ঢাকা সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

ইন্টারনেটে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারে স্বস্তি

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০২:০৭ এএম

ইন্টারনেটে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারে স্বস্তি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মোবাইল এবং ব্রডব্যান্ড সেবার ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে স্বস্তি বিরাজ করছে দেশের প্রযুক্তি ও টেলিকম খাতে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে অংশীজনরা বলেছেন, টেলিকম সেবার মূল্য হ্রাসে অধিকতর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে শুধু শুল্ক প্রত্যাহারে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করতে পারলে সেটি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। এ জন্য টেলিকম সেবার ওপর বিদ্যমান কর আরও কমানোর দাবি সেবাদাতাদের।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সব ডিজিটাল সেবার সঙ্গেই মানুষ যুক্ত হন ইন্টারনেটের মাধ্যমে। তাই ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করতে হবে।

গত ৯ জানুয়ারি এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে মোবাইলের রিম বা সিমভিত্তিক সেবা এবং আইএসপি’র (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডর) মাধ্যমে দেওয়া ব্রডব্যান্ড সেবার ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে এনবিআর।

মোবাইলের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ থেকে ২৩ শতাংশ করা হয় এবং ব্রডব্যান্ড সেবার ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়। এতে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। টেলিকম সেবাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন এবং অংশীজনরা আরোপিত এই শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানায়। সমালোচনার মুখে গত ২২ জানুয়ারি এসব শুল্ক প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং টেলিযোগাযোগসহ পুরো প্রযুক্তি খাতে তুলনামূলকভাবে স্বস্তি বিরাজ করছে। শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে ডিজিটাল সেবা খাতে যে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল সেটি আপাতত কেটেছে বলে মনে করছেন তারা।

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের সাবেক পরিচালক এবং বন্ডস্টাইন টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শাহরুখ ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, যেকোনো ধরনের সেবা নিতে হলে এখন ইন্টারনেট প্রয়োজন। ইন্টারনেটের খরচ বাড়লে এই খাতে প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষের ইন্টারনেটের আওতায় আসার পরিমাণ কমবে। এখন যে শুল্ক প্রত্যাহার হয়েছে তাতে এটুকু স্বস্তিতে থাকা যায় যে, ইন্টারনেটের খরচ আর বাড়ছে না। সাধারণ ব্যবহারকারীরা আগের মতোই ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা ব্যবহার করবে। তবে দাম বাড়িয়ে দাম কমানোর যে আত্মতুষ্টি সেটা যেন আমাদের মাঝে না থাকে। আর এই বাস্তবতাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শুধু রাজধানী এবং বিভাগীয় শহর এলাকায় হলে হবে না। ইন্টারনেটের এখনো যে মূল্য সেটা হয়তো শহর এলাকার ব্যবহারকারী দিতে পারেন। কিন্তু তৃণমূল এলাকার একজন ব্যবহারকারী হয়তো সেটাও পারে না। সেখানকার ব্যবহারকারীর জন্য ইন্টারনেট আরও সাশ্রয়ী করতে হবে সরকারকে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবই বলছে যে, প্রতি চারজনে একজন ইন্টারনেট সেবার আওতায় আছে। এই হার বাড়াতে হবে।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়লে এর সুফল জাতীয় অর্থনীতিতে পড়বে।

শুল্ক কমানোয় স্বস্তি দেখছেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী ব্যবসায়ীদের সংগঠন আইএসপিএবি। সংগঠনটির সভাপতি ইমদাদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি স্বস্তির। তবে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ‘পেনিট্রেশন’ (ব্রডব্যান্ডের বিস্তার) খুবই কম। এটাকে বাড়াতে হবে। এ জন্য এর খরচ নামিয়ে আনতে হবে।

ইন্টারনেটের ওপর এখনো উচ্চ হারে শুল্ক আরোপিত হয়। এটাকে কমিয়ে আনতে হবে। নতুন আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারে নতুন কোনো সম্ভাবনা না দেখে টেলিকম সেবার ওপর বিদ্যমান কর আরও কমানোর দাবি জানিয়েছেন বেসিসের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক আলমাস কবীর।

রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, অতিরিক্ত যে কর আরোপ করা হয়েছিল, সেটা আর আরোপ করলাম না। এখানে নতুন কিছু তো পেলাম না। ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট তো প্রত্যাহার করা হয়নি। প্রথমত, এই ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ট্রান্সমিশন কস্ট কমাতে হবে, এনটিটিএন এর চার্জ কমাতে হবে। টেলিকম সেবা খাতে যত মধ্যস্বত্ব আছে, তাদের বাদ দিতে হবে।

‘একটিভ’ শেয়ারিং এবং ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ শেয়ারিং এর অনুমতি দিতে হবে, যেন টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সম্পদ নিজেদের মাঝে বিনিময় করতে পারে। এতে খরচ কমবে, যার সুফল পাবে সাধারণ গ্রাহকরা। টেলিকম সেবার ওপর বিটিআরসি আরোপিত খরচও কমিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আলমাস কবীর আরও বলেন, টেলিকম ব্যবসার জন্য লাইসেন্স ফি দিচ্ছি। সেই লাইসেন্স নবায়ন করতে রিনিউ ফি দিচ্ছি। আয়কর দিচ্ছি। তার ওপর রেভিনিউ শেয়ারিং করতে হচ্ছে বিটিআরসির সঙ্গে। ব্যবসায়ী হিসেবে আমার লাভ হোক বা না হোক, রেভিনিউ শেয়ারিং কিন্তু দিতে হচ্ছে। সোশ্যাল অবলিগেটরি ফান্ডের জন্য অর্থ দিতে হচ্ছে। এসব খরচ কমিয়ে আনতে হবে।

টেলিকম সেবার ওপর বিভিন্ন করের বিষয়ে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, কর আরোপের বিষয়টি সরকারের। এখানে বিটিআরসির কোনো হাত নেই।

আরবি/জেডআর

Link copied!