ঢাকা শনিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৪

অবশেষে বাজারে আসছে উচ্চ মাধ্যমিকের ৪ বই

উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ১২:৩৯ এএম

অবশেষে বাজারে আসছে উচ্চ মাধ্যমিকের ৪ বই

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

তিনটি প্রধান ও একটি সহপাঠ্য বই ছাড়াই বিগত তিন মাস পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। গত ৮ আগস্ট থেকে কলেজে ক্লাস শুরু হলেও প্রধান তিনটি বই না থাকায় শ্রেণি কার্যক্রমে যেমন অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি পড়াশোনায়ও মনোযোগ হারিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বইয়ের অভাবে কলেজের নিয়মিত অর্ধবার্ষিক পরীক্ষাও পেছাতে হয়েছে। এতসব বিপত্তির পর অবশেষে চলতি মাসের প্রথমার্ধে শিক্ষার্থীরা চারটি বই বাজার থেকে কেনার সুযোগ পেতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

জানা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির প্রধান তিনটি বই বাংলা, ইংরেজি, তথ্য-প্রযুক্তি ও বাংলা সহপাঠসহ মোট চারটি বই এনসিটিবি থেকে অনুমোদন নিয়ে উৎপাদন ও বাজারজাত করে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে (ওটিএম) সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান এসব বই উৎপাদন ও বাজারজাত করে। এ ক্ষেত্রে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো এনসিটিবিকে বইয়ের ওপর ‘রয়্যালিটি’ এবং রয়্যালিটির ওপর ভ্যাট প্রদান করে থাকে।

আরো জানা গেছে, চলতি বছর কলেজের একাদশ শ্রেণির প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য উল্লিখিত চারটি বই উৎপাদান ও বাজারজাত করার জন্য প্রায় চার-পাঁচ মাস আগে দরপত্র আহ্বান করে ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ওই সরকারের আমলে ছাপানো এসব বইয়ের বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) সংশোধন ও পরিমার্জন করে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে বই ছাপানোর প্রক্রিয়া থেমে যায়।

সংশোধন ও পরিমার্জনে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে ইতিমধ্যে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে গেলেও প্রধান বইগুলো ছাড়াই ক্লাস শুরু করতে হয় কলেজগুলোকে। এরপর বই ছাড়াই গত তিন মাস পড়াশোনা করছেন শিক্ষার্থীরা।

এনসিটিবি ও প্রকাশক সূত্রে জানা গেছে, উল্লিখিত বইগুলোর সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ শেষ করে প্রকাশকদের দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে সিডি প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিপূর্বে যে দরে কাজ নিয়েছিল, ইতিমধ্যে অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ায় দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে দর পুনর্নির্ধারণ করার দাবি ছিল।

এনসিটিবি-প্রকাশক বৈঠকে বিষয়টিসহ মোট সাড়ে আট লাখ বই ছাপার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৭ নভেম্বরের মধ্যে চুক্তি করে ছাপার কাজ শুরু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বইয়ের সংখ্যার সঙ্গে প্রেসগুলোর সক্ষমতার তুলনামূলক বিচারে আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে সব বই বাজারে চলে আসবে বলে আশা সূত্রের।

বইয়ের অভাবে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অসুবিধা হচ্ছে কি না জানতে একাধিক শিক্ষার্থী ও কলেজ প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছে রূপালী বাংলাদেশ।

ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, আত্মীয় ও পরিচিতজনের মাধ্যমে পুরনো বই সংগ্রহ করে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ জানিয়েছে, মূল বই না থাকলেও বাজারে সংশ্লিষ্ট বইয়ের নোট-গাইড বই পাওয়া যায়। সেগুলো দিয়েও পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বইয়ের অভাবে কলেজের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা পেছাতে হয়েছে মন্তব্য করে নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোশতাক আহমেদ ভুঁইয়া বলেন, আমাদের প্ল্যান ছিল দুর্গাপূজার পর ফার্স্ট ইয়ারের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার। কিন্তু বইয়ের অভাবে এটা পেছাতে হয়েছে। সংশোধন-পরিমার্জনের পর নতুন বইয়ে কী থাকতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা থাকলে কোর্স শেষ করতে সুবিধা হতো। তবে কী থাকতে পারে সে বিষয়ে সাধারণ একটি ধারণা থেকে আপাতত ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছি।
রাজধানীর ভাসানটেক সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. হান্নান মিয়া (সুদীপ্ত হান্নান) বইয়ের অভাব একটি সত্য বিষয়। তবে আমরা কলেজ থেকে বই দিয়ে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছি। তবে এক দিনের জন্য কষ্ট হলেও তো কষ্ট।

প্রয়োজনীয় কিছু সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য সময় লেগেছে মন্তব্য করে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দ্রুতই বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে। পাঠ্যসূচির বিষয়ে এনসিটিবির বৈঠকে আলোচনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

চলতি মাসের প্রথমার্ধেই শিক্ষার্থীরা বই পেয়ে যাবে জানিয়ে এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) প্রফেসর ড. রিয়াদ চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য সময় লেগেছে।

সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনসহ বইয়ের সার্বিক পরিবর্তনের দায়িত্বে রয়েছেন এনসিটিবি সদস্য (কারিকুলাম) প্রফেসর ড. রবিউল কবীর চৌধুরী।

রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, বিতর্কিত বিষয়গুলো বাদ দেওয়া ছাড়াও প্রধান তিনটি বইয়ে নতুন অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজি বইয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করা হয়েছে। পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি বিষয় নিয়েও সিদ্ধান্তের বিষয় ছিল। যার ফলে বই প্রস্তুত করায় সময় লেগেছে।

তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে বইয়ের সব কাজ শেষ করে সিডিও তৈরি করা হয়েছে। প্রেসগুলো যখন চাইবে তখনই ছাপানোর জন্য দেওয়া যাবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!