টেন্ডার বাণিজ্য ও বেপরোয়া দুর্নীতিতে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন রাজধানী উন্নান কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল করিম। ২০১৮ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে রাজউকে যোগ দিয়েই তিনি অর্থের খোঁজে নামেন। পদায়িত হন গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে। এরপর থেকেই দুর্নীতির পরতে পরতে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। তৈরি করেন ঠিকাদারি সিন্ডিকেট। শুরু করেন টেন্ডার বাণিজ্য। কয়েক বছরেই গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। ঢাকা ও গ্রামের বাড়িয়ে বানিয়ে ফেলেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। তার এখনকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড জানা না গেলেও চাকরির শুরু থেকেই তিনি বরাবর ছিলেন সরকারবিরোধী। নিজের ফেসবুকে সরকারবিরোধী নানা পোস্ট দিয়ে তিনি প্রায়শই আলোচিত-সমালোচিত হন। এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় রাজউক প্রশাসনকে। তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. সাঈদ নূর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশও জারি করা হয়।
ওই সময় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট সেই সময়ের চোরম্যান মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত অপর এক চিঠিতে রাজউক (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০১৩-এর ৩৭ (খ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ এবং ৩৭(ছ) অনুযায়ী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এত সব সত্ত্বেও তিনি বদলাননি। একের পর এক চালিয়ে গেছেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
সম্পদের পাহাড় : রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শহরে ও গ্রামে নামে-বেনামে রয়েছে করিমের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সবই হয়েছে চাকরি পাওয়ার পর। ঢাকার আফতাবনগরে রয়েছে তার ৩ ও ৫ কাঠা পরিমাপের দুটি জমির শেয়ার। রংপুরে নিজ এলাকায় কিনেছেন কয়েক একর জমি।
নারায়ণগঞ্জের মিজমিজিতে শ্বশুরের সঙ্গে মিলে বানিয়েছেন আটতলা বাড়ি। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ এবং সড়ক ও জনপথের অসাধু প্রকৌশলীদের যোগসাজশে তিনি গড়ে তোলেন কোটি কোটি টাকার জমি ও ফ্ল্যাট ব্যবসা। এ ছাড়া এক প্রকৌশলী বন্ধুর সঙ্গে মিলে আফতাবনগরে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন আটতলা বাড়ি। শুধু তাই নয়, আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে রাজউকসহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। কারও কাছ থেকে ৯০ হাজার, কারও কারও কাছ থেকে নিয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার।
জানা গেছে, এসব হতদরিদ্র তরুণের কারোরই চাকরি হয়নি কোথাও।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এ নিয়ে রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) বরাবর কয়েক দফা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিনি বরাবরই থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আরও জানা গেছে, অর্থের গরমে করিম ধরাকে সরাজ্ঞান করেন। কাউকেই পরোয়া করেন না। ব্যক্তিগতভাবে তিনি আয়েশি জীবন যাপন করেন। চড়েন ৬০ লাখ টাকা দামের গাড়িতে, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১২৩৪০৯। গাড়ির চালক ছিলেন রাজউকের মাস্টাররোলের কর্মচারী।
যেখানে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত হয় : করিমের রয়েছে এক বিশাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট জমি ও ফ্ল্যাট কেনাবেচা এবং বিভিন্ন ধান্দাবাজির খোঁজ-খবর দেয় এবং বাস্তবায়ন করে। এ জন্য তিনি রাজউকের অফিস সময়সূচি বাদে ঢাকার হোটেল `৭১ ও ফারস হোটেল ব্যবহার করেন। এ দুই হোটেলেই রয়েছে তার ভাড়া করা স্যুট। এসব কক্ষে লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়। তা ছাড়া মদ ও জুয়ার আসরও বসে। জানা যায়, অসামাজিক কার্যকলাপ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন (সিএমএম) আদালতে তার বিরুদ্ধে সিআর মামলা হয়, যার নম্বর-২৯০৬। এই মামলায় জামিন নিতে গেলে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট : নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে করিমের অসংখ্য অ্যাকাউন্ট। এর মধ্যে বেশি লেনদেনের রেকর্ড রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে। অ্যাকাউন্ট নম্বর-১০-১৫১-৫৬১৬১। এই হিসাব জব্দ করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
বর্তমান অবস্থান : রূপালী বাংলাদেশের গাজীপুর প্রতিনিধি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে বদলি হয়ে করিম এখন রাজউক সদর দপ্তরে রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :