ঢাকা শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

কেউ জানে না কবে খুলবে চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ০১:২৩ এএম

কেউ জানে না কবে খুলবে চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চলতি বছর ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগেই আওয়ামী সরকারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দেখাতে নির্বাচনের মাত্র দুই মাস আগে গত বছর ১৪ নভেম্বর তড়িগড়ি করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর এক মাসের মধ্যে পরিপূর্ণ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা ছিল। তবে বছর পেরিয়ে গেলেও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়নি কাক্সিক্ষত সেই এক্সপ্রেসওয়ে। কবে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে তাও জানে না চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। 

সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের অভিমত, উন্নয়নের ঢোল পেটাতে র‌্যাম্প ও টোলপ্লাজা নির্মাণের আগেই উদ্বোধন করা হয়েছিল ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে। র‌্যাম্প নির্মাণের আগে এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দিলেও পুরোপুরি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না ব্যবহারকারীরা। যে কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে সরকার।

তবে সিডিএ’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, টোলহার নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। টোলহার নির্ধারণ হয়ে গেলেই যান চলাচলের জন্য এক্সপ্রেসওয়ে উন্মুক্ত করে দিব। কবে নাগাদ উন্মুক্ত হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।

নগর পরিকল্পনাবিদদের দাবি, প্রথম থেকেই পরিকল্পনার অভাব ছিল সিডিএ’র। যে কারণে র‌্যাম্প নির্মাণে বারবার ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের। পরিবর্তন করতে হয়েছে র‌্যাম্প লোকেশন।

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, কর্ণফুলী টানেলের মতো এক্সপ্রেসওয়েতেও পরিকল্পনার যথেষ্ট অভাব ছিল সিডিএ’র। যে কারণে বারবার পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পতেঙ্গা থেকে লালখানবাজার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাজ শেষ হলেও এখনো চলমান রয়েছে র‌্যাম্প নির্মাণ।

মূল পরিকল্পনায় এক্সপ্রেসওয়েতে ২৪টি র‌্যাম্প থাকার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ১৪টি র‌্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিডিএ। তবে সরকার পরিবর্তনের পর সে পরিকল্পনা থেকে সরে এসে আপাতত ৯টি র‌্যাম্প নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সিডিএ’র প্রকল্প বাস্তবায়নকারী নবগঠিত বোর্ড। ৫টির কাজ আপাতত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ।প্রকল্প বাস্তবায়নকারী নবগঠিত বোর্ডের প্রথম সভায় এই সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়।

বোর্ডসভায় উপস্থিত সদস্যরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুর্নীতি করার জন্যই বাজেট বাড়াতে অপরিকল্পিত র‌্যাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

সিডিএ সূত্র জানায়, নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। একই সময়ে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে চার হাজার ৩৬৯ কোটি সাত লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়।

সিডিএ’র এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র‌্যাংকিন। প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ৫৪ ফুট প্রশস্ত এবং চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বর্তমানে ৯টি র‌্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!