ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৪
অন্তর্বর্তী সরকারের ২ মাস আজ

পুলিশ রাষ্ট্রসংস্কার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য

মেহ্দী আজাদ মাসুম

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৪, ০১:১৭ এএম

পুলিশ রাষ্ট্রসংস্কার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাড়ে ১৫ বছরের সরকারের পতন ঘটিয়ে গঠিত হওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দু’মাস পূর্ণ হবে আজ ৮ অক্টোবর। যুদ্ধবিধ্বস্তের মতো অভ্যুত্থান-উত্তর অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর একটি দেশকে নিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নেমেছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২০ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে যুদ্ধে নেমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় সময় অতিবাহিত করেছেন। এই স্বল্প সময়ে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চলমান করার পাশাপাশি দৃষ্টি দিয়েছেন রাষ্ট্রসংস্কার, মানবাধিকার, প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে। বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সামিট গ্রুপ ও বেক্সিমকো গ্রুপসহ দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট সাতটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের এমন সব উদ্যোগ ব্যাহত করতে প্রথম থেকেই এই শুরু হয় চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র। তবে সবকিছু উপেক্ষা করেই এগিয়ে চলছে অন্তর্বর্তী সরকার। গণতান্ত্রিক পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিদায়ও নিতে চায় এই সরকার। সেই লক্ষ্যে তৃতীয়বারের মতো সংলাপ করছে গণহত্যায় অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে।

‘জুলাই ৩৬ অথবা ৫ আগস্ট’ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন দিন। হাজারো শহীদের রক্তে এই দিন রচিত হয় একটি নতুন ইতিহাস। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাড়ে ১৫ বছরের সরকারের পতন ঘটে। দুপুরে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে আশ্রয় নেন ভারতে। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকারের হাত ধরে এই দিনে যাত্রা শুরু হয় নতুন এক বাংলাদেশের।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের এগিয়ে চলার পথে সহযোগী তিনিসহ ২১ উপদেষ্টা। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কলামিস্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুলের সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ। নতুন এই সরকারের এগিয়ে চলার পথ যতটা মসৃণ হওয়ার প্রত্যাশা ছিল, প্রাপ্তির সাথে সে প্রত্যাশার ফারাক অনেক। ঘুণে ধরা প্রশাসনে পরিবর্তনের পাশাপাশি গতিশীল করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই দুই মাসে সরকারের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপই ছিল রাষ্ট্রসংস্কার। এরপর সরকারে গুরুত্ব পায় বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চলমান করার প্রক্রিয়ায়। এরপর একে একে মানবাধিকার, প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে কাজ শুরু করে।

দুই মাসের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ : 

মানবাধিকার : চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে যেসব ফৌজদারি মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহারে দ্রুত কাজ চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের ঘটনা জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। আর গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠিত হওয়ার পর তারও তদন্ত চলছে জোরেশোরে। এর আগে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখভালের জন্য সরকারের গঠিত ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’-এর কাজ শুরু। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশির সবাইকে আমিরাতের প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করে দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের অনুরোধে। এই ক্ষমা পাওয়া অনেকে ইতিমধ্যে দেশেও ফিরে এসেছেন।

সংসদ, আদালত-ইসি : ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করেন। ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। একই দিনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তার আগে ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামানকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেন। কাজ শুরু হয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনেরও।

রাজনীতি : ৬ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। ২৮ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী দল ও জোট পুনর্বাসনের সুযোগ পাবে না। গণহত্যায় অভিযুক্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

আর্থিক খাত ও দুর্নীতি দমন : ১০ ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে নয়টির মালিকানা এস আলম গ্রুপের। সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ী, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের অনেকের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। ডলারের দাম আরও বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। মোবাইলে আর্থিক সেবা নগদের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারে বেক্সিমকো, লা-মেরিডিয়ান হোটেলসহ ১২ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সিআইডি। আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালীদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এজন্য কাজও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া নতুন গভর্নর লুটপাট হওয়া ব্যাংকগুলোকে আবারও চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন।

একই সঙ্গে ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলোর শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড (নগদ লিমিটেড)। তার মধ্যে বসুন্ধরা, ওরিয়ন, সামিট, বেক্সিমকো গ্রুপের কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার : ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে চেয়ারম্যানদের অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি পরবর্তী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপিত হবে। এর আগে ১৯ আগস্ট সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ ও প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ১২ আগস্ট বিভিন্ন পদে থাকা চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা কার্যকর করা হয়। আবার প্রশাসনে নতুন করে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগও দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। প্রায় অর্ধশত জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সম্পদের হিসাব জমা দেওয়া : সরকারি সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে তাদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় নেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি : বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ হবে গণশুনানির মাধ্যমে, নির্বাহী আদেশে নয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর আওতায় নতুন কোনো চুক্তি হবে না।

স্বাস্থ্য খাত : আন্দোলনে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সহায়তা দিতে কমিটি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিষয়ভিত্তিক সংস্কার, চিকিৎসাসেবার গুণগত মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালীকরণে ১২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

শিক্ষা খাত : বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষাক্রম নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে মাধ্যমিকে আবারও ফিরছে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা। তবে উচ্চশিক্ষায় স্থবিরতা কাটেনি। ইউজিসি চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ ও হেনস্তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

পরিবেশ : রামুর সংরক্ষিত বনে বাফুফের টেকনিক্যাল সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ বাতিল করা হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে নদীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া ৬৪ জেলায় অন্তত ৬৪টি নদী চিহ্নিত করে নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নির্বাহী আদেশ ও সিদ্ধান্ত : ৫ সেপ্টেম্বর গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৯ আগস্ট ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ-২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তাসুবিধা পাবেন না। ১৩ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর সরকারি অর্থে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার নামকরণের বিষয়ে আইনি কাঠামো ঠিক করতে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই দিনে সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করতে সচিবদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মব জাস্টিস, দুই মাসে ৪৯ জনকে পিটিয়ে হত্যা : গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই দুই মাসে সারা দেশে কমপক্ষে ৪৯ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

আইনজীবী ও রাজনীতিবিদেরা বলেছেন, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া যেকোনো হত্যাই বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং এসবের দায় সরকারকে নিতে হবে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে ৪৯ জনের। তবে মাত্র তিনটি ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের দাবি, তারা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চোর সন্দেহে মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর জের ধরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে চার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নিহত হন। অনেক ঘরবাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে পুড়ে যায় অনেক বাড়ি-ঘর।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র : মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের হানিমুন পিরিয়ড শেষ হয়ে গেছে। দুই মাসেও তারা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারছে না। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘কোনো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির নানা ধরনের দায়িত্বহীন কথাও পরিস্থিতি খারাপ করছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা স্থানে বিচারবহির্ভূত হত্যা: গত ১৮ সেপ্টেম্বের দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে মারা হয় দুজনকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে চোর অপবাদে দিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে।

এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় পঙ্গু সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে। এদিকে চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নাচ-গান করে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার এক মাস পর সেই হত্যাকান্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

১০ বছর আগে হাত-পায়ের রগ কাটা হয়েছিল, এবার সেই ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গণপিটুনির বাইরে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর হেফাজতেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর হেফাজতে। তবে নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের দাবি ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যার ঘটনা ঘটেনি।

আরবি/জেডআর

Link copied!