ভোগ্যপণ্য হিসেবে চালের দাম বাড়লে আমদানির ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুল্ক প্রত্যাহার করে ১৯ মাস পরে ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত সোমবার প্রথম চাল আমদানি শুরু হয়। তবে এরপরই অপ্রত্যাশিতভাবে আমদানিতে আগ্রহ কমে ব্যবসায়ীদের। কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে আমন ধানের বাম্পার ফলন। আগাম আমন ধানের চাল বাজারে এলে দাম ভোক্তার সহনীয় হবে বলে মনে করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, সরকার সাড়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টনের এলসি খোলা হয়েছে। আমরা ১৩৪ ব্যবসায়ীকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছি। অন্যদিকে, সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক নেতার চালকল বন্ধ থাকায় বাজারে সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে চালের দাম এখনো কমছে না।
রাজধানীর খাদ্য ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার আমন ধান সংগ্রহ কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মাসুদুল হাসান বলেন, আমন মৌসুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে। বাজারে নতুন ধান আসতে শুরু করলে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে। যে কারণে ব্যবসায়ীরা এ মুহূর্তে চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলে বন্যাসহ একাধিক বন্যায় চালের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় প্রথমে বলেছিল উৎপাদন কমবে ১০ লাখ টন। পরে জানিয়েছে, এটি হয়তো ৬-৭ লাখ টনের মতো হবে। এজন্য আমরা দ্রুত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করি। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চাল আমদানির ওপর শূন্য শুল্ক আনা হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, উত্তরাঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলনের কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। উৎপাদন ভালো হলে আমরা হয়তো কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকব।
আলী ইমাম মজুমদার আরও বলেন, কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কৃষক যেন ফেয়ার প্রাইস বা ন্যায্যমূল্য পান, সেজন্য আমরা ধানের সংগ্রহ মূল্য বাড়িয়েছি। আগামী রোববার থেকে উত্তরাঞ্চলে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু হবে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম অনেক বেশি। তিনি বলেন, খাদ্য মজুতে আমরা খুব বেশি কমফোর্ট জোনে না থাকলেও মজুত বাড়াতে দ্রুত আমন ধান ও চাল কেনা শুরু করছি। একই সঙ্গে আমদানিও দ্রুত করা হবে। বর্তমানে সরকারের কাছে ১২ লাখ ৮৮ হাজার টন খাদ্যের মজুত রয়েছে।
বাজারে চালের চড়া দাম ভোক্তাকে চাপে রাখলেও সরকারি ব্যবস্থাপনাগুলো এটি সহনীয় করতে কাজ করছে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমিও মধ্যবিত্ত, নিজেই বাজার করি। আমিও চাপে আছি। কারণ, গত বন্যায় কৃষকের অনেক শীতকালীন সবজিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় সীমিত আয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে অন্তর্বর্তী সরকার চারটি পণ্য আমদানি শুল্ক কমিয়ে দাম সহনীয় করতে চেষ্টা চালায়। তবে বাজার অব্যবস্থাপনা, অসম প্রতিযোগিতা, জোগানের অসমতা ও পরিদর্শনের ঘাটতির কারণে সুফল মিলছে না।
আপনার মতামত লিখুন :