ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪
২৫০ কোটি টাকার রেলপথ

উদ্বোধনের এক বছরেও চালু হয়নি কার্যক্রম

মো. বাবুল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৪, ১২:৫৩ এএম

উদ্বোধনের এক বছরেও চালু হয়নি কার্যক্রম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রেলপথে আন্তর্দেশীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ। বহুল কাক্সিক্ষত এই রেলপথ উদ্বোধনের এক বছরেও শুরু হয়নি ট্রেন চলাচল। ফলে উদ্বোধনের পরেও পড়ে আছে রেলপথটি।

এ ছাড়া দেশে বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে শিগগিরই শুরু হচ্ছে না আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কার্যক্রম। যদিও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জেলার আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। আন্তর্দেশীয় এই রেলপথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে পড়েছে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার। ২৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ অংশের নির্মাণকাজ করেছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। করোনা মহামারিসহ নানা সংকটে দেড় বছরের এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে ছয় বছরেরও বেশি।

রেলপথ পুরোপুরি প্রস্তুত থাকায় কয়েক দফার ট্রায়াল রান শেষে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সে বহুল কাক্সিক্ষত আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে তখনও ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ভবন, প্ল্যাটফরম এবং সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এর মধ্যে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এই রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে অর্ধশতাধিক পণ্য আমদানি এবং সব ধরনের পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

অবশেষে চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পুরোপুরি শেষ হয়েছে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের নির্মাণকাজ। চলতি মাসেই প্রকল্পটি সরকারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ভাস্কর বকশি জানান, বিভিন্ন সংকটে প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছে। তবে কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। ফলে এখন প্রকল্পটি সরকারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ-সংক্রান্ত চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

তবে উদ্বোধনের এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও ট্রেন চলছে না আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ দিয়ে। ফলে বাণিজ্যও শুরু করা যাচ্ছে না। কবে নাগাদ ট্রেন চলবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য নেই প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের কাছে।

এদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে রেলপথটি নির্মিত হলেও কার্যত এটি ব্যবহৃত হবে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনে। উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে কলকাতা বা অন্য রাজ্যগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি। এতে করে পণ্য পরিবহনে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি খরচও হয় বেশি। মূলত ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এই রেলপথ দিয়ে নিজেদের পণ্য পরিবহন করবেন। এতে করে তাদের ব্যবসায়ীরা বেশি লাভবান হবেন। এ ছাড়া আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণও কমবে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক রাজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের পণ্য রপ্তানি কমেছে। বর্তমানে যে কয়েকটি পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হয়, তার মধ্যে অন্যতম রড ও সিমেন্ট। মূলত ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা এ দুই পণ্যে তাদের অন্য রাজ্য থেকে আনতে গেলে খরচ পড়ে বেশি। ফলে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেন। তবে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ ব্যবহার করে কম খরচে ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা রড ও সিমেন্টের মতো চাহিদাসম্পন্ন পণ্যগুলো পরিবহন করতে পারবেন। এতে করে রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসিবুল হাসান জানান, রেলপথ দিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য খুব বেশি বাড়বে না। তবে পণ্য আমদানির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব। যদি সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে যখন যে পণ্যের চাহিদা, সেই পণ্য রেলে কম খরচে আমদানি করে ব্যবসায়ীরা মুনাফা করতে পারবেন। এতে সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রূহি বলেন, কখন রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলবে সেটি সরকারি সিদ্ধান্ত। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্য শুরুর বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি হস্তান্তর করলে তখন বাণিজ্য শুরুর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে এবং সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে একটি সিদ্ধান্ত আসবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!