ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

ইলিয়াস মোল্লার হাতে আলাদিনের চেরাগ

মাইনুল হক ভূঁঁইয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৪, ১২:১৪ এএম

ইলিয়াস মোল্লার হাতে আলাদিনের চেরাগ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

২০১২ সালে ইলিয়াস মোল্লা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। আর চাকরিতে যোগ দিয়েই তিনি হাতে পেয়ে যান আলাদীনের চেরাগ। ঝুঁকে পড়েন অর্থ কামাইয়ে। পরে উপপরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে পদায়িত হন বাজেট ও নিরীক্ষা শাখায়। মূলত এর পর থেকেই তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এক দশকে ঢাকা ও গ্রামে নামে-বেনামে গড়ে তোলেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কাছাকাছি মস্তফাপুর ব্রিজের লাগোয়া কিনেছেন কয়েক শ বিঘা জমি। তাঁতিবাড়ী এলাকায় রয়েছে বিপণিবিতান ও গোডাউন। নিজ গ্রাম বলিয়াপুরে বানিয়েছেন আলিশান বাড়ি।

স্থানীয় জনগণ মনে করেন, বাড়িটির নির্মাণ খরচ কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা। তার নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী বাড়িটির দেখভাল করে। কোনো সংবাদকর্মী ছবি তুলতে গেলে তেড়ে আসে এই লাঠিয়াল বাহিনী। শেষমেশ আর ছবিই তোলা হয় না। কিন্তু একজন সংবাদকর্মী গোঁ ধরে অনেকটা গোপনেই ছবি ধারণ করেন। সেই ছবি এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ছাপার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইলিয়াস মোল্লার বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের বালিয়াপুর গ্রামের ছোট মেহের মৌজায়। তার পিতা নজর আলী মোল্লা। ছয় বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ইলিয়াস পঞ্চম। পিতা নজর আলী ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। আট সদস্যের সংসারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। থাকতেন জীর্ণশীর্ণ টিনের ঘরে। ২০১২ সালে ইলিয়াস আকস্মিকভাবে রাজউকে চাকরি জুটিয়ে নিলে ঘুচে যায় অভাব, ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। দুর্নীতিতে রীতিমতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠেন তিনি। রাতারাতি তার পকেটে চলে আসে কোটি কোটি টাকা।

টাকা ব্যয় করার উপায় না পেয়ে সম্পদের নেশায় মেতে ওঠেন তিনি। কয়েক শ বিঘা জমি কিনেও ফেলেন। বানিয়ে ফেলেন প্রাসাদোপম বাড়ি। তবু তার নেশা মেটেনি। গ্রামে কোনো জমি পছন্দ হলেই তিনি তা কেনার জন্য উঠে-পড়ে লাগেন। প্রয়োজনে চাপ প্রয়োগ করে হলেও কিনে ফেলেন। শুধু তা-ই নয়, গ্রামের কেউ জমিজমা বিক্রি করতে চাইলে তার লোকজনকে অবশ্যই জানাতে হয়। কারণ, ওই জমিও তার কিনতে হবে। বলতে গেলে মস্তফাপুর ইউনিয়নের স্বঘোষিত ডন এই ইলিয়াস মোল্লা। দুর্নীতির বরপুত্র হয়েও তিনি বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে। রাজউকের কানে পৌঁছে না, দুদকও তাকে ডাকে না। তাই তার দুর্নীতিও থামে না।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় জানা গেছে, ইলিয়াস মোল্লা বাজেট শাখা থেকে বদলি হয়ে গেছেন জোন-২-এ। তা ছাড়া তিনি অসুস্থ, চিকিৎসকের কাছে গেছেন। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ইলিয়াস মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাজেট ও নিরীক্ষা শাখার পরিচালক মোহাম্মদ শওকত আলী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি, তার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।’

পরিচালক (প্রশাসন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, তার সম্পর্কে কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!