ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

অভ্যুত্থানের অর্জন ঢাবি কেন্দ্রিকের অভিযোগ

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৫, ০৮:১০ এএম

অভ্যুত্থানের অর্জন ঢাবি  কেন্দ্রিকের অভিযোগ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জুলাই অভ্যুত্থান ছিল স্বতঃস্ফূর্ত একটি আন্দোলন এখানে নির্দিষ্ট কোনো মাস্টারমাইন্ড ছিল না। তবে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কিছু মানুষ যেভাবে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং সব ক্রেডিট (অর্জন) যেভাবে ঢাকাকেন্দ্রিক হচ্ছে বলে দাবি করেন অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী। 

নানা ইস্যুতে কলেজ-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী-সমন্বয়কদের ভেতর ভিন্নমত ও অন্তকোন্দল দেখা যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে উজ্জীবিত হয়ে নতুন দেশ গঠনে সবাই এক ও অভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এখানে কোনো বিভেদ নেই। সমন্বয়ক পরিচয়ে কেউ অপকর্মে যুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবেক সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বন্দ্ব অনেকটা প্রকাশ্যে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। তাদের মধ্যে দুইজন ছাত্রীও ছিলেন। 

গত মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ঢাকার ডেমরায় হামলার ঘটনার বিচার চেয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ফটকে অবস্থান নিলে সেখানে কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে মারামারির সূত্রপাত ঘটে। হামলায় আহত হন, ঢাকার বিভিন্ন কলেজ, মাদ্রাসা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মারামারির ঘটনার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ শাকিল বলেন, কার্যালয়ের শাটার বন্ধ করে ভেতরে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়। কিছু সন্ত্রাসী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে গেছে। তারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত, যা জুলাই আন্দোলনকরীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে। 

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিরা কেউ কেউ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিলেও কেউই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সাংগঠনিক পরিসরে যুক্ত নয়। এ ঘটনায় একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান ছিল স্বতঃস্ফূর্ত একটি আন্দোলন এখানে নির্দিষ্ট কোনো মাস্টারমাইন্ড ছিল না। 

তবে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কিছু মানুষ যেভাবে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং সব ক্রেডিট যেভাবে ঢাকাকেন্দ্রিক হচ্ছে। এক কথাই বললে,  ১৯৭১ সালের জনযুদ্ধ আওয়ামী লীগ যেভাবে ফ্যাসিবাদী কাইদায় মহান মুক্তিযুদ্ধকে মনোপলোলাইজ করেছিল। 

এখনকার সমন্বয়করা অনেকটা তেমনই করছে। একদিকে সব শহিদ পরিবার সঠিকভাবে সাহায্য পাচ্ছে না। আহত অনেকেই নির্মম পরিস্থিতির শিকার। আবার দেখবেন, কয়েকজন সমন্বয়ক তারা যেভাবে দেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের কথাবার্তা, পোশাক-আশাক, চাল-চলনে ফ্যাসিবাদী ভাবসাব পরিষ্কার। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক শোয়াইব আহমাদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করা হবে। তবে ৫ আগস্টের পর সেই মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেছে তারা। 

আন্দোলনের পরবর্তী আমরা দেখতে পেলাম পুরো আন্দোলন হয়ে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন অনেকটা ভাই-ব্রাদার পার্টির ভূমিকা পালন করছে। তারা নিজেদের সমালোচনা বন্ধ করতে নতুন ইস্যু সৃষ্টি করেছে। যার প্রতিবাদ আমরা শুরু থেকে করেছি। তিনি অভিযোগ করেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেক সমন্বয়ক তাদের প্রভাব বিস্তার করে নানা সুবিধাও গ্রহণ করছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মো. মাকসুদ অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের পর সবকিছু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। আন্দোলনে নানা সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবন দিলেও সেসব প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। দেখুন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌক্তিক দাবির জন্য আমরণ অনশন করা প্রয়োজন হয়েছে। এগুলো থেকে বৈষম্য রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়।

সমন্বয়ক শ্যামলী সুলতানা জেদনী বলেন, বিছিন্ন যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেখানে অফিসিয়ালি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য বা কমিটিতে যারা আছেন তারা জড়িত নেই। একই সঙ্গে তাদের ভেতর কোনো ধরনের বিভেদ নেই। দেখা যায়, উপজেলা-থানাভিত্তিক আমাদের কমিউনিকেশন গ্যাপের কারণে নানা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। 

তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ কোনো ধরনের অপকর্মে জড়িত নেই। যদি কেউ জড়িত থাকে, এমন নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে, যারা সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করছে, তারা আসলে সমন্বয়ক না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীরা যুক্ত ছিল। আন্দোলন পরবর্তী কিছু বিষয় নিয়ে তাদের ভেতর মতের অমিল দেখা দিচ্ছে। এখানে যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতা রয়েছেন- তাদের উচিত সবার সঙ্গে কথা বলে একটি সমতার জায়গা সৃষ্টি করা ও সমাধানে পৌঁছানো। 

তবে, আমাদের মূল যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সেটা এক ও অভিন্ন । আমরা চাই  জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে উজ্জীবিত হয়ে নতুন দেশ গঠনে সবাই এক ও অভিন্নভাবে কাজ করে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে। ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ ও যৌক্তিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি নির্বাচন। যে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার আর ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠবে না। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!