ঢাকা শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

সিলেটে ডেঙ্গুর তিন কারণ

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ০১:২৭ এএম

সিলেটে ডেঙ্গুর তিন কারণ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতার অভাব, মশক নিধনে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করাÑ সিলেটে ডেঙ্গু বাড়ার পেছনে এই তিন কারণকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, সিলেট এক সময় নিরাপদই ছিল। সারা দেশে যখন ডেঙ্গু রোগীর দেখা মিলছিল, তখন সিলেটে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু সেই সিলেটে এখন আতঙ্কের অপর নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। হাসপাতালে ভর্তি আছেন অসংখ্য রোগী। তারা লড়ছেন ডেঙ্গুর সঙ্গে।

সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি ২০২৪ সালের শুরু থেকে গত ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২২৯ জন। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেট জেলায় ৫৬ জন, সুনামগঞ্জে ২৮, মৌলভীবাজারে ১৫ এবং হবিগঞ্জে ১২৬ জন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মুনিম সাজু বলেন, সিলেটে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ এখন জনসচেতনতার অভাব। গত কয়েক বছর আগে এই ভাইরাস যখন ঢাকায় ভয়াবহ, তখনো সিলেট ছিল নিরাপদ। কিন্তু ঢাকা থেকে বাহকের শরীরে করে এই ভাইরাস সিলেটে এসে ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, আক্রান্ত হওয়ার পর যথাসময়ে চিকিৎসার আওতায় আসতে না পারার কারণে ডেঙ্গু রোগীকে বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন-সিসিক সূত্র জানিয়েছে, গত এক বছর ধরে সিলেট মহানগরীতে মশকনিধন কার্যক্রম বন্ধ। আর্থিক ও ওষুধ সংকটের কারণে মশা নিধনে মাঠে নামতে পারছে না সিসিক। ওষুধের মজুত শূন্যের কোটায়। বিষয়টি স্বীকার করেছেন সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম। বলেন, নানা কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে পরিষদে আলোচনা করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে সিসিক নতুন করে ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা করছি।

সিসিক জানায়, অর্থের পাশাপাশি জনবলের সংকট থাকায় মহানগরীর ৪২টি ওয়ার্ডে মশকনিধন কার্যক্রম কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারছে না তারা। তবে অল্পকিছু এলাকায় এডিসের লার্ভা খুঁজতে গিয়ে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। 

প্রয়োজনীয় জনবল ও মশার ওষুধের চাহিদাপত্র চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে সিটি করপোরেশন।

এদিকে সংকটে থাকা সিসিক বসে থাকলেও সিলেটে ডেঙ্গু আতঙ্ক থেমে নেই। সারা দেশে প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিলেট মহানগরীতেও এখন ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। এতে বাড়ছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। পুরো বিভাগে চলতি মাসে ৬০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমানে ১৪ জন  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে সিলেটে এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কেউ মারা যাননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জেলা হবিগঞ্জ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই জেলার সদর হাসপাতালে ৩ জন, লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন ও বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন রোগী ভর্তি আছেন। এ ছাড়া সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন, সিলেট মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ১ জন ভর্তি আছেন।
সিলেট নগরীতে মশার উপদ্রব বর্তমানে ভয়াবহ। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। দিনের বেলাও মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে বা অ্যারোসল স্প্রে করেও মশা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। এ সময়টিতেই এডিস মশার বিস্তার ঘটে। এবার সেই প্রকোপ নভেম্বরে এসে আরও বাড়ছে। তারা বলছেন, ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে প্রতিরোধই মোক্ষম অস্ত্র। এছাড়া কার্যত আর কোনো উপায় নেই। এজন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। যেখানে পানি জমে, সেখানে মশার আবাসস্থল হয়ে ওঠে সেখানে মশার বিস্তার যেন না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ঘুমানোর আগে অবশ্যই মশারি টানাতে হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!