ওই ভ্যানেই হাত-পা ধরে পুলিশকে আরেকটি মরদেহ তুলতে দেখা যায়। সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল এ সংক্রান্ত ভিডিও। পরে ভিডিওটি তদন্তে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে।

এর মধ্যে ওই ঘটনায় সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপারনিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহিল কাফীকে গত সোমবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। কাফীর বিরুদ্ধে লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা এবং হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়।

আরবি/এফআই

Link copied!