দেশের অর্থনীতির অন্তত তিনটি প্রধান সূচক-রপ্তানি, প্রবাসী আয় ও আমদানিতে গতি ফিরলেও দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ কমছেই না। বিশেষত, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে পারছে না অন্তবর্তী সরকার। ফলে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়েছে লাগামহীন। এক মাসের ব্যবধানে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ২ দশমিক ২৬ শতাংশ। মোটাদাগে গত আওয়ামী লীগ সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজারে যে সিন্ডিকেট রেখে গেছে, তা কোনোভাবেই দমানো যায়নি।
সিন্ডিকেট না ভেঙে উল্টো উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ক্রমশ বাড়ছে। ইতিমধ্যে সুদের হার প্রায় ১৬ শতাংশে উঠেছে। ঋণের নামে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার যেভাবে ব্যাংক লুটপাট করেছে, তাতে কয়েকটি ব্যাংকের কোমর প্রায় ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় শুরু হয়েছে ছাঁটাই আতঙ্ক। শেয়ারবাজারে রেকর্ড তলানির মধ্যে বৈদেশিক মাদ্রার রিজার্ভে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার তৃতীয় মাস আজ। এই সময়ে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে আসে নতুন নতুন নেতৃত্ব। আর্থিক খাতে চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগই বাতিল করেছে সরকার। রাজনৈতিক প্রকল্পে ব্যয় খতিয়ে দেখার পাশাপাশি অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে শ্বেতপত্র প্রণয়নে কমিটি গঠন করেছে সরকার। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের আর্থিক খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে কমিটি।
ইতিমধ্যে গত আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাটকারী শতাধিক মন্ত্রী-এমপি, দলীয় নেতা, সুবিধাভোগী সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকের নগদ টাকার সংকট সামাল দিতে ধারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা খুব বেশি আশা দেখায়নি। তবে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে বেশ উদ্যোগী হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশ্বের ১২টি দেশে ৭১টি চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (এফবিআই) চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসে কমিশন ও এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর মধ্যেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন দেখেছে দেশবাসী। সেপ্টেম্বর ও অক্টেবার মাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তৈরি পোশাক খাতে যে অস্থিরতা শুরু হয়, তা সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয় সরকারকে। জুলাই-আগস্টের ধাক্কা কাটিয়ে অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৯ শতাংশ। গতি ফিরেছে দেশের আমদানি খাতেও। তবে শেয়ারবাজারে নেওয়া একের পর সিদ্ধান্তে দরপতন যেভাবে শুরু হয়েছে, তা সামলে উঠতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
জানা গেছে, টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থেকেও অর্থনীতির রক্তক্ষরণ বন্ধে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব উদ্যোগ নিতে পারেনি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মধ্যেই সেসব উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বিশেষ করে আর্থিক খাতে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে ব্যাংক দখল করে নামে-বেনামে ঋণ নেওয়ার দিন শেষ হয়েছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতি আর আর্থিক খাতের পুনর্গঠনে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এ বিষয়ে পরিষ্কার একটি বার্তাও এসেছে অর্থনীতিবিষয়ক নেতৃত্বের কাছ থেকে। তবে নীতি সুদহার কিছুটা বাড়ানো ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এখনো বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় শিল্প খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি :
দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ কমছেই না। বিশেষত, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে পারছে না সরকার। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও অক্টোবরে তা আবার বেড়েছে। অক্টোবর মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ আর গত আগস্টে মাসে ছিল ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
অক্টোবরের তথ্যানুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে ১০০ টাকার খাদ্যপণ্যে ১২ টাকা ৬৬ পয়সা বাড়তি খরচ করতে হয়েছে ভোক্তাদের। অক্টোবরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়েছে, যা সেপ্টেম্বরে এক অঙ্কে নেমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ আর তার আগের মাস আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি নিয়ে চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে। বিবিএসের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে সাধারণ বা গড় মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, গত মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
অক্টোবরে বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন ও শিক্ষা উপকরণের দাম কিছুটা কমেছে। মাসটিতে এই খাতে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে গত জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে দেশে একধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। রাজধানী ঢাকা কার্যত সারা দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। স্থবিরতা নামে পণ্য সরবরাহে। এরই প্রভাবে জুলাইয়ে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল। দেশের ইতিহাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির এই হার অতীতে আর দেখা যায়নি। এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়েছিল, যা গত ১২ বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। এর আগে খাদ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যায় ২০১১ সালের অক্টোবরে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। ফলে অক্টোবর মাসে সাধারণ খাত ও খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।
উচ্চসুদে বিপাকে ব্যবসায়ীরা :
উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ক্রমশ বাড়ছে। ইতিমধ্যে সুদের হার প্রায় ১৬ শতাংশে উঠেছে। গত দেড় বছরের কম সময়ে সুদহার বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে সব ধরনের ঋণের সুদহার চলতি মাসে আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ছোট-বড় সব খাতের ব্যবসায়ীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ সুদের হার বৃদ্ধি মানে ঋণের কিস্তির অঙ্কও বাড়বে। এমনিতেই ডলার ও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শিল্পোৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় নতুন বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণে আস্থা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় ক্রমাগত সুদহার বাড়ায় নিদারুণ চাপে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে এরই মধ্যে কমে গেছে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা। বেসরকারি ঋণে চলছে ধীরগতি, বিনিয়োগে নেমে এসেছে একপ্রকার স্থবিরতা। এর প্রভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, বর্তমানে সুদের হার যে পর্যায়ে উঠেছে, তাতে ব্যবসা করে মুনাফা করা সম্ভব নয়। উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে ব্যবসায়ীদের। আবার ঋণ ফেরত দেওয়ার সক্ষমতাও কমছে। কারণ আমাদের সুদসহ ঋণ ফেরত দিতে হয়।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ছে:
প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ৮৯৪ কোটি ডলার দেশে এসেছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২০৬ কোটি ডলার বা ২৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২৩৯ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়ার ফলে ডলার বাজারে অস্বস্তি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর থেকে ডলারের দর ১২০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। এর আগে যেখানে প্রতি ডলার ১২৫ টাকা পর্যন্ত কিনতে হচ্ছিল। অবশ্য অতি সম্প্রতি খোলাবাজারে ডলারের দর কিছুটা বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বরে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) জুলাই-আগস্টের দায় বাবদ ১৩৭ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। তা বেড়ে অক্টোবর শেষে ১৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, গত কয়েক মাস ধরে রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। রপ্তানি আয়ও বাড়ছে, যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ বাড়ছে। ডলারের দরও স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থনীতির জন্য যা স্বস্তির খবর।
রাজনৈতিক প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনা করবে সরকার: গত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া সাতটি মেগা প্রকল্প বর্তমানে চলমান। এসব প্রকল্পে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে একমাত্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়া বাকি ছয়টি প্রকল্পের ৯১ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। তবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে এ রকম প্রকল্প নেওয়ার কী প্রয়োজনীয়তা ছিল এবং প্রকল্পগুলো যৌক্তিকভাবে নেওয়া হয়েছে কি নাÑ এসব পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর ব্যয় পর্যালোচনার কাজটি করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, বড় প্রকল্পগুলোর একটি মূল্যায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এই পর্যালোচনা শেষ হবে।
অস্থিরতা কাটিয়ে তৈরি পোশাক খাতে আয় বাড়ছে :
সরকারপতনের আন্দোলন ঘিরে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে আন্দোলন-সংঘাতে দেশে উৎপাদন ব্যাহত হয়। ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। এই সময়টাকে অর্থনীতির ‘ভয়ংকর সময়’ হিসেবে বলাবলি হচ্ছিল। এর মধ্যে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে গাজীপুর ও ঢাকার সাভারে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। একের পর এক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহতের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার বাতিলের তথ্য এসেছিল সরকারের তরফে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ যে হিসাব দিয়েছে, তাতে রপ্তানি আয় বাড়ার চিত্র ফুটে উঠেছে। তথ্যমতে, অক্টোবরের শুরুতে সংস্থাটি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস জুলাই-সেপ্টেম্বরে মোট ১ হাজার ১৩৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির তথ্য দিয়েছিল। আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৮২ কোটি ডলারের পণ্য। তাদের হিসাবেও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ শতাংশ, যা শূন্য দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার।
পাচারের অর্থ ফেরাতে একগুচ্ছ উদ্যোগ :
বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিশ্বের ১২টি দেশে ৭১টি চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ২৭টি চিঠির জবাব পেয়েছে সংস্থাটি। দুদক কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বে¦র ১২টি দেশে টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে দুদক। বিভিন্ন দেশে বাড়ি, গাড়ি ক্রয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগসহ ব্যাংকে টাকা রাখা হয়েছে। টাকা পাচার করা দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, সাইপ্রাস, জাপান, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া। যারা এসব দেশে টাকা পাঠিয়েছেন, তাদের বিষয়ে ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৭১টি এমএলএআর পাঠানো হয়েছে। গত এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (এফবিআই) চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসে কমিশন ও এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তারা পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রথম দফায় দুদক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পাচারের টাকা ফেরাতে উদ্যোগ নেবে। এ লক্ষ্যে সম্পদ বাজেয়াপ্তসংক্রান্ত আদালতের আদেশ এমএলএআরের (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট) মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পাঠানো হবে। এরপর ধাপে ধাপে আরও অর্ধশতাধিক প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী-এমপির পাচারকৃত সম্পদ দেশে ফেরত আনার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে অবৈধ অর্থ-সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫২ জনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ দুদকের হাতে রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জন সাবেক মন্ত্রী এবং ২২ জন সাবেক এমপি ও প্রভাবশালী রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :