বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সর্বমোট রেলক্রসিং রয়েছে ১ হাজার ৮১৪টি। এর মধ্যে ১৩০০ ক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটম্যান। রেলের ভাষায় যেগুলোকে বলা হয় ‘নো ম্যান’ ক্রসিং।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮১৪টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ১ হাজার ১৬৩টিই অবৈধ। বৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৫১৩। তবে বৈধ এসব ক্রসিংয়েও জনবল নিয়োগ দিতে পারছে না পূর্বাঞ্চল। বৈধ ৫১৩টি ক্রসিংয়ের মধ্যে ১৩৮টিতেই নেই কোনো জনবল। মূলত পূর্বাঞ্চলের ১৮১৪টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ রেলক্রসিং গেটম্যান শূন্য।
গেটম্যানবিহীন অরক্ষিত রেলক্রসিং পথচারীদের জন্য বড় ধরনের হুমকির কারণ হয়ে উঠলেও রেলক্রসিংয়ের উন্নয়ন এবং লোকবল নিয়োগের জন্য কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। যেসব ক্রসিংয়ে গেটম্যান আছে, সেখানেও ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন হচ্ছে কি নাÑ তারও সুষ্ঠু তদারকি নেই কর্মকর্তাদের। ফলে এসব ক্রসিংয়ে বারবার ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও গা-ছাড়া ভাব পূর্বাঞ্চলের।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১ হাজার ২৭৯ কিলোমিটার রেলপথে বৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৫১৩। এসব রেলক্রসিংয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের লোকবল (গেটম্যান) রয়েছে মাত্র ৯৬৩ জন। যদিও ৫১৩টি বৈধ গেটে দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করতে ২ হাজার ৬০৪ জন গেটম্যান প্রয়োজন।
বাংলাদেশে ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার রেললাইন নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের রেলপথ। এর মধ্যে ১ হাজার ২৭৯ কিলোমিটার পথ পূর্বাঞ্চলে। ঢাকা বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগ, সিলেট বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগ নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও রেলওয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক সূত্রের দাবি, গেটম্যানবিহীন গেটের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রেলচালক এই প্রতিবেদককে জানান, রেলের সর্বাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে গেটম্যানবিহীন ক্রসিংয়ের কারণে। ম্যানবিহীন এসব গেট রেলওয়ের আওতায় এনে লোকবল নিয়োগের দাবি জানান তারা।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রেলওয়ে ক্রসিংগুলোকে চার ক্যাটাগরিতে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে- স্পেশাল, এ, বি ও সি ক্যাটাগরি। সাধারণ রেল জংশন, বিভাগীয় শহর ও বড় শহরের ভেতরের লেভেল ক্রসিংগুলো স্পেশাল এবং ‘এ’ ক্যাটাগরির। স্পেশাল ক্যাটাগরির লেভেল ক্রসিংগুলোতে ২৪ ঘণ্টাই চারজন গেটম্যান পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন।
‘এ’ ক্যাটাগরির ক্রসিংয়ে থাকেন দুজন করে গেটম্যান। ‘বি’ ক্যাটাগরির ক্রসিংগুলোর কোনোটিতে গেটম্যান আছে, কোনোটিতে নেই। কোনো গেটে ব্যারিয়ার আছে, কোনোটিতে নেই। আর ‘সি’ ক্যাটাগরির লেভেল ক্রসিং কার্যত পুরোটাই অরক্ষিত।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সুবক্তগীনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি জানান, ম্যান ছাড়া যেসব রেলক্রসিং অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে সেই ক্রসিংগুলোকে রেলওয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে পর্যায়ক্রমে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, অবৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে যেগুলো অপ্রয়োজনীয় সেগুলো বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলমান।
আপনার মতামত লিখুন :