ঢাকা শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫

উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতিতে

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০১:০৮ এএম

উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতিতে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে পাল্টাপাল্টি মন্তব্যে উত্তাপ বাড়ছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। আগামী নির্বাচন কেমন হবে, সেই প্রশ্নেও রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে। বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নতুন দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। সরকারে যুক্ত থেকে নতুন দল গঠন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ভালো চোখে দেখছে না রাজনৈতিক দলগুলো। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্য। এর সঙ্গে আলোচনার পালে দমকা বাতাস জুগিয়েছে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ফেসবুক পোস্ট। তাদের মন্তব্যের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি, বাম দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে জামায়াত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সরকারের ছত্রছায়ায়া রাজনৈতিক দল গঠন হবে সরকারের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এতে মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে যারা প্রতিযোগিতা করবে, তারা যদি ক্ষমতায় থাকে, তাহলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। এই সরকারের সমর্থিত কোনো দল যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, সেখানে নিরপেক্ষতার প্রশ্ন থেকেই যাবে। তাই নির্বাচনের দিনক্ষণ যত সামনে আসবে, সরকারের অবস্থান ততই পরিষ্কার হবে। আর রাজনৈতিক বিভেদও বাড়তে থাকবে।

‘কোটা না মেধা’ স্লোগনে শুরু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ‘ক্ষমতা না জনতা’র প্রশ্নে জুলাই-আগস্টের দিনগুলোর প্রতিটি বাঁকে ছিল পরিবর্তনের আহ্বান। শেষে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে জয়ের মধ্য দিয়ে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার, যাতে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আছেন মো. নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ।

মাসখানেক ধরেই সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুর ও স্বরের বৈপরীত্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহের জবাব দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। সামাজিক মাধ্যমে জবাবে তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্ররাই এই সরকারের এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর, যেটা এক-এগারোর সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে। বিএনপি কয়েক দিন আগে মাইনাস টু-এর আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি এক-এগারো সরকারের প্রস্তাব করছে।’ একই প্রসঙ্গে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব বলেছেন, ‘সরকারে থেকে রাজনৈতিক দলের সাথে কোন প্রকার সংশ্লিষ্টতার বিরুদ্ধে আমরাও।

উপদেষ্টাদের কেউ রাজনীতি করলে সরকার থেকে বের হয়েই করবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলেরও সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করা অনুচিত। বিভিন্ন সরকারি বা সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে তদবির বা চাপ প্রয়োগ করা অনুচিত।’ একই ধাঁচের স্ট্যাটাস দেন সর্জিস আলম ও হাসনাত আব্দুলাহ। গত বুধবার একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার যদি পূর্ণ নিরপেক্ষতা পালন করে, তাহলেই তারা আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা পর্যন্ত থাকবে। তা না হলে তো নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। এর এক দিন পর গত বৃহস্পতিবার আরও কড়া অবস্থানে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছে না।

উপদেষ্টা ও ছাত্রনেতাদের এমন মন্তব্যে কিছুটা কৌশলী ভূমিকায় দেখা গেছে জামায়াতকে। ফ্যাসিস্ট-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অংশীজন বিএনপির নেতারা বলছেন, প্রশ্ন যখন নিরপক্ষে ও স্বচ্ছতার, তখন সমস্যা ও সংকট মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা-অনভিজ্ঞতার প্রশ্নটাও জোরালো হয়ে ওঠে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান ইস্যুতে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে যারা প্রতিযোগিতা করবে, তারা যদি ক্ষমতায় থাকে, তাহলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। এই সরকারের সমর্থিত কোনো দল যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, সেখানে নিরপেক্ষতার প্রশ্ন থেকেই যাবে। একই অভিযোগ ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। সেই মডেল ফিরে আসার জন্য নিশ্চয় ছাত্র-জনতা লড়াই-সংগ্রাম করেনি। যেই মডেলের বিরুদ্ধে আমরা ১৫ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছি, সেই মডেল ফিরে আসুক অবশ্যই আমরা তা চাই না। সুতরাং বর্তমান সরকারের উচিত এমন একটি পরিস্থিতি ও তাদের চরিত্র তৈরি করা, যেন সবার জন্য সমান পরিবেশ নিশ্চিত হয়। সে জন্য তাদের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। বিএনপির বিরুদ্ধে এক-এগারোর সরকার গঠনের অভিযোগের কড়া জবাব দিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘ইদানীং কথা বলার সুযোগ পেয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে বহু লোক বহু কথা বলছে। কেউ বলছে বিএনপি নাকি এক-এগারো আনার পাঁয়তারা করছে। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ওয়ান ইলেভেনের যে ভয়াবহ পরিণতি, এটা বিএনপির চেয়ে কেউ বেশি ভোগ করে নাই।

বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী, সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া (বিএনপির চেয়ারপারসন) পর্যন্ত কেউই এক-এগারোর রোষানল থেকে রেহাই পায় নাই। আর আজকে ওনারা অনেকেই বলেন যে বিএনপি এক-এগারো আনার চিন্তা করছে।’

নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন একটি নতুন দল হচ্ছে আর বিএনপি নাকি হিংসা করছে। এ কথা যারা বলেন, তারা জাতির শত্রু।

দল ঘোষণা হওয়ার পরে বিএনপি কী করে, সেটা দেখবেন। যারা দল করবেন, আমরা তাদের স্বাগত জানাই। এ ধরনের উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। বিএনপিকে যারা ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন, এটার পরিণতি কিন্তু ভালো হবে না।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছে। আজকে অনেকে বলছেন, ৫ আগস্ট যারা এনেছেন, সবকিছুর অধিকার তাদের। যারা ১৭ বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছে, খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, তাদের কী হবে? আমাদের কি কোনো অবদান নাই? আমার ১১ বছর জেল হয়েছে, আমার স্ত্রীর ১৬ বছর, আমার ছোট ভাইয়ের আট বছর সাজা হয়েছে। এমনি করে বিএনপির প্রত্যেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছে। আর আজ আমাদের আওয়ামী লীগের সিল বানাতে চান। চক্রান্ত যা-ই করেন, আমরা বুঝি।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী চলমান ইস্যুতে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, তরুণ উপদেষ্টারা বিজ্ঞদের রাজনীতি শেখাতে চাইছেন কি! এক-এগারোর পুনরাবৃত্তি হবে এগুলো বলে আমাদের ভয় দেখানো যাবে না। এই সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। জনগণের প্রত্যাশা ছিল অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কাজ করবে। তারা এখন শুধু সংস্কারের বাণী শোনান। আগে সংস্কার পরে নির্বাচন এ যেন আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র সেই চেনা সুরের  প্রতিচ্ছবি।

বর্তমান সরকারের ওপর আমাদের এখন পর্যন্ত বিশ্বাস আছে। তবে, সংস্কার কতটুকু দরকার সেটা পরিষ্কার করতে হবে। অনন্তকাল ধরে সংস্কার চলবে, সেটা কোনোভাবেই হতে পারে না। নানা কারণে নতুন সংস্কার হতে পারে। সংস্কারের কথা বলে গণতন্ত্রের প্রবাহ আটকে রাখতে পারে না। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘৫ আগস্টের পর গোটা দেশে অনেক মতপার্থক্য থাকলেও একসঙ্গে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছে ঐক্যের মধ্যে দিয়ে। চলমান এ বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন।

তরুণ যে উপদেষ্টা পোস্টটি করেছেন, এটি মূলত একটি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। মির্জা ফখরুল ইসলাম যে মন্তব্য করেছেন, সেটির যৌক্তিকতা রয়েছে। সেখানে না বোঝার মতো তেমন কিছুই দেখি না। নিরপেক্ষাতার যে প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমান নতুন রাজনৈতি দল গঠনের পেক্ষাপটে সেটা আসতে পারে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন দল নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে। তারা সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। সরকারের সঙ্গে থেকে তাদের দল গঠন ভালো চোখে দেখবে না জনগণ। সেখান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন আসতে পরে। সেখানে রুষ্ট্র হবার তেমন কিছু দেখি না। বিষয়টি আরও গভীরভাবে বুঝে বিচার-বিবেচনা করে উপদেষ্টা পোস্টটি করতে পারতেন। যে পোস্টটি করেছেন, কোন পেক্ষাপটে এক-এগারো বা ফ্যাসিস্ট ফিরে আসার কথা এনেছেন, সেগুলোর পেক্ষাপট পরিষ্কার করা প্রয়োজন ছিল। ভবিষ্যতে কী হবে এটাই দেখার বিষয়। রাজনীতিক হিসেবে ভবিষ্যৎ কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় সেটাই দেখার।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সেখানে সব স্টেকহোল্ডারকে সঙ্গে রেখে ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো রূপান্তর করতে হবে। তারা যদি এমনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, যেখানে অংশীজনদের মধ্যে বিরোধ-দূরত্ব সৃষ্টি হয়, ইতিহাসের দায় থেকে অন্তর্বর্তী সরকারও মাফ পাবে না।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, এমন কোনো কর্মকাণ্ড যেন গঠিত না হয়, যার ফলে আমাদের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়। আমরা মনে করি, বিএনপি ও তরুণ উপদেষ্টাদের অংশ থেকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে জনগণের মধ্যে প্রভাব ফেলবে না। বাংলাদেশের জনগণ এখন আগের থেকে অনেক বেশি রাজনীতিসচেতন। তাদের ঐক্যশক্তির ফলেই ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে। জনগণ সবকিছু গভীরভাবে বিচার-বিবেচনা করেন। দেশ ও দেশের জনগণের জন্য যা ভালো, সেই পথই বেছে নেবেন তারা। আমরা মনে করি, এসব পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণে রাজনীতির ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

স্ট্যটাস নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছে জামায়াত জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তিগত বা দলীয় স্ট্যটাস নিয়ে জামায়াত মন্তব্য করে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তথ্য উপদেষ্টা এক-এগারোর ইঙ্গিত কীভাবে পেলেন? বিএনপি মহাসচিব ঠিকই বলেছেন, যদি সরকার পূর্ণ নিরপেক্ষতা পালন না করে, তাহলে নিরপেক্ষ সরকার দরকার হতে পারে; এটা তো সঠিক কথাই বলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। দল তারা গঠন করতেই পারেন। গণতান্ত্রিক দেশে দল গঠন হবে, সেটা দোষের কিছু না। তবে সরকারের স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া দরকার, নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতি সরকারের কোনো সহযোগিতা থাকবে না।’ এই রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার সময়সীমা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!