বোতলজাত ভোজ্যতেল প্রতি লিটারের মূল্য ১৬৫ টাকা। মোড়ক খুলে সেই তেল খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। অর্থাৎ বোতল খুলে পাম অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করলেই লিটারে আয় ৩০ টাকা। ঢাকার অধিকাংশ বাজারের দোকানগুলোতে খুচরা বিক্রি করছেন অনেক ব্যবসায়ী।
ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিনের চেয়ে পাম অয়েলের চাহিদা বেশি। তবুও নিম্নবিত্তের ক্রেতারা সেই পাম অয়েলেই বেশি আগ্রহী। বোতলজাত তেল তাদের অনেকেই ক্রয়ে অনিচ্ছুক। ফলে মুনাফা এবং বাণিজ্য সুবিধা নিতে মানব স্বাস্থ্যের দিকে না তাকিয়ে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন কিছু মুনাফালোভী বিক্রেতা। সয়াবিনের বদলে পাম অয়েলের চাহিদা সম্পর্কে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের বিক্রেতা শামীমুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই কৃতিত্ব কৃষি উন্নয়ন অধিদপ্তরের। ৫-৭ বছর আগে তারা গ্রামে অনেক পাম গাছ রোপণ করে এবং জনগণকে দারুণভাবে উৎসাহিত করে; এটা তারই ফল। তবে তার নামে কি খাচ্ছে, সেটি আলাদা বিষয়।
তিনি আরও বলেন, বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটারের নির্ধারিত দাম ১৬৫ টাকা। অন্যদিকে প্রতি কেজি পাম অয়েল ১৮৬-১৯০ টাকায় কিনছেন গ্রাহক। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে ভোগ্যপণ্যের দাম অনেক বেড়েছে। তারই ঢেউ লেগেছে তেলের বাজারে। তিন মাসে প্রতি কেজি পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৬০ টাকা। তবে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যবসায়ীদের অন্তর্বর্তী সরকারকে অসহযোগিতাকেই বড় করে দেখছেন। অন্যদিকে সরকারের বাজার পর্যবেক্ষণের দুর্বলতাকেও দুষছেন অন্য একটি পক্ষ। তবে বাজারে জোগান এবং চাহিদার সমন্বয় থাকলেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দায়ী বলে মনে করেন তারা।
পাম অয়েলের চাহিদা সম্পর্কে ঢাকার মগবাজারের আব্দুর রাজ্জাক স্টোরের স্বত্বাধিকারী মেহেদী হাসান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সরবরাহ ঠিক আছে। গত তিন মাস ধরে পাম অয়েলের দাম বাড়ছেই। দাম বাড়লেও ক্রেতারা এখন আর সয়াবিন তেল নিতে চান না। ১৬৫ টাকায় এক লিটার সয়াবিন না কিনে ১৯০ টাকায় এক কেজি পাম অয়েল নেন তারা। বাজার পর্যবেক্ষণে গতকাল শনিবার দেখা গেছে, পাম অয়েলের ১৮৪ কেজি (লিটার নয়) এক কন্টেইনার হিসেবে ধরা হয়। জুলাইয়ের শেষে প্রতি কেজি ১৩৭ টাকা হিসাবে প্রতি কন্টেইনারের দাম ছিল ২৫ হাজার ২০৮ টাকা। তিন মাস পরে তা বেড়ে গতকাল প্রতি কেজির দাম হয়েছে ১৮২ টাকা।
দুই মাস আগেও প্রতি কন্টেইনারের মূল্য ৩০ হাজার ৩৬০ টাকা। দুই মাস আগে প্রতি কেজিতে ছিল ২৮ টাকা। এখন তা আরও বেড়ে ১৮২ টাকা কেজি হিসেবে প্রতি কন্টেইনারের মূল্য ৩৩ হাজার টাকা। মূলধনের সঙ্গে ব্যবসায়িক অন্যসব খরচ যুক্ত করে ১৮৬-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাম অয়েল। যা সয়াবিন তেলের চেয়ে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পাম অয়েল। দাম বাড়ার কারণসহ অন্যান্য তথ্য জানতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হককে গতকাল সন্ধ্যায় ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। তার হোয়াটস অ্যাপে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগগুলো সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়া হলেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।
তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, অজস্র সীমাবদ্ধতা নিয়ে অসীম সমুদ্রের বাজারে টেকা যায় না। প্রথমত, আমাদের জনবল অনেক কম। কাজেই ইচ্ছা থাকলেও আমরা বাজারে সেই সাপোর্ট দিতে পারছি না, বলেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :