ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
সিলেট সিটি করপোরেশন

অনেক পাম্প বন্ধ ও নষ্ট পানির সংকটে নগরবাসী

আব্দুল আহাদ, সিলেট

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম

অনেক পাম্প বন্ধ ও নষ্ট পানির সংকটে নগরবাসী

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ১৪টি পানির পাম্প বন্ধ রয়েছে। কয়েকটি একেবারেই নষ্ট। কয়েকটি মাঝে মধ্যে সচল হয়। বাকি যে কয়টি পাম্প আছে, সেগুলো দিয়ে নগরবাসীর চাহিদা অনুযায়ী পানির সরবরাহ করতে পারছে না সিসিক। দীর্ঘদিন এ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

এদিকে যে কয়েকটি পাম্প সচল আছে সেগুলোও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। কোনো রকমে সার্ভিসে থাকলেও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে সুপেয় পানির সংকটে দিন পার করতে হচ্ছে সিলেট নগরবাসীকে। এ নিয়ে নিয়মিত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। কয়েকটি ওয়ার্ডে তো রীতিমতো পানির জন্য হাহাকার করছেন বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) রনোধীর রয় বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় পানির চাহিদা প্রায় ৮০ কোটি লিটার। এর মধ্যে ৮টি পানির পাম্প দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ছয়টির মতো পানির পাম্প প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে পারছে না। তবে নতুন তিনটি পাম্প বসানোর কাজ চলমান। শুষ্ক মৌসুমে নগরীর
বিভিন্ন এলাকায় পানির লেয়ার নেমে যাওয়ার কারণে সেসব এলাকার বাসিন্দাদের পানি সংকট ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, নতুন নতুন এলাকা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হয়েছে। তাই এসব এলাকায় ক্রমান্বয়ে নাগরিক সমস্যা দূর করার পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।

সিসিক জানায়, সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টিতে পানির পাম্প বা গভীর নলকূপ রয়েছে ৫৩টি। তবে নতুন করে সিসিকের সঙ্গে সংযুক্ত ১৫টি ওয়ার্ডে কোনো পানির পাম্প নেই। এসব এলাকায় এখনো টানা হয়নি পানির সাপ্লাই লাইন। সেসব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবি, সিটি করপোরেশনের সব ধরনের কর, ফি দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু সিসিকের কোনো সুযোগ-সুবিধা আমরা পাচ্ছি না।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সিলেট সিটি করপোরেশনের পানির পাম্প অকোজো হয়ে পড়ে থাকলেও সেগুলো সংস্কার বা পুনরায় স্থাপনের কোনো পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অথচ বাসিন্দাদের কাছ থেকে পানির বিল বাবদ প্রতি মাসে নেওয়া হয় ২০০ টাকা। সময়মতো সিটি কর দিলেও দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
কোনো কোনো এলাকায় একেবারেই পানির সরবরাহ নেই। আবার কয়েকটি এলাকায় পানির সরবরাহ থাকলেও তা খুব সীমিত পরিসরে। তা ছাড়া সাপ্লাই লাইনের পানি নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত বলেও অভিযোগ গ্রাহকদের। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফয়ছল আহমদ বলেন, ‘প্রতি তিন মাস পর পর ৬০০ টাকা পানির বিল পরিশোধ করি। অথচ সাপ্লাই পানির লাইনে ঠিকমতো পানি পাই না। দিনের অধিকাংশ সময় টিপ টিপ করে পানি আসে। সামনে শুষ্ক মৌসুম আসছে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। আবার অনেক সময় নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত পানি সাপ্লাই লাইনে
চলে আসে, এতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।’ 

ছড়ার পাড় এলাকার বাসিন্দা মো. জুনায়েদ আহমদ বলেন, বিগত দিনে যারা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর ছিলেন তাদের বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে সিসিকের অধিকাংশ পানির পাম্প অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এগুলো দ্রুত সংস্কার বা সচল না করলে এবং নতুন এলাকাগুলোতে পানির পাম্প বা গভীর নলকূপ স্থাপন না করা হলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়বেন নগরবাসী।

অভিযোগ উঠেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে সিলেটে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করতে কোনো কোনো এলাকায় একের অধিক পানির পাম্প স্থাপন করেছেন। এদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতেই নেই পানির পাম্প। থাকলেও তা অচল বা আংশিক সচল। অথচ কোনো কোনো ওয়ার্ডে তিনটি-চারটি করেও পানির পাম্প আছে। এসব পানির পাম্প ও নামমাত্র সংযোগ দিয়ে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিগত ১৫ বছরে সিলেটে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালন করা সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলররা।

সিসিকের দেওয়া তথ্য মতে, নগরীর পাঠানটুলা, বাগবাড়ি (বর্ণমালা স্কুলের ভেতরে), সাগরদিঘির পাড় ডিপিএইচ-১ ও ডিপিএইচ-২, পুলিশ লাইন, দর্শন দেউড়ি, চাষনীপীর, তোপখানা পানি শোধনাগারসহ মোট আটটি পানির পাম্প দীর্ঘদিন ধরে অকেজো বা সম্পূর্ণ বিকল অবস্থায় পড়ে আছে।

এদিকে নগরীর পিটিআই স্কুলের পাম্প, সাগরদিঘির পাড় মৎস্য অফিসসংলগ্ন পাম্প, আনসার ক্যাম্প পাম্প, নয়াসড়ক খিষ্ট্রান টিলা পাম্প, শাহ মিরাজী (রা:) মাজার পাম্প, ছড়ার পাড় পাম্পসহ মোট ছয়টি পানির পাম্প প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে পারছে না।

পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম বলেন, মেয়র ও কাউন্সিলর হিসেবে যারা গত ১৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য যেখানে সেখানে নামমাত্র পানির পাম্প, আবার কোথাও কোথাও একের অধিক পানির পাম্প স্থাপন করেছেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নগরবাসীর বড় দুর্ভোগকে পুঁজি করে নিজেদের পকেট ভর্তি করা।

সিলেট সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) রনোধীর রয় এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিভিন্ন সময়ে মেরামত করা হয়। কিন্তু চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় স্থায়ী সমাধান মিলছে না। আবার নতুন নতুন এলাকা সিসিকের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়াতে সমস্যাটা আরও বেড়েছে। এক্ষেত্রে নতুন করে পানির পাম্প ও সাপ্লাই লাইন স্থাপন করা প্রয়োজন। অকেজো ও
মৃত পানির পাম্পগুলো নতুন করে প্রতিস্থাপন এবং সংস্কারের জন্য নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন এই প্রকৌশলী।

আরবি/জেডআর

Link copied!