বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫

ভোটাধিকার ফিরায় খুশি বিএনপি

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪, ০১:২০ এএম

ভোটাধিকার ফিরায় খুশি বিএনপি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাতিল হয়ে গেল দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বিধান। ফেরানো হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বাতিলের এ রায় দেন। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর উচ্চ আদালতের রায়ে ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ায় বেজায় খুশিতে আত্মহারা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাকর্মীরা। কারণ বিগত সরকার বিদ্ধ ব্যবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে টানা তিনটি নির্বাচন করে গোটা জাতির সঙ্গে নির্বাচনের নামে পরিহাস করেছিল। যাতে অংশ নেয়নি বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল।  তাই গতকালের আদালতের রায় নিঃসন্দেহে বিএনপির জন্য একটি বড় সুখবর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপির হাতে জন্ম নেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আওয়ামী লীগ তাদের স্বার্থে বাতিল করেছিল। আদালত মানুষের কথা চিন্তা করে ভোটের অধিকারের কথা চিন্তা করে আবার তত্ত্বাবাধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন। এই রায়কে বিএনপি স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপির রাষ্ট্রসংস্কারের ৩১ দফার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা ফিরিয়ে আনতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সেটা আমারা জাতির সামনে প্রকাশ করেছি। আমাদের কথা হলো মানুষ ভোট দেবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে।

ভোটে যারা জয়লাভ করবে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে। জোড় করে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা ঠিক নয়। আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে জোড় করে ক্ষমতা দখল করেছিল। দিনের ভোট রাতেই করে ফেলেছিল। শেষে কি হলো, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হলো।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য বড় একটি সুখবর। বিজয়ের মাসে গণতন্ত্রের বিজয় আরও একধাপ এগিয়ে গেল। আদালতের এমন রায়কে স্বাগত জানায় বিএনপি। আমরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বিধান সেদিন সংসদে পাস করেছিলাম। সেই সংসদে সবাই চালাকি করে অনুপস্থিত ছিল। সেই সংসদে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ বের হয়ে গিয়েছিল।

জামায়াত এবং জাতীয় পার্টিও সেদিন চায়নি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু হোক। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান থাকলে ভোট চুরিতে অসুবিধা হবে। সেই কারণে আওয়ামী লীগ এটা চায়নি। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জামায়াত ও জাতীয় পার্টিও চায়নি এই প্রথা চালু হোক। সংসদ শেষ হওয়ার ১১ মাস আগে বিএনপিই রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিল। সংসদে বিএনপি তখন এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সেটি করতে পেরেছিল।

আওয়ামী লীগ তখন আন্দোলন করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে। তারপরের ইতিহাস তো আপনারা জানেনই। জোড় করে ক্ষমতা দখল করে আদালত বিচার বিভাগ ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের নামে প্রহসন করে বিরোধী দলকে দমন করে দিনের ভোট রাতে করে ১৬ বছর ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল।

বর্তমানে যে অন্তর্বর্তী সরকার আছে তারা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার। তাদের আমলে ফ্যাসিবাদ সরকারের করে যাওয়া অবৈধ আদেশ বাতিল করেছেন আদালত। আদালতের এই রায় নিঃসন্দেহে বিএনপির জন্য একটি বড় সুখবর। আমরা আশা করি, দেশের মানুষও এটা চায়। মানুষ আর কতদিন ভোট ছাড়া থাকবে।

ঢাকা উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কফিল উদ্দিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের  ভোটের অধিকার না থাকলে গণতন্ত্র সুসংহত থাকে কি করে? শুধু মানুষের ভোটের অধিকার আদায় করতেই বিএনপি গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। আর এই আন্দোলন করতে গিয়ে আমরা জেল-জুলুম-হুলিয়ার শিকার হয়েছি।

বছরের পর বছর জেল খেটেছে আমাদের দলের নেতারা। সেখান থেকে বাদ যায়নি তৃণমূল থেকে একদম শীর্ষ নেতারা। জুলাই অভ্যুত্থানের পর স্বৈরচার পালিয়ে যাওয়ার পর মানুষ মন খুলে কথা বলতে পারছে। আদালতের আজকের রায়ের মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরবে বলে আমরা আশা করি। দেশের মানুষ কথা বলতে শুরু করেছে, এটা শুভ সংবাদ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসায় মানুষের ভোটের অধিকার সুসংহত হলো বলেই আমরা মনে করি।

বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, গত ১৭ বছর বিএনপি আন্দোলন করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার জন্য। এর জন্য আমরা আন্দোলন করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের রোশানলে পড়েছি। হাজার হাজার মামলা খেয়েছে আমাদের নেতাকর্মীরা। আমাদের মূল আন্দোলন ছিল মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনের জন্য আন্দোলন করেছি। কারণ তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতাকে দীর্ঘ করাই ছিল তাদের লক্ষ। আদালতের মাধ্যমে, আইনের মাধ্যমে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা ফিরেছে। আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাই। এই রায়ের মাধ্যমে দেশবাসীর হারানো অধিকার ফিরে আসবে। এই রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়েছে। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার আবার ফিরল।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এ ছাড়াও জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!