সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শুক্রবার ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের সমাবেশ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বাংলা একাডেমি ও অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটি মনে করে, সমাবেশ হলে বইমেলা আয়োজন অসম্ভব হবে। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।
এদিকে অমর একুশে বইমেলায় ১২টি প্রকাশনীর জন্য পরিসর বাড়ানো হয়েছে। বাংলা একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটির চতুর্থ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। নতুন করে পরিসর বাড়ানো প্রসঙ্গে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিন বলেছেন, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল মেলা নিয়ে বাংলা একাডেমির চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ আয়োজনের জন্য (গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত চিঠি সংযুক্ত-১) সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ১ জানুয়ারি থেকে ৩ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত বরাদ্দ পেয়েছে। বইমেলার প্রস্তুতি, বিশেষত স্টল নির্মাণের কাজ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তর একই সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অন্যান্য সমাবেশ ও কার্যক্রম আয়োজনের জন্য অনুমতি প্রদান করেছে। এতে বইমেলা হুমকির মুখে পড়েছে। একই সময়ে অন্য কোনো সমাবেশ উদ্যানে হলে বইমেলা আয়োজন করা অসম্ভব।
বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, এই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখে বইমেলার জন্য বরাদ্দকৃত স্থানে অন্য কোনো সভা-সমাবেশের অনুমতি বাতিল করা প্রয়োজন। বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মীরা অজকের সমাবেশ উপলক্ষে প্রস্তুতির জন্য বইমেলার শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখতে অনুরোধ করে। এরপরেই জটিলতা শুরু হয়। ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ জানিয়েছে, সমাবেশের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের অনুমতি রয়েছে।
১২ প্রকাশনীর পরিসর বাড়ল: অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটির চতুর্থ সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অন্যপ্রকাশ ও আগামী প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন ২০ ফুট বাই ২০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ২৪ ফুট বাই ২৪ ফুট করা হচ্ছে। কাকলী প্রকাশনী, পাঠক সমাবেশ, পুঁথিনিলয়, সময় প্রকাশন ও নালন্দাকে ৪ ইউনিটের পরিবর্তে ২০ ফুট বাই ২০ ফুটের প্যাভিলিয়ন দেওয়া হচ্ছে। শব্দশৈলীও ৩ ইউনিট থেকে এখন ২০ ফুট বাই ২০ ফুট প্যাভিলিয়ন পাচ্ছে। এ ছাড়া জিনিয়াস পাবলিকেশন্স, জনতা প্রকাশ (শিশু), ময়ূরপঙ্খী (শিশু) আগের নির্ধারিত ২ ইউনিট থেকে এখন ৩ ইউনিট পাচ্ছে। বাবুইয়ের (শিশু) জন্য আরেক ইউনিট বাড়িয়ে ২ ইউনিট বরাদ্দ করা হয়েছে।
এতে সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবিতে ১৮টি প্রকাশনীর মধ্যে ১২টির জন্য পরিসর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এসব প্রকাশনীকে তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি মেলায় আজীবনের জন্য অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ না করে ইউনিট দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল সৃজনশীল প্রকাশকদের নিয়ে গঠিত তিনটি সংগঠন। প্রকাশনীগুলোকে আগের বছরগুলোর তুলনায় স্থান কমিয়ে এবারের মেলায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ১০ দফা দাবি জানিয়েছিল ‘সুবিচারপ্রত্যাশী প্রকাশকবৃন্দ’ নামের প্ল্যাটফর্ম। গত রোববার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিনের কাছে এসব দাবি উপস্থাপন করে তারা। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল- প্যাভিলিয়ন বা স্টল অবনমনকৃত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাদ্দ আগের বছরের মতো করে পুনর্বহাল; অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য নিরপেক্ষ কমিটি গঠন; বইমেলা প্রাঙ্গণে অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আপনার মতামত লিখুন :