প্রাইভেট কারের বেপরোয়া গতি আর বাইকারদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট মহাসড়কটি।
বেপরোয়া গতিতে বাইক চলাচলের কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা আর প্রাণহানি ঘটছে এই সড়কে। ৩০০ ফিটের রাতের মায়াবী দৃশ্য বিমোহিত করে নগরবাসীকে। তাই পূর্বাচলের সেই সড়কটি দেখতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন অনেকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা যানবাহনের চাপ কমে যাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উচ্চ গতি ও স্ট্যান্ডবাজিতে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা মাদক সেবন করে ওই সড়কে দাপিয়ে বেড়ায়। অভিযোগ রয়েছে, তাদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হন ঘুরতে আসা তরুণীরা।
স্থানীয়দের দাবি, এই দুর্ঘটনা রোধ করতে না পারলে ম্লান হয়ে যাবে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্দেশ্য। তবে নাগরিক জীবনে স্বস্তি ও নিরাপদ সড়কের জন্য এ সড়কটিতে গত বৃহস্পতিবার রাতভর অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী।
ট্রাফিক পুলিশ, থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হয়। নিয়ন্ত্রণহীন অসংখ্য গাড়ি আটকা পড়ে ওই বিশেষ চেকপোস্টে। এক রাতেই জরিমানা করা হয় প্রায় তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া মামলা হয়েছে ১১৯টি। মাদকসহ অবৈধ দ্রব্য পরিবহনের দায়ে চারটি গাড়ি জব্দের কথাও জানায় সেনাবাহিনী। এদিকে ঢাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর এমন অভিযানে স্বস্তি প্রকাশ করেন সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করা বেশির ভাগ যাত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাতে নগরীর রাস্তাঘাট অনেকটা নীরব ও ফাঁকা থাকার সুযোগে যেন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বাইকাররা। এ সময় পূর্বাচলের ৩০০ ফিটে একদিকে চলে বাইকারদের বেপরোয়া গতির প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে নানান স্ট্যান্ডবাজি। এমনকি রাত ২-৩টা পর্যন্তও এমন দৃশ্য দেখা যায়। তবে সেনাবাহিনীর বিশেষ চেকপোস্টের কারণে গত বৃহস্পতিবারের রাতের দৃশ্য ছিল ভিন্ন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চেকপোস্টে বিশেষ করে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণ করে চেক করতে দেখা যায় সেনাবাহিনীকে। এ সময় বিভিন্ন গাড়িতে তল্লাশি চালান সেনাবাহিনীর সদস্যরা। লাইসেন্স কিংবা হেলমেটবিহীন যাত্রীদের করা হয় জরিমানাও। পুলিশ কিংবা গণমাধ্যম, ভিআইপি কিংবা দামি ব্র্যান্ডের গাড়িÑকোনোটিই বাদ যায়নি অভিযান থেকে। গণমাধ্যমের ভুয়া লোগো বহন করা গাড়িকে করা হয় জরিমানা।
দেখা গেছে, আট লেনের মহাসড়কটিতে দুই পাশে অর্থাৎ রাজধানীতে প্রবেশ এবং বাহিরÑদুই দিকেই বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হয়। প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে চেক করতে দেখা গেছে। দায়িত্বরতদের যেসব প্রাইভেট কার সন্দেহজনক মনে হয়েছে, সেসব গাড়ি থামিয়ে চালকের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া গাড়িতে কোনো অবৈধ মাদক বা অন্য কিছু আছে কি না তা তল্লাশি করেছেন দায়িত্বরতরা। কারও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, কেউ আবার মদ্যপ অবস্থায় চালাচ্ছেন গাড়ি। এমন নিয়ন্ত্রণহীন অসংখ্য গাড়ি আটকা পড়েছে সেনাবাহিনীর ওই চেকপোস্টে। তবে ঢাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এমন অভিযানে স্বস্তি প্রকাশ করেন বেশির ভাগ যাত্রী।
আব্দুর রহমান নামে প্রাইভেট কারচালক বলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই ধরনের চেকপোস্ট আমাদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। আমরা অবশ্যই তাদের ওয়েলকাম জানাই।
অপর এক পথচারী জানান, দেশের একটা উদ্ভূত পরিস্থিতির পরে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য এমন অভিযান খুবই দরকার ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন অভিযান অব্যাহত থাকলে আর আমরা যদি সচেতন হই তাহলে নিরাপদ থাকবে ঢাকা শহর।
সেনাবাহিনী বলছে, এই মহাসড়কটিতে আর যেন কোনো প্রাণ না ঝরে, সে লক্ষ্যে তাদের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। জরিমানা নয়, সচেতনতাই ছিল অভিযানের মূল উদ্দেশ্য।
উত্তরা আর্মি ক্যাম্পের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর আশিকুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত উত্তরা ও পূর্বাচল এলাকায় ৬১টি চেকপোস্টে অভিযানে ১৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এটা একটা যৌথ অভিযান। আমাদের মেইন উদ্দেশ্য হচ্ছে সড়কে ঊর্ধ্বগতিতে গাড়ি চালানো, সড়কপথে বিভিন্ন মাদক পাচার, গাড়ির ফিটনেস এবং অন্যান্য বৈধ লাইসেন্স থাকার কথা সেগুলো ছাড়া যারা চলাচল করছে তাদের সতর্ক করা। এ অভিযান নিয়মিত চলবে। আশা করি, এর মাধ্যমে সবার কাছে একটা ভালো বার্তা পৌঁছবে এবং স্বস্তি ফিরবে।
আপনার মতামত লিখুন :