ঢাকা শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

কুজেন্দ্রের আধিপত্যে জিম্মি ছিল খাগড়াছড়ি

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৫, ০৯:০০ এএম

কুজেন্দ্রের আধিপত্যে জিম্মি ছিল খাগড়াছড়ি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, আওয়ামী সরকারের শাসনামলে গত সাড়ে ১৫ বছরে ত্রিপুরা ছিলেন খাগড়াছড়ির সর্বেসর্বা। তার নিয়ন্ত্রণে থাকত বিভিন্ন নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন, ঠিকাদারি ও রাজনীতি। এক কথায় তার একক আধিপত্যে জিম্মি ছিল খাগড়াছড়ি। একসময় সাধারণ কর্মচারী থেকে এমপি-মন্ত্রী বনে যাওয়া এই পথপরিক্রমায় হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। দুর্নীতি, সরকারি জমি দখল, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে তিনি সম্পদ অর্জন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পরপর গা ঢাকা দেন সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী।

অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার জালে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি জমি দখল করে রিসোর্ট তৈরির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন ঢাকার সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের পর কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ভারতের মিজোরামে পালিয়ে যান বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। পট পরিবর্তনের পর হত্যা, সহিংসতা ও হামলার অভিযোগে এ পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদরসহ জেলার বিভিন্ন থানায় কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বিরুদ্ধে অন্তত ১৮টি মামলা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। গত ৪ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দুদক কার্যালয়ে তলব করা হয়। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। এরপর সাবেক এ প্রতিমন্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পদের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে গত ২১ নভেম্বর চিঠি ইস্যু করে দুদকের অনুসন্ধান টিম। দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, পলাতক কুজেন্দ্র চিঠির জবাব না দেওয়ায় দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করে।

দুদকের মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু উপায়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাধীন আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের পার্শ্বে ২৬২নং গোলাবাড়ী মৌজায় ৪৮৫৭ (আং) খাস দাগে ০৪ একর খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে দখল করে সেখানে খাস্রাং রিসোর্ট নির্মাণ করেন।

এতে বলা হয়, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ২৬২নং গোলাবাড়ী মৌজার ৩য় শ্রেণির জমি প্রতি শতকের মৌজা রেট ২৫ হাজার ৫১৫ টাকা। সে হিসাবে ওই জমির বাজার মূল্য ১ কোটি ২ লাখ ৬ হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তবে বাজার মূল্য আরও অনেক বেশি। সুতরাং ১ কোটি ২ লাখ ৬ হাজার টাকা মূল্যের সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ করে দন্তবিধি,  ১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায়, ১০ বছরে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার আয় বেড়েছে প্রায় ১৩ গুণ। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে শত শত একর জমি, বেড়েছে ব্যবসা। পাশাপাশি বেড়েছে এফডিআরের পরিমাণ, স্বর্ণালংকার, গাড়ি ও বাড়ির সংখ্যাও। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের হলফনামায় শুধু খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় সম্পত্তি থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও ২০২৩ সালে জমা দেওয়া হলফনামায় রাঙামাটি ও ঢাকায় সম্পত্তি থাকার হিসাব দেখানো হয়। সে সঙ্গে তার স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা মল্লিকা ত্রিপুরার নামে অবৈধ উপায়ে শত শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে।

দুদকের সূত্র জানায়, অনুসন্ধানে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা তথা সংসদীয় আসন ২৯৮-এর সাবেক সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও তার স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা মল্লিকা ত্রিপুরার নামে অবৈধ উপায়ে শত শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ায় ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও তার স্ত্রী মল্লিকা ত্রিপুরাকে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার জন্য পৃথক নোটিশ দেওয়া হয়। গত ২১ নভেম্বর ইস্যু করা সম্পদের (স্থাবর-অস্থাবর) যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি দিয়েছিল দুদকের অনুসন্ধান টিম। তাদের কাছ থেকে কোনো জবাব মেলেনি।

দুদকের সূত্রের দাবি, অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত রাঙামাটির সাজেক ভ্যালিতে খাসরাং নামে দুটি রিসোর্ট, খাগড়াছড়ি আলুটিলায় খাসরাং রেস্টুরেন্ট, ঢাকার পূর্বাচলে প্লট, উত্তরায় বিশাল দুটি ফ্ল্যাট, খাগড়াছড়ি সদরের খাগড়াপুরে নিজের নামে, খবংপুড়িয়ায় বান্ধবী রূপনা চাকমার নামে বাড়ি ও দীঘিনালায় তিনটি বাড়ি ও ল্যান্ডক্রুজার গাড়িসহ বিলাসবহুল একাধিক গাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, নামে-বেনামে বিভিন্ন হিসাবে শতকোটি টাকা থাকার তথ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি আসনে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সাবেক সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা নিজ এলাকায় গডফাদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, সরকারি জমি দখল, টেন্ডারবাজি, অর্থের বিনিময়ে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারি ও দলের পদ এবং কমিটি নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কুজেন্দ্রের হলফনামায় ইটভাটা, কৃষি ও মৎস্য খামার, কাঠ ব্যবসাসহ মৌসুমি ব্যবসার খাত থেকে বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৩০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৫ টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ লাখ ১৪ হাজার টাকায়। ২০২৩ সালে এসে তার আয় দাঁড়ায় ৪ কোটি ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮০ টাকা। তার আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে দেখানো হয় রাঙামাটির সাজেকে রিসোর্ট ব্যবসা। এখান থেকে তার বছরে আয় হয় ১ কোটি ৩৬ লাখ ৩১ হাজার ২৪৭ টাকা। ত্রিপুরা দ্বিতীয় আয়ের খাত হিসেবে ইট, বালুসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহের কথা বলা হয়। এ খাত থেকে তার আয় হয় এক কোটি ৩১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫৪ টাকা। ইটভাটা থেকে আয় ২৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন এফডিআর, সঞ্চয়ী জামানত ও অংশীদারি বিনিয়োগ থেকে আয় দেখানো হয়।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার নিজের পাশাপাশি স্ত্রীর নামেও রয়েছে কোটি টাকার সম্পদ। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের হলফনামায় সম্পদ, আয় ও আর্থিক বিবরণী একই রকম দেখানো হলেও ২০২৩ সালে এসে তা বেড়ে যায়। ২০২৩ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের ব্যবধানে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার প্রায় আট কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ বেড়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটির সাজেক ভ্যালির কংলাকে ৪ দশমিক ৮ একর ভূমির ওপর খাসরাং রিসোর্টে বিনিয়োগ দেখানো হয় ৪ কোটি ৪২ লাখ ১ হাজার টাকা। খাগড়াছড়ি সদরের আলুটিলায় খাসরাং রেস্টুরেন্টে বিনিয়োগ দেখানো হয় ২ কোটি ২২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

দুদক অনুসন্ধান বলছে, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার খাগড়াছড়ি সদরের খাগড়াপুর, খবংপুড়িয়া ও দীঘিনালায় বাড়ি রয়েছে তিনটি। হলফনামায় যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৬৬ টাকা। বাস্তবে কিন্তু তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা রয়েছে শুল্কমুক্ত ল্যান্ডক্রুজার ও জিপসহ বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি। এ ছাড়া এমপি পুত্রের নামে ৩৬ লাখ টাকার একটি বিলাসবহুল প্রাইভেট কার, পরিবহন খাতে ব্যবসার উদ্দেশ্যে পিকআপ-১, পিকআপ-২সহ ভাড়ায়চালিত অসংখ্য গাড়িও রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ঢাকার পূর্বাচলে ভূমি কেনাবাবদ বিনিয়োগ দেখিয়েছেন সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা, ঢাকার উত্তরায় এক হাজার ৭৮৩ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, নথিপত্রে যার ক্রয়মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৪২ লাখ টাকা। বাস্তব যার মূল্য কয়েকগুণ বেশি। অন্যদিকে, অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে এক কোটি ১৫ লাখ পাঁচ হাজার ১৫৬ টাকার এফডিআর, ১৪ লাখ ১৭ হাজার ৮৪১ টাকার ডিপিএস, সংসদ সদস্য ও টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান পদ থেকে বার্ষিক আয় ২৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা দেখিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া ‘মল্লিকা অ্যাগ্রো প্রজেক্টে’র নামে বনায়ন, কৃষি, মৎস্য ও গবাদিপশু পরিপালনে ১০৭ একর জমির তথ্যও উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।

ত্রিপুরার উত্থান যেভাবে

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার বাসিন্দা কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। চাকরি জীবনে ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এনজিওর একটি গ্রাম প্রকল্পের কর্মচারী। পরে যোগ দেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি থাকাকালে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হন তিনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার দেড় বছরের মাথায় ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। চেয়ারম্যান হওয়ার পরই জেলা পরিষদকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। নানা অনিয়মে দুর্নীতির মাধ্যমে মাত্র সাড়ে তিন বছরেই শতকোটি টাকার মালিক হন তিনি।

অবৈধ টাকার প্রভাবে ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তৎকালীন এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ১৯ ভোটে হারিয়ে দখলে নেন সভাপতির পদ। ২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে হন সংসদ সদস্য। এরপর আর কেউই ঠেকাতে পারেনি তাকে। সমানতালে চলতে থাকে তার অপরাধ, অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্য। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পান তিনি। দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আরও বাড়ে তার অপরাধ-অনিয়মের দৌরাত্ম্য। নিজের স্বজনদের বড় বড় পদে বসিয়ে পুরো জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তাদের মাধ্যমেই অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন মূর্তমান আতঙ্ক কুজেন্দ্র লাল। অবৈধ টাকার বলে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হন। এরপরই পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হন।
 

আরবি/জেআই

Link copied!