ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রামে ডুপ্লিকেট নম্বর প্লেটের ছড়াছড়ি, নেপথ্যে কবির মিস্ত্রি

মো. সাহাব উদ্দিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৪, ১২:৪৪ এএম

চট্টগ্রামে ডুপ্লিকেট নম্বর প্লেটের ছড়াছড়ি, নেপথ্যে কবির মিস্ত্রি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আপনার অলক্ষ্যেই আপনার গাড়ির ডিজিটাল নম্বর প্লেট ডুপ্লিকেট হয়ে যাচ্ছে চোখের পলকে। একই নম্বর প্লেট ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন গাড়িতে। ডুপ্লিকেট নম্বর প্লেট বেশি ব্যবহার হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। নম্বর প্লেট বদলে দেওয়া চক্রের মাস্টারমাইন্ড চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার কবির মিস্ত্রি। দীর্ঘ অনুসন্ধানে ডুপ্লিকেট ডিজিটাল নম্বর প্লেট বিক্রি করা চক্রের সন্ধান পেয়েছে রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানীদল। 


কমপক্ষে আটটি ডুপ্লিকেট নম্বর প্লেটের তথ্য-প্রমাণসহ এর সাথে জড়িত বেশ কয়েকজনের তথ্য পেয়েছেন এই প্রতিবেদক। সিএনজি অটোরিকশা সমিতি ও ট্রাফিক পুলিশের কর্মরত অসাধু কর্মকর্তাদের দেওয়া মাসিক চাঁদার ভিত্তিতে নগরীসহ জেলা-উপজেলাগুলোতে এসব গাড়ি চলাচল করে বলে জানা গেছে। 


অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় নিবন্ধনকৃত গাড়ির ডুপ্লিকেট ডিজিটাল নাম্বার প্লেট বিক্রির সাথে জড়িত চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার কবির মিস্ত্রি। চোরাই গাড়ি ক্রয় করা মালিকদের কাছে ডুপ্লিকেট এসব নম্বর বিক্রি করেন তিনি। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে চন্দনাইশের টিপু, গিয়াস উদ্দিন, লাভলু, সজিব, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশে কর্মরত ট্রাফিক সার্জেন্ট।


বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এই চক্রের সদস্যরা গ্রেপ্তার হলেও সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় মাস্টারমাইন্ড কবির মিস্ত্রি। 


সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে বের হন এই সিন্ডিকেটের এক সদস্য মো. সজিব। তবে জামিনে বের হওয়ার পর এই পেশা ছেড়ে দেন সজিব। তাকে এবং তার সাথে থাকা সাবেক সহকর্মীদের অনুসরণ করে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার হাটহাজারীতে সিএনজি অটোরিকশায় ব্যবহার করা আটটি ডুপ্লিকেট নম্বর প্লেটের সন্ধান পাওয়া গেছে। ডুপ্লিকেট নম্বর প্লেট ব্যবহার করা গাড়িগুলো হলো-ঢাকা-দ ১১-২৫৯০, ঢাকা-দ ১১-২৫৫০, ঢাকা-দ ১১-২৫৫১, ঢাকা-দ ১১-৩১২৪, ঢাকা-দ ১৪-০০০৯, ঢাকা-দ ১৪-২০০, ঢাকা-দ ১১-১১৭১, নারায়ণগঞ্জ-দ ১১-০১১৭।


গত শনিবার বিকেলে পরিচয় গোপন করে গাড়ির মালিক সেজে কবির মিস্ত্রির সাথে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। কথোপকথনে প্রথমে গাড়ি কয় লাইটের তা জানতে চান কবির মিস্ত্রি। ২ লাইটের গাড়ির কথা বললে মেট্রো নম্বর পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি। সিঙ্গেল লাইটের একটি গাড়ি আছে বলার পর এক লাখ ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ময়মনসিংহ জেলার মেট্রো নম্বর প্লেট দেওয়া যাবে বলে জানান। যেখানে অনলাইনে আপডেট থাকার পাশাপাশি স্মার্ট কার্ডও পাওয়া যাবে বলে নিশ্চিত করেন কবির মিস্ত্রি।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলার বিআরটিএ থেকে এসব ডুপ্লিকেট নম্বর প্লেট বের করে চক্রটি। ডুপ্লিকেট নম্বর প্লেট বের করার জন্য ‘নম্বর প্লেট’ হারানোর কথা উল্লেখ করে থানায় জিডিও (সাধারণ ডায়েরি) করেন তারা। পরে বিআরটিএর নির্ধারিত অর্থ ব্যাংকে জমা রসিদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট বিআরটিএতে জমা দেয় এই চক্র। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নকল হলেও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ডুপ্লিকেট নম্বর প্লেট বের হয় বিআরটিএ থেকেই। 


এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারীর ট্রাফিক পরিদর্শক শামসুদ্দিন বলেন, ঢাকা মেট্রো, গাজীপুর মেট্রোর কয়েকটি গাড়ি আটক করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোর গাড়ি এখানে আসার কথা না। যদি আমরা প্রায়ই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। 
তবে বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক প্রকৌশলী সৈয়দ আইনুল হুদা বলেন, নম্বর প্লেট ডুপ্লিকেট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!