ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪

ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার ৯৮ মামলার বিচার শুরু হয়েছে

মেহ্দী আজাদ মাসুম

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৪, ১২:৪২ এএম

ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার ৯৮ মামলার বিচার শুরু হয়েছে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন মাস আজ। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর পর সরকারের পতন ঘটে। এর তিন দিন পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ৮৭ দিনের নতুন এই সরকার স্বল্প সময়ে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। চেষ্টা করেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। বিচার শুরু করতে পেরেছে গণহত্যার। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে ৯৮ মামলা দায়ের হয়েছে পতনের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। সড়ক থেকে রক্তের দাগ শুকিয়ে গেলেও ক্ষত নিয়ে এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন হাজারো শিক্ষার্থী-জনতা। তবে এই সময়ে বাজার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে হিমশিম খেতে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর জনপ্রত্যাশার চাপও অনেক। পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিয়ে বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তার সফর ফলপ্রসূ হয়েছে। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় তার খ্যাতি ও পরিচিতিতে আশার আলো দেখছে দেশবাসী। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে শুরু করেছেন অনেকে। ৫ আগস্টের তাণ্ডবে মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর কাজীপাড়া স্টেশন দ্রুত সময়ে সংস্কার ও চালু হয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন চালু হয়েছে। পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। ঢাকায় বিমানবন্দর ও আশপাশ এলাকা হর্নমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ৫ টাকা কমানো হয়েছে পেট্রল ও অকটেনের দাম। তবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যোগ বিয়োগ মেলাতে পারছেন না কেউ কেউ।

ঘটনাবহুল এই ৯০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকার সামলে উঠার চেষ্টা করছে। কয়েকটি ঘটনায় বিব্রতও হয়েছে। এর মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষপদে রদবদল করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটগুলোতে এসেছে বড় পরিবর্তন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেককে বিতর্কিত উল্লেখ করে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। পোশাক খাত ও পাহাড়ে অস্থিরতা সরকারের জন্য ছিল বিব্রত। মব জাস্টিসের নামে বিচারবহির্ভূত ৪৯ হত্যাকাণ্ড দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। ছাত্র-জনতার হত্যার ঘটনায় গণমামলা ও নির্বিচারে আসামি করার ঘটনা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হুঁশিয়ারি দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে দুই শতাধিক খুনের মামলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী-এমপি সবার নামেই মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অনেকে আছেন রিমান্ডে। অনেক সাংবাদিককে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রথম সারির কয়েকজন সাংবাদিককে, যারা পতিত সরকারের দালালি করেছেন।

আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ভারত সরকারের আচরণ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, সিলেট-চট্টগ্রাম ও উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি সরকারকে বিচলিত করেছে। নিরাপত্তার দাবিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করায় আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি কেড়েছে।তবে এর পেছনে ষড়যন্ত্রও ছিল স্পষ্ট। 
সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন জায়গা থেকে একের পর এক দাবির ঝড় ওঠে। আনসার সদস্যরা সচিবালয়ের সামনে ও ভেতরে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এবং সচিবালয়ের সামনে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করে ডিএমপি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিকল্পে যৌথ অভিযান পরিচালনা ও সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

হাজারো ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে আওয়ামী সরকারের পতনের পর ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার গঠন করা সেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই হাসিনা ও তার পরিবারের বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এটিকে নিয়তির পরিহাস বলছেন সমাজ ও অপরাধ বিজ্ঞানীরা। গত ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যা-গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা ৯৮ মামলার বিচারকাজ।

আরবি/জেডআর

Link copied!