রাজধানীর জুরাইনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে এ সংঘর্ষ হয়।
পুলিশ ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে যানা গেছে, এ ঘটনায় ২০ থেকে ৩০ জনের মতো আহত হয়েছেন। তবে কেউ গ্রেপ্তার বা আটক হননি।
চালকেরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করতে থাকেন। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে চালকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা এ সময় পুলিশকে সহযোগিতা করতে গেলে তাদের সঙ্গেও চালকদের ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা চালকেদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
সংঘর্ষের সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সব দোকানপাট বন্ধ করে ফেলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। একপর্যায়ে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখেন। এতে আটকা পড়ে দুটি ট্রেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অবরোধের কারণে নারায়ণগঞ্জ কমিউটার নামের একটি ট্রেন সেখানে আটকা পড়ে। নকশীকাঁথা কমিউটার নামে একটি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে ছাড়তে পারেনি। চালকদের বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা-মাওয়া পদ্মা সেতু রেল চলাচলও বন্ধ ছিল।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান চালকেরা। চালকেরা বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ জুরাইনে কথা হয় অটোচালক রহিম মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা কিস্তি তুলে গাড়ি কিনেছি। পেটের দায় কোনো বাধা মানে না।’
এদিকে বিক্ষোভকারীরা জানান, হাইকোর্ট থেকে অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশনা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। চালকেরা জানান, মূল সড়কে না হলেও অলিগলিতে চলার অনুমতি দিতে হবে, যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয়।
আন্দোলনের সময় সাধারণ মানুষের ভোগান্তিতে পড়ার কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা জানান, অবরোধের কারণে নারায়ণগঞ্জ কমিউটার নামে একটি ট্রেন আটকা পড়েছে। এ ছাড়া নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছাড়তে পারেনি। অন্যদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা-মাওয়া-পদ্মা সেতু রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন এমন আন্দোলন চলতে থাকলে রাস্তায় চলাচল করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।
কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে জানান, জুরাইন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা গতকাল বেলা ১১টা থেকে রেললাইন দখল করে অবরোধ করেন। ফলে ওই লাইনে কোনো ট্রেন চলাচল করতে পারছিল না। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে এবং ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের রেল চলাচল একেবারে বন্ধ ছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবুজ সংকেত না দেওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতু রুটে ট্রেন চলাচল করবে না বলেও জানান ট্রেনচালক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রেন চালিয়ে যাতে বিপদে না পড়ি, সে জন্য ওপরের সংকেত না পেলে গাড়ি ছাড়ব না।’
এদিকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনাগামী অনেক যাত্রীকে কমলাপুর শহরতলি স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রেললাইন অবরোধ ও হামলার ঘটনায় রেলযাত্রীরা শঙ্কার কথা জানিয়েছেন জিআরপি পুলিশকে।
অন্যদিকে জুরাইনে সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চালকদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
জুরাইন ইউনিট বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘অটোরিকশাচালকেরা পুলিশের ওপর হামলা করতে যান। বিষয়টি নজরে এলে আমরা বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে চালকদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলি। তারা না সরে উল্টো আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করলে আমরা প্রতিরোধ করি এবং তাদের সরিয়ে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করি।’
শ্যামপুর থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুন নাহার বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা জুরাইন এলাকায় সড়ক ও রেললাইন দখল করে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিলেন। সে সময় তারা পুলিশকে হামলা করেন এবং সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে সহযোগিতা করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বৃহস্পতিবার মহাখালী রেলগেট এলাকায় অটোরিকশাচালকদের অবরোধে ছয় ঘণ্টা বন্ধ ছিল ট্রেন ও সব ধরনের যান চলাচল। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। এদিন মহাখালীতে রিকশাচালকেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন।
একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে রিকশাচালকেরা রেললাইনের পাথর দিয়ে মহাখালী এসকেএস শপিং মল, রাওয়া ক্লাব ও সিটি ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ ভাঙচুর করেন। এর আগে গত সোমবার তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মহাখালীর আরজতপাড়ায় রেললাইন অবরোধ করেন। এ সময় আন্তঃনগর উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ওই ট্রেনের নারী-শিশুসহ অনেক যাত্রী আহত হয়। ওই ঘটনায় উপকূল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ ছয়টি বগি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে উচ্চ আদালত থেকে ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ আসে ১৯ নভেম্বর। প্যাডেলচালিত রিকশা সমিতির করা একটি রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। স্বরাষ্ট্রসচিব, স্থানীয় সরকারসচিব, আইজিপি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতের এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এটা পুরোপুরি অবৈধ। পরদিনই ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল অব্যাহত রাখার দাবিতে দয়াগঞ্জ মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকেরা। এরপর তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
আপনার মতামত লিখুন :