ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

বিমানের ট্রাফিক বিভাগ বদলি ও পদায়নে স্বেচ্ছাচারিতা

মাইনুল হক ভূঁইয়া ও দেলোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৪, ১১:৩২ পিএম

বিমানের ট্রাফিক বিভাগ বদলি ও পদায়নে স্বেচ্ছাচারিতা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

*শাহজাহান, শামীমা, ইউসুফকে রিয়াদ ও কানাডায় পদায়নের পাঁয়তারা
*মানব পাচারকারি হিসেবে ইউসুফ জেল খেটেছেন ৪ বছর


বিমানের ট্রাফিক বিভাগে বদলি, পদায়ন নিয়ে ফের স্বেচ্ছাচিরতা শুরু হয়েছে। চিন্তা-ভাবনা না করে যোগ্যদের পাশ কাটিয়ে তদবিরবাজদের বদলি ও পদায়নের ধুম পড়েছে। তদবিরের শীর্ষে রয়েছেন শাহজাহান-শামীমা দম্পতি এবং জুনিয়র ট্রাফিক অফিসার ইউসুফ। 

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা তিনজনই ভোল পাল্টাতে শুরু করেছেন। জুনিয়র ট্রাফিক অফিসার আবু ইউসুফ মানব পাচারের দায়ে চার বছর জেল খাটলেও তাকে এক স্টেশনেই চার বছর ধরে রাখা হয়েছে। এখন তাকে আবার বিমানের সবচেয়ে লাভজনক স্টেশন রিয়াদে পোস্টিং দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে।

এই ইউসুফ কখনো বিএনপি ঘরানার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভোল পাল্টে সগর্বে তিনি নিজেকে বিএনপি করার কথা জাহির করছেন।

এছাড়া একজন মানব পাচারকারী হিসেবেও তিনি পরিচিত বিমানের ট্রাফিক বিভাগে। বিমানে দায়িত্বরত বিভিন্ন এজেন্সিকে ম্যানেজ করে মানব পাচারের অভিযোগে জেলও খেটেছেন।

জানা গেছে, প্রতিবারই তার স্ত্রী গণভবনে ছোটাছুটি করে তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনতেন। জেল থেকে বেরিয়ে আবার তিনি ট্রাফিকে যোগ দেন। ইউসুফ তদবিরে যেমন এক নম্বর, তেমনি রূঢ় আচরণেও এক নম্বর বলে ব্যাপক আলোচনা আছে। ট্রাফিকের কোনো সিনিয়র কর্মকর্তা তার সঙ্গে পারতপক্ষে কথা বলেন না। ইদানীং ইউসুফ ট্রাফিক এবং অন্যান্য শাখার সংখ্যালঘুদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে তাদের অহরহ বিরক্ত করছেন। তন্ময় নামের এক কর্মকর্তাকে অপমানের অভিযোগও পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। অথচ এই তন্ময় এত ভদ্র যে, সংখ্যালঘুর কোনো ছাপ পাওয়া যায় না তার কর্মক্ষেত্রে। পাশাপাশি তন্ময় খুবই দক্ষ বলে জানান তার সহকর্মীরা।

এদিকে ইউসুফের বিরুদ্ধে নানা গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও তাকে রিয়াদে পোস্টিং দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।

এ বিষয়ে বিমানের সাবেক এক কর্মকর্তা জানান, রিয়াদের পোস্টিংটি গুরুত্বপূর্ণ, বিমানের অধিক লাভজনক একটি উচ্চ বাজেটের স্থান। এখানে কাউকে পোস্টিং দিতে হলে অবশ্যই সৎ এবং যোগ্যকে দেওয়া উচিত। ইউসুফের মধ্যে এর কোনোটাই নেই। যেসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব পদে পোস্টিংয়ে পাঠান, সেখানে তদবির ছাড়া পোস্টিং দিতে পারেন না বলে রেওয়াজ রয়েছে। ইউসুফই তার প্রমাণ।

আরো জানা গেছে, সিঙ্গাপুর ও লন্ডন স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে একই লোক বসে আছেন। অন্যদিকে শাহজাহান নামের এক ট্রাফিক অফিসার অপেক্ষায় আছেন কখন তিনি কুয়েতের পোস্টিং ছেড়ে কানাডায় যাবেন। তার স্ত্রী শামীমাও একই তদবিরে ব্যস্ত। বর্তমানে এই ইউসুফ, শামীমা ও শাহজাহান ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রাজনৈতিক দল পরিবর্তন নিয়ে। তারা এখন নিজেদেরকে ‘বিএনপি ঘরানার’ হিসেবে পরিচিত করাতে ব্যস্ত। আর এই পরিচয়ের সুবাদে যদি কুয়েত থেকে কানাডায় যাওয়া যায়, তাহলে মন্দ কি! কারণ শামীমা, শাহজাহান, ইউসুফরা বিমানের সব কর্মকর্তারই কমন ভাই-ভাবি। কিছুদিন আগেও শামীমা-শাহজাহানকে সাবেক সাংসদ মাহবুব আরা গিনি ও সেলিনা খাতুনকে (সবাই শেখ হাসিনার আত্মীয়) বিমানে তুলে দিতে দেখা গেছে। আগস্ট বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের অতীতটাও তারা বদলে ফেলছেন রাতারাতি।

আরবি/জেডআর

Link copied!