ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

ফের চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৫, ০৮:১৬ এএম

ফের চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তর্দেশীয় ট্রেন চলাচল বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে ভারত। ফলে আবার চালু হতে যাচ্ছে দুই দেশের যাত্রীবাহী ট্রেন। বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে আন্তর্দেশীয় ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে গত জুলাই থেকে। 

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বারবার চেষ্টা করা হলেও ট্রেন চালাতে এত দিন রাজি হচ্ছিল না ভারত সরকার। বাংলাদেশ রেলওয়ের অনেক চিঠির জবাবও দিচ্ছিল না ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড। সর্বশেষ আন্তর্দেশীয় সভায় বরফ গলেছে।

জানা গেছে, ভারতের নতুন দিল্লিতে ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আন্তর্দেশীয় সরকারি রেলওয়ে সভা (আইজিআরএম) অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার শেষদিন গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টার পর সভা শেষ হয়। সভার শেষদিন ভারতের পক্ষ থেকে আন্তর্দেশীয় ট্রেন চলাচল বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখায় বলে সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্দেশীয় রেল চলাচলের তিনটি পথেই নিরাপত্তাঝুঁকির কথা বলে এত দিন ধরে যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে সম্মতি দিচ্ছিল না ভারত। যদিও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ভারত সরকার ট্রেন চলাচলের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এখন আমাদের প্রতিনিধিদল দেশে আসার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। তখন বলা যাবে কবে থেকে ট্রেন আবার চলাচল শুরু হবে। আমরা চাই দ্রুত ট্রেন চালাতে।

ভারতের সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জিয়াউল হক। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী, কমলাপুরের কাস্টম হাউসের (আইসিডি) ওমর মবিন এবং রেলওয়ের পরিচালক ট্রাফিক (পরিবহন) মো. মিজানুর রহমান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধিও রয়েছেন।

সফরে পাঁচ অ্যাজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করে বাংলাদেশ। সফরে গুরুত্ব ছিল আন্তর্দেশীয় ট্রেন চলাচল প্রসঙ্গ। সেই সঙ্গে আলোচনা হয় ভারতের অর্থায়নে বাংলাদেশে চলমান প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে। যদিও বৈঠকের অ্যাজেন্ডাও ভারত নির্ধারণ করেছে। আলোচনায় বড় অ্যাজেন্ডাগুলো হলোÑ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল সম্পর্কিত সমস্যা, মালবাহী ট্রেন চলাচল সম্পর্কিত সমস্যা, রেল সংযোগ, চলমান প্রকল্প এবং কারিগরি কিছু সমস্যা।

জানা গেছে, বন্ধ থাকা যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল পুনরায় চালু করার পাশাপাশি বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ‘এন্ড টু এন্ড ইমিগ্রেশন’ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে মালবাহী ট্রেনের আদান-প্রদান বাড়ানো, দর্শনা-গেদে হয়ে মালবাহী ট্রেন চলাচলের সময় বাড়ানো, বেনাপোল-পেট্রাপোল এবং রহনপুর-সিংবাদ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পরিবর্তে সার্বক্ষণিক ট্রেন চলাচলের সুযোগ তৈরি করা এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কনটেইনার ট্রেন সার্ভিস সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান খুঁজতে আলোচনা করা হয়। 

এ ছাড়া বাণিজ্যিক পর্যায়ে মালবাহী ট্রেন চলাচল নীতিমালা (এসওপি) চূড়ান্ত করা, কনটেইনার ট্রেনের জন্য যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ, বেসরকারি খাতে কনটেইনার ট্রেন চালানোর অনুমতি দেওয়া, বেনাপোল স্টেশনে কনটেইনার রেললাইন চালু, যশোর বা নেওপাড়া পণ্য হ্যান্ডলিং স্টেশনকে বেনাপোল এলসিএসের বর্ধিত গেটওয়ে হিসেবে ঘোষণা করা এবং কমলাপুর রেলওয়ে আইসিডি থেকে এক্সিম রেল কার্গো যাত্রা শুরু করা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

এদিকে আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ প্রকল্প এবং এর কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে সম্পদের দখল বুঝিয়ে দেওয়া, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর এবং ভারতের নিশ্চিন্তপুর ইয়ার্ডের মধ্যে কনটেইনার ট্রেন চলাচল শুরু, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) থেকে দ্রুত চূড়ান্ত অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নেওয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়গুলো বৈঠকের অ্যাজেন্ডায় ছিল।

বাংলাদেশে ভারতীয় রেলের মালবাহী ট্রেনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে রেলের লুপলাইনের দৈর্ঘ্য ও শেড ভালো করে বিভাগীয় ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রকল্পের অবস্থা, খুলনা-মোংলা নতুন রেললাইন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা, রোলিং স্টক, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও আইটি সিস্টেমে সহযোগিতা করতে চাচ্ছে ভারত। এসবের সঙ্গে ভারতীয় রেলের বকেয়ার পরিমাণ নিয়েও আলোচনা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এলওসির (ভারতীয় অর্থায়নে) প্রকল্পগুলোর অবস্থা ভালো নয়। এ বিষয়েও আলাপ গুরুত্বসহকারে তোলা হয়। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আটটি ইন্টারচেঞ্জ থাকলেও সচল রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে তিনটি পথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। গত ১৭ জুলাই রাতে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছে। 

ট্রেনটি পরদিন রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ছেড়ে যায়নি। পরে ট্রেনটি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে আটকে যায়। আর ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা-কলকাতা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করত।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!