বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা-ড্যাপের (২০২২-২০৩৫) ও ইমারত বিধিমালা-২০২৪ দ্বিতীয়বারের মতো বড় ধরনের সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর আগে সংশোধন হয়েছিল ২০২৩ সালে। ২০২৪ সালে এসে আরও বিস্তৃত সংশোধনের উদ্যোগ নিলো রাজউক। পরিসংখ্যান মতে, ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট গেজেট জারির পর কম করে হলেও ৫৬ বার ড্যাপ সংশোধ করতে হয়েছে। এর পেছনে নানাবিধ কারণ ছিল, স্বার্থসংশ্লিষ্টতা তো ছিলই। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর নানা মহলের বিভিন্ন দাবি বিশেষ করে রিহ্যাবের ব্যাপক তৎপরতা এবং আন্দোলনের হুমকির কারণে ভাবনায় পড়ে নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকার।
অবশেষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আবারও ড্যাপ সংশোধনে বাধ্য হয় সংস্থাটি। অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয় শলা-পরামর্শের পর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির দফায় দফায় বৈঠকের পর ড্যাপ আবার সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধানুযায়ী জনমত যাচাইয়ের জন্য ১৫ দিনের সময় দিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর নিজস্ব ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়। ১৫ দিনের মাথায় প্রায় আড়াইশ গণমতামত প্রাপ্তির পর ৩ অক্টোবর ওয়েবসাইট থেকে তা তুলে নিয়ে গেজেট জারি করা হয়। এরপর আরেক দফা পুনর্বিবেচনার পর ৮ ডিসেম্বর আবারও ড্যাপের খসড়াটি ওয়েবসাইটে প্রতিস্থাপন করে রাজউক। আজ ১০ ডিসেম্বর বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে ড্যাপ সংশোধনটি চূড়ান্ত রূপ লাভ করবে বলে জানালেন, রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার। তিনি বলেন, এরপর এটি যাবে মন্ত্রণালয়ে। সেখানে উপদেষ্টার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে, তা চূড়ান্ত হবে।
নতুন এ ড্যাপ সংশোধনী নিয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন নগরবিদরা। তাদের মতে, রাজউকের এই উদ্যোগ লাভবান করবে আবাসন ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে ঝুঁকিতে পড়বে আধুনিক ঢাকা গড়ার স্বপ্নে সৃষ্টি করবে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা। রিহ্যাব ও স্বার্থসংশ্লিষ্টদের চাপে সংশোধনে বাধ্য হয়েছে রাজউক। এখানে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফ্লোর এরিয়া রেশিও-ফার বাড়ানোই ছিল রিহ্যাবের প্রধানতম দাবি। সে দাবি পুরোপুরি মান্যতা পেয়েছে। প্রকাশিত গেজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংশোধিত নতুন প্রস্তাবনায় এলাকাভিত্তিক ‘ফার’-এর প্রস্তাবনা আগে যেখানে ১ দশমিক ৩ ছিল, সেখানে ৩.০০ থেকে শুরু করা হয়েছে। কাঠাপ্রতি ফ্ল্যাটের সংখ্যা যেখানে মূল ড্যাপে ছিল ১ দশমিক ২, সেখানে বর্তমানে তা বাড়িয়ে ২ দশমিক ৩০ থেকে শুরু করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে রাজউক আওতাধীন প্রতিটি এলাকায় ‘ফার’-এর মান এবং কাঠাপ্রতি প্রাপ্ত ফ্ল্যাটের সংখ্যা। এ ছাড়া রাস্তাভিত্তিক ‘ফার’-এর মানও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উৎসাহব্যঞ্জক প্রস্তাবনা।
পর্যালোচনায় স্পষ্টত রিহ্যাবের দাবি অনুযায়ী আবাসন ব্যবসায়ীদের স্বার্থ প্রতিফলনের লক্ষণ দেখা যায়। বলতে গেলে তাদের লাভের পাল্লাই ভারী। কিন্তু তাতেও কোথায় যেন অসন্তুষ্টি রয়ে গেছে আবাসন ব্যবসায়ীদের। রিহ্যাবের সহসভাপতি প্রকৌশলী আবদুল লতিফ বলেন, ‘রাজউক চেয়ারম্যানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি সংশোধনীতে প্রতিফলিত হয়েছে, আমি মনে করি না। রাজউক যা করেছে তাতে ৮০ ভাগ জমি মালিকের স্বার্থ উপক্ষিত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন ছঁড়ে দিয়ে বলেন, তারা কি বাড়িঘর করবেন না?’
রিহ্যাব নেতার মতে, ২০০৮-এর বিধিমালা রাখলেও ভালো হতো। এ সম্পর্কে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি রিহ্যাবকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা রক্ষার চেষ্টা করেছি। কোথাও কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকলে চূড়ান্ত হওয়ার আগে খতিয়ে দেখা হবে। আমরা প্রতিনিয়ত এ নিয়ে কাজ করছি। আশা করি, কারও কোনো অসন্তুষ্টি থাকবে না।’
ড্যাপ পরিচালক ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘চূড়ান্ত হওয়ার আগে ড্যাপ নিয়ে এত কথাবার্তা বাঞ্ছনীয় নয়। আমরা দফায় দফায় বৈঠক করছি, পর্যালোচনা করছি, কোথাও কোনো ফাঁক থাকবে বলে মনে করি না।’
এদিকে এক দল জমির মালিক ৮ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে সংশোধিত ড্যাপ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলায়তনে ‘ড্যাপ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকা শহরের ভূমি মালিক’ ব্যানারে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সংশোধিত ড্যাপকে বৈষম্যমূলক বলে মন্তব্য করে এর সমালোচনা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত সমন্বয়ক পরিচয়ে বক্তব্য পাঠ করেন এম এ সাজ্জাদ। সেখানে ৭ দফা দাবি উত্থাপিত হয়। প্রধান দাবি ছিল, ঢাকা শহরের সব এলাকায় ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের অনুমতি।
আপনার মতামত লিখুন :