ঢাকা শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

রাজনৈতিক দলগুলোকে সরিয়ে এখন নতুন ইতিহাস বির্নিমাণের চেষ্টা হচ্ছে

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৪, ০৪:৫৭ পিএম

রাজনৈতিক দলগুলোকে সরিয়ে এখন নতুন ইতিহাস বির্নিমাণের চেষ্টা হচ্ছে

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: দেশে এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে সরিয়ে নতুন ইতিহাস বির্নিমাণের চেষ্টা হচ্ছে। জুলাই-আগস্টের গণ আন্দোলন শুধু ছাত্ররাই করছে এবং তারাই সবকিছু এটি সঠিক নয়। একটা বাজে দৃষ্টান্ত হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর যে সহযোগীতা-সর্মথন সেগুলো অস্বিকার করা হচ্ছে। সরকারী সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’কে” কেন্দ্র করে একটি কিংস পার্টি গঠন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, বলে জানিয়েছেন নুরুল হক (নুর)।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন,  বৈষম্যবিরুধী আন্দোলনকে সকল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ সর্মথন দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন ছাত্রদল, শিবির, গণঅধিকার জেলা পর্যায়ে, থানা পর্যায়ে কেন্দ্রিয় পর্যায়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, তারাও সমন্বয়ক। তো, পরিচিতি পেয়ে এত মাতব্বরি করলে তো সমস্যা।

নুর বলেন, বিএনপি, জামায়াত, গণ অধিকার পরিষদের মত রাজনৈতিক দলগুলোর সংগ্রামি তরুণরা বিগত প্রায় ৬ বছর ধরে টানা আন্দোলনের ফলে ক্যাম্পাসে একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। যেখানে ছাত্র অধিকারের ছেলেরা বারবার নির্যাতিত হয়েছে । সর্বশেষ  বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলনের প্রোগ্রাম গুলোতে ছাত্রদল, শিবির, ছাত্র অধিকারের যে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ছিল সেটি সকলে জানে। একইসাথে দেশের সকলস্তরের সাধারণ মানুষ সরাসরি জড়িত হয়েছিল গণ-আন্দোলনে।

দুঃখজনক হলো এখন ছাত্রদের কারো কারো মধ্যে উচ্চাকাক্সক্ষা ও লোভ পেয়ে বসেছে। তারা এখন নিজেরা ডিসি নিয়োগ করতে চায়। তারা এখন সরকারের পুরো কাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হলেন বিশ্বনন্দিত, সর্বজন শ্রদ্ধেয়, দেশের গর্ব, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তারসাথে আরো গ্রহণযোগ্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন সেখানে এগুলোর প্রয়োজন আছে কিনা প্রশ্ন রাখেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি।

তিনি বলেন, আমরা যেটা জানতে পেরেছি ছাত্র ও ছাত্রনেতা অনেকের উৎপাতে সরকার স্থিরভাবে কাজ করতে পারছে না। কোনটা করতে গেলে, আবার সমন্বয়ক পরিচয়ে তাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে যাবে। এটা নিয়ে সরকারও কিছুটা বিব্রত অবস্থার মধ্যে রয়েছে।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে নুরুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার বা কোন বড় রাজনৈতিক দল পরিষ্কারভাবে বলেনি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি, বা তার জন্য আন্দোলন করছি। যদি এমন উদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করার প্রয়োজন পড়ে রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

তিনি বলেন, এখানে ছাত্র আন্দোলনকরী নেতৃবন্দ দুই-এক জনের অতি উৎসাহী ভুমিকা ছিল। তারাই পরিস্থিতি উস্কে দিয়েছে। তারা শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছিল মিডিয়াবাজি করার জন্য। কারণ অনেক দিন ধরে মিডিয়াতে নেই। শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছেন এবং একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

নুর বলেন, একইসাথে সমন্বয়কদের দুই-চার জন বলেছেন ছাত্রদেরকে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা করলে রাষ্ট্রের সংকট তৈরি হবে। তা হলে কেন তোমরা বাবা (আন্দোলনকরীরা) শহীদ মিনারে প্রোগ্রাম দিলা, আবার ৫ দফা দাবির প্রথম দাবি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ! তুমি বললে হবে পদত্যাগ?

জুলাই-আগস্ট গণ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নুর বলেন, জেলা পর্যায়ে যারা আন্দোলন করেছে বেশিরভাগ নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র অধিকারের ছেলে-মেয়ে সাথে শিবিরের ছেলেরা। কারণ শিবির প্রকাশ্য কম রাজনীতি করেছে, তাদের কম চেনে মানুষ। আর ছাত্র অধিকার একটি বিপ্ববী সংগঠন। এই আন্দোলনে ছাত্রদল তাদের সাথে ফোর্স হিসেবে কাজ করেছে। বলা চলে এই তিন সংগঠনের সবচেয়ে বেশি ছিল অবদান। এখন দেখা যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই আন্দোলনের ব্যানারকে কুক্ষিগত করার জন্য জেলাই জেলাই তারা লিস্ট পাঠাচ্ছে এদেরকে ডাকা যাবে ওদের কে ডাকা যাবে না।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সমগ্র জাতি একত্রিত হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা চাইলে দেশবাসীর এই ঐক্য ধরে রাখার ব্রিজ হিসেবে কাজ করতে পারতো । বর্তমান দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা রাষ্ট্র সংস্কার, ইতিবাচক রাজনীতিসহ সব কিছুই ইতিবাচক হতে পারতো। কিন্তু, তাদের ভিতর বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে তা এখন দৃশ্যমান । কিছু অংশ নতুনভাবে দল গঠন করেছে। অনেকে তাদের সর্মথন সরিয়ে নিচ্ছে। তারা এখন আন্দোলনের স্পিটের বাইরে গিয়ে কিংস পার্টি করতে যাচ্ছে। অনেকে নিজেকে সো-অফ করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

নুরুল হক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি সমন্বয়ক কমিটি ছিল। যেটিতে দেশের বিভ্ন্নি প্রান্তের শিক্ষার্থীরা যুক্ত ছিল। এখন আবার ৪ জনের একটি নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এটি ছিল একটি মুক্ত প্লটফর্ম, এতদিন আন্দোলন চলেছে প্রয়োজন ছিল। এখন তো আন্দোলন নেই, গণ মানুষের সর্মথন ছিল এখানে। এটি কেন রজনীতিকরণ করতে হবে। দেশের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেত। সেক্ষেত্রে কিছু  ছাত্রদের ’অতি-কথন‘ এবং ’অতি উৎসাহী কার্যক্রম’ পরিস্থিতি জটিল করছে।

আমি তাদের অগ্রজ হিসাবে তাদের অনুরোধ করবো তারা যেন সিনিয়ন এবং অভিজ্ঞদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করে, বলে জানান নুরুল হক ।

আরবি/এস

আরবি/এস

Link copied!