ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪

তোফায়েলের ‘সাম্রাজ্য’ এখন বিএনপির কব্জায়

শিমুল চৌধুরী, ভোলা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৪, ০১:০০ এএম

তোফায়েলের ‘সাম্রাজ্য’ এখন বিএনপির কব্জায়

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভোলায় একে একে দখল হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের দীর্ঘদিনের ‘সাম্রাজ্য’। ইতিমধ্যে জেলা বাস মালিক সমিতি, খেয়াঘাট, ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, ইলিশা ঘাট, বালু মহালের কর্তৃত্ব চলে গেছে বিএনপির কব্জায়।

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আর দখলের মতো ঘটনা ভোলায়ও ঘটেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টানা ১৬ বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত অনেক দখলদারির হাতবদল হয়েছে ইতিমধ্যেই। ভোলায় দীর্ঘ প্রায় অর্ধ শতাধিক বছর ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করা তোফায়েল আহমেদের সাম্রাজ্যে যেন এখন ধস নেমে এসেছে। যুগ যুগ ধরে ভোলার হাট-বাজার, ঘাট, বালু মহাল, টেন্ডার কার্যক্রম ও পরিবহন সেক্টরসহ বিভিন্ন দখলদারির নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের পালকপুত্র, ভাগ্নে-ভাতিজা ও তার অনুসারীরা।

এখন সেসব দখলদারির নেতৃত্ব নিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জহিরুল ইসলাম নকিব ছিলেন তোফায়েল আহমেদের একজন বিশ্বস্ত ও একনিষ্ঠ কর্মী। তিনি সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন একাধিকবার।

ভোলা খেয়াঘাটের নিয়ন্ত্রক ছিলেন এই নকিব চেয়ারম্যান। বালু মহালের নিয়ন্ত্রকও ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ নেতা। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে জহিরুল ইসলাম নকিব এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। তখন ভোলা খেয়াঘাটটি (ভোলা লঞ্চঘাট) দখলে নেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।

একইভাবে উৎখাত হন তার দখলকৃত বালু মহাল থেকেও। বালু মহালও দখলে নিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া ভোলা জেলা বাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে তোফায়েল আহমেদের ভাগ্নে ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলামকে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে তার স্থলাভিসিক্ত হন বিএনপি নেতা রিপন।

জানা গেছে, ৫ আগস্টের পরে বাস মালিক সমিতির সাধারণ মালিকরা একটি তলবি সভা ঢেকে নতুন কমিটি গঠন করেন। এতে সভাপতি করা হয়েছে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম খানকে। এর আগে ওই পদে ছিলেন তোফায়েল আহমেদের আস্থাভাজন আওয়ামী লীগ নেতা আকতার হোসেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বাচ্চু মোল্লা। তিনি সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। 

বাচ্চু মোল্লা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে তোফায়েল আহমেদ বিভিন্ন জায়গায় তার ভাগ্নে-ভাতিজা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বসিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আমি যখন ভোলা জেলা বাস মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলাম তখন তোফায়েল আহমেদ আমাকে অন্যায়ভাবে ওই পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে তার দলীয় লোককে বসিয়েছেন। তোফায়েল আহমেদের অনুসারী ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার্দী মাস্টার ছিলেন ইলিশা লঞ্চঘাটের দায়িত্বে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে তিনিও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ওই ঘাটটিও এখন বিএনপি নেতাকর্মীরা দখলে নিয়েছেন।

শুধু ভোলা খেয়াঘাট, ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট, ভেদুরিয়া ফেরিঘাট, ইলিশা লঞ্চঘাট আর বালু মহালই নয়, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের অনুসারীদের দখলে থাকা হাট-বাজার, টেন্ডার কার্যক্রম ও পরিবহন সেক্টর দখলে নিয়ে নেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। যদিও ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট ও ভেদুরিয়া ফেরিঘাট নতুনভাবে ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ ভোলা নদীবন্দর কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম।

ভোলার বিভিন্ন আর্থিক খাতসহ জেলার রাজনৈতিক মাঠও ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে তোফায়েলের। কোথাও তেমন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ নেতার পালকপুত্র, ভাগ্নে-ভাতিজাসহ তার আত্মীয় ও অনুসারীদের। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে তোফায়েল আহমেদ নিজেও উধাও হয়ে গেছেন।

তবে অনেকে বলছেন, প্রায় ৮৭ বছর বয়স্ক তোফায়েল আহমেদ বর্তমানে এমনিতেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া অসুস্থ হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে সবদিক থেকেই প্রায় শূন্য হয়ে গেছেন ভোলায় দীর্ঘ অর্ধ শতাধিক বছর ধরে দোর্দণ্ড প্রতাপের সাথে রাজনৈতিক মাঠে একক প্রভাব বিস্তার করা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ। তিনি ১৯৭৩ সালে ভোলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সপরিবার হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তোফায়েল আহমেদ শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী এবং ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হন।

গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ প্রায় ৮৭ বছর বয়সেও ভোলা সদর আসনের এমপি ছিলেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!