ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

পাচারের অর্থ ফেরাতে ঢাকায় আসছে বিশ্বব্যাংক-যুক্তরাষ্ট্র

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৪, ১২:২৪ এএম

পাচারের অর্থ ফেরাতে ঢাকায়  আসছে বিশ্বব্যাংক-যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পাচারের অর্থ দেশে ফেরাতে তৎপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই অর্থ ফেরানোর আলোচনা করতে চলতি সপ্তাহে ঢাকা সফরে আসছেন বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ সরকারের কর্মকর্তারা। এসব অর্থ বৈধভাবে প্রত্যাবাসনের জন্য সম্ভাব্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তিসহ একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে সরকার।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল সোমবার প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। দৈনিক বণিক বার্তার আয়োজনে তৃতীয় বাংলাদেশ ইকোনমিক সামিটে সম্মেলনে গভর্নর বলেন, যারা বাংলাদেশ থেকে অর্থ নিয়ে বিদেশে পালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা চলছে। ব্রিটিশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের এসটিএআর-এর (স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি) প্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।আলাদাভাবে এ সপ্তাহে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও মার্কিন বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা আসবেন।

অর্থনৈতিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ংসহ অনেকে।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশ থেকে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সেসব দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে তাদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এখন সার্বিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গত রোববার এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। তবে যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তা নেবে বাংলাদেশ।

আহসান এইচ মনসুর জানান, বাংলাদেশে কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না। আমাদের গ্রোথ কমেনি। চার মাস পার করছি, মূল্যস্ফীতি কমাতে আমাকে আরও ৮ মাস সময় দিতে হবে। বিগত সময়ে ব্যাংক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দ্রুত সব সমাধান হবে না। কারণ এক ব্যাংকের ২৭ হাজার কোটি টাকার এসেট এক পরিবার ২৩ হাজার নিয়েছে, সেখানে আমার হাতে ম্যাজিক নেই। তবে কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না, এটা বলতে পারি। দুর্বল ব্যাংকে টাকা তুলতে পারছে না এ কারণে তাদের তারল্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সব সমাধানও হয়ে যাবে।

পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সিঙ্গাপুরকে যুক্ত করতে বাংলাদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদি বিদেশে অর্থ পাচার হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠায় কাজ করব। আমরা বৈধ উপায়ে টাকা ফেরত আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

সম্মেলনে অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্র-জনতা আমাদের কিছু দায়িত্ব দিয়েছে। সেটুকু আমরা যথাসম্ভব পালন করার চেষ্টা করছি। আমাদের কারও কোনো ব্যক্তিগত অ্যাজেন্ডা নেই। অ্যাজেন্ডা হচ্ছে দেশের স্বার্থ। যা কিছু করা হচ্ছে তা দেশের স্বার্থেই করা হচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, আমরা কাজগুলোকে ৩টি ধাপে ভাগ করেছি। স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কাজ। আমরা হয়তো মধ্যমেয়াদি কাজ শুরু করতে পারব। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কাজগুলো পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার করবেন। তবে আমরা কিছু কিছু দীর্ঘমেয়াদি কাজও করার চেষ্টা করব। দেশের অর্থনীতির ভালোর জন্য যে গবেষণাগুলো হয়েছে, সেগুলো প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গরিব মানুষজন সুযোগের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, গ্রামের অনেক মানুষই জানেন না সরকারি সুযোগগুলো কোথায় পাওয়া যাবে। 

তারা সুযোগের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আবার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও বৈষম্য হচ্ছে। যোগ্য পরিচালকের অভাবে বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান অনেক দুর্বল হয়েছে। কারণ, সেগুলো চালাতে সময়মতো ভালো লোক দেওয়া হয়নি। আবার তারা প্রফেশনাল জায়গাগুলোতে নন প্রফেশনাল কন্সিডারেশনও হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের সিস্টেমগুলোও কাক্সিক্ষত মাত্রায় অটোমেশন হয়নি বলেন তিনি।

নগদে ফরেনসিক অডিট হবে: নিয়মবহির্ভূতভাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে কার্যক্রমে আসা নগদে গত ২১ আগস্ট প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রশাসকের আবেদনের ভিত্তিতে ফরেনসিক অডিট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ। এ অডিটের মাধ্যমে নগদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কী পরিমাণ জাল ই-মানি ছাড়া হয়েছে, শেল কোম্পানির আড়ালে বিদেশি পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ দেখানো, নগদের মালিকানায় ডাক বিভাগের নাম ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তারা।

আরবি/জেডআর

Link copied!