রাজধানীর উত্তরা আজিমপুর রেলগেট এলাকায় অনুমোদনহীন রোকেয়া ক্লিনিক চলছে অনিয়মের মধ্যে। এলাকাবাসীর দাবি, প্রায়ই রোগীর স্বজনরা ক্লিনিকের নিচে উচ্চৈঃস্বরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে গালমন্দ করেন। স্বজনদের দাবি, ডাক্তার সব সময় এই ক্লিনিকে থাকে না। রোগীর কোনো সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তার কল করে আনা হয়।
এক রোগীর স্বজন মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার রোগীর বাচ্চা প্রসবের বিষয়ে এই ক্লিনিকের সাথে চুক্তি করা হয়। ১২ হাজার টাকার মধ্যে সব কিছু কমপ্লিট করে দেবে, কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিল করা হয় ১৫ হাজার।
গতকাল রোববার সরেজমিনে রোকেয়া ক্লিনিকে গেলে দেখা যায়, সকাল ১০:০৭, কিন্তু কোনো ডাক্তার ক্লিনিকে নেই। দুজন ডিপ্লোমা নার্স দিয়ে চলছে পুরো ক্লিনিক। তবে ১০:৪২-এ একজন ডাক্তার প্রবেশ করেন।
ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের এই ডাক্তারকে রেজিস্ট্রার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে ডাক্তার সরাসরি বলেন, আমি হাসপাতালের কোনো দায়িত্বে নেই। ডাক্তার বলেন, ক্যামেরা বন্ধ করেন, আমি আমার নাম-পরিচয় দিতে চাচ্ছি না। আমি সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন এখানে আসি, চেম্বার করার মতো করে এখানে কাজ করি।
ক্লিনিকের ভেতরে পরিপাটি একটি ফার্মেসি থাকলেও ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টের কোনো ফার্মাসিস্ট পাওয়া যায়নি। পরিবেশ ছাড়পত্রের, ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন, পরিচালনার অনুমোদন, হাসপাতাল বিল্ডিং নকশার অনুমোদনÑ কোনো কিছুই কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। পারভিন নামের এক নারী কর্মকর্তা বলেই বসলেন, ‘মাসুদ রেজার হাসপাতালে এগুলা লাগে না।’
মালিক মাসুদ রেজা সাংবাদিকদের অবস্থান টের পেয়ে সেখান থেকে চলে গেলেও তার মামা পরিচয়ে একজন গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে আসেন। তার নাম-পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি রোকেয়া ক্লিনিকের বিষয়ে কিছুই জানি না। সব জানে মাসুদ রেজা।
কোনো অনুমোদন না থাকলেও ল্যাবে চলছে একের পর এক টেস্ট। অথচ ক্লিনিকটির কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান নিয়োগপ্রাপ্ত নেই। পার্টটাইম কাজ করে বলে একজনকে দাবি করা হয়। দুজন নার্স দিয়ে একটি ক্লিনিক কীভাবে পরিচালিত হয়Ñএমন প্রশ্ন উঠে এসেছে।
সব নাকি মাসুদ রেজার ক্ষমতাবলে চলছে। কে এই মাসুদ রেজা?
মাসুদ রেজা আওয়ামী লীগের ৫ নম্বর বড়ইয়া ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিতেন, কিন্তু বর্তমানে বিএনপি নেতা বলে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতে পছন্দ করেন। যদিও তার ফেসবুক পুরোটাই আওয়ামী লীগের বন্দনায় ভরপুর।
উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার অবস্থান ছিল ছাত্রদের বিরুদ্ধে, এমন প্রমাণ মিলেছে। উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে, হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান উত্তরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়করা। এরই ধারাবাহিকতায় ফাঁসি চাই, বিচার চাইÑএমন স্লোগান লিখে মাসুদ রেজার বিরুদ্ধে একটি পোস্টার তৈরি করে। ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ইমরান হাসান বলেন, রোকেয়া ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ আছে, তারপরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেয় না।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হসপিটাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্টের ডক্টর সালমুন নাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা ডাইরেক্টর (হসপিটাল অ্যান্ড ক্লিনিক)-এর কাছে জানতে চাইতে পারেন। এই বিষয়টি আমার নয়।
পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডাইরেক্টর (হসপিটাল অ্যান্ড ক্লিনিক) মনির হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমরা দেখছি।
আপনার মতামত লিখুন :