ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

ছাত্রলীগ হারাবে না, থাকবে লাখ লাখ দোকানদারের বাকির খাতায়

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ০৮:৪৩ পিএম

ছাত্রলীগ হারাবে না, থাকবে লাখ লাখ দোকানদারের বাকির খাতায়

ছবি, সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের কথা জানানো হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিবৃতি প্রকাশও এখন নিষিদ্ধ। সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ (২০০৯ সালের ১৬ নং আইন)-এর ২০-এর ১ ধারা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ সত্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। আইনে বলা হয়েছে, ২০-এর ১-এর ঙ ধারা মতে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ সত্তার প্রেস বিবৃতির প্রকাশনা, মুদ্রণ বা প্রচারণা প্রদান নিষিদ্ধ করবে সরকার।

ছাত্র সংগঠন হিসেবে হয়তো হারিয়ে যাবে ছাত্রলীগ নামের এই দলটি। তবে, লাখ লাখ দোকানদারের বাকির খাতায় লেখা থাকবে তাদের নাম আজীবন। শুধুমাত্র এক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ এফ রহমান হল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ নেতাদের বাকির পরিমাণ ১৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বলে দাবি করেছেন ক্যান্টিন মালিক। একইসাথে , জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্যাফেটেরিয়ায় গেলো দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাকি খেয়েছেন প্রায় ৭ লাখ টাকা। (জবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক মাসুদ রানা এ তথ্য জানান।


ঢাবির, এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ ও সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুন দুজনে মিলেই পৌনে ছয় লাখ টাকার মতো বাকি খেয়েছেন দাবি ক্যান্টিন মালিকের। তিনি বাকির একটি তালিকা প্রভোস্ট অফিসে জমা দিয়েছেন। বাকির এই তালিকা গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।

বাকির হিসাবে দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজ বাকি খেয়েছেন তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা ও আরেক নেতা মুনেম খেয়েছেন দুই লাখ ১৬ হাজার টাকা, ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী আলী আহসান রিফাতের নামে বাকি এক লাখ ১৮ হাজার টাকা। তাছাড়া ছাত্রলীগ নেতা রবি এক লাখ ১৮ হাজার, নাহিদ ও জুয়েল এক লাখ ১৫ হাজার করে, উচ্ছল ৮৫ হাজার, হারুন ৭০ হাজার টাকা বাকি খেয়েছেন। তালিকায় মোট ৪৮ জন ছাত্রলীগ নেতা মোট ১৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বাকি খেয়েছেন।

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. রফিক শাহরিয়ার গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বলেছিলেন, বিষয়টি দেখেছি। আমার কাছে ক্যান্টিন মালিক অভিযোগ দেননি। এর আগেও আমি ক্যান্টিন ঘুরে তার খাবারের মান নিয়ে জিজ্ঞেস করেছি, তার কাছে কেউ বাকি খায় কিনা জানতে চেয়েছি। কিন্তু তিনি বরাবরই আমাকে বলেছেন তার কাছে কেউ বাকি খায় না। আমি তাকে নেতাদের নাম দিতে বলেছিলাম, তিনি দেননি।

ক্যান্টিন মালিক বাবুল জানান, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতারা আমার ক্যান্টিন থেকে নিয়মিত বাকি খেয়েছেন। আমি তাদের কিছু বলতে পারতাম না, অভিযোগ দেওয়ারও সুযোগ ছিল না। টাকা চাইলেও তারা দিতেন না, আমাকে চাপে রাখতেন। এখন তারা আমাকে পথে বসিয়ে পালিয়েছেন। আমি এর বিচার চাই, আমার টাকা ফেরত চাই।

এদিকে, জবির ক্যান্টিনে গত দুই বছরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ৭ লাখ টাকার বাকি খেয়েছে। পরবর্তীতে আর টাকা দেয়নি। এখন তাদের সবাই পলাতক। ক্যাম্পাসে আসে না।  ক্যাফেটেরিয়া সূত্র জানা যায়, জবির ক্যাফেটেরিয়ায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির নামে বাকি রয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের নামে বাকি রয়েছে ২ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা।

এ ছাড়াও বাকির হিসেবে নাম রয়েছে ছাত্রলীগের আরো অন্তত পাচঁ নেতা-কর্মীর। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির মাই ম্যান খ্যাত রবিউল ইসলাম রবির নামে বাকি ৫২ হাজার টাকা। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসানের গ্রুপ লিডার খ্যাত মিরাজের নামে বাকি রয়েছে ৭৫ হাজার টাকা, সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান বাবুর নামে বাকি ৫৫ হাজার টাকা।

সাধারণ সম্পাদক প্যানেলের আরো দুই নেতা তামিম ও সাজবুলের নামে বাকি রয়েছে ১২ হাজার টাকা ও ৯ হাজার টাকা। ছাত্রলীগের এই সাত নেতাকর্মীদের নামেই বাকি সর্বমোট ৬ লাখ ৪১হাজার টাকা।

ক্যাফেটেরিয়া পরিচালক মাসুদ রানা জানান, দীর্ঘদিন বাকি খেয়েছে তারা। টাকা দেবে দেবে করে আর দেয়নি। এর বাইরে আরো অনেকে আছে যারা টুকটাক খেয়েছে, তার হিসাব নেই। খেয়ে তারা টাকা দিতো না, আবার খাবার দিতে দেরি হলেও ক্যানটিনের ওয়েটারদের মারধরও করেছে সাজবুলসহ বেশ কয়েকজন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. কে এ এম রিফাত হাসান গণমাধ্যমকে জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে বিষয়টি সত্য হলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা রেগুলার স্টুডেন্ট হলে তাদের থেকে টাকা আদায় করার ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রশাসনিকভাবে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এটি শুধুমাত্র দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দুটি ক্যান্টিনের বাকির খাতার চিত্র নয়। এমন বাকির খাতা আছে শত শত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে । আছে লাখ লাখ দোকানদারের বাকির খাতায় ছাত্রলীগের নাম। নিষিদ্ধ হয়েও হারাবে না সেখান থেকে কোনদিনই ছাত্রলীগ।

আরবি/এস

Link copied!