ঢাকা সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

২১ বছর ধরে সিরাজ প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ

মাইনুল হক ভূঁঁইয়া

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০৯:২৯ এএম

২১ বছর ধরে সিরাজ প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রচলিত সব নিয়ম-রীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে ২১ বছর ধরে কাজ করছেন মো. সিরাজুল ইসলাম। শুধুু আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে নগর পকিল্পনা বিভাগে অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তা থাকলেও সিরাজুল ইসলামকে সরানো হয়নি। সম্ভবত এ ক্ষেত্রে ডিএসসিসি প্রচলিত সব বিধিবিধান ভেঙে এক বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

তাছাড়া সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন দুই মেয়রের অদৃশ্য ইশারায় তার বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিনি মূলত একজন স্থপতি। ইউক্রেনের খারকভ ইনস্টিটিউটে স্থাপত্য বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন তিনি। ১৯৯৭ সালের ১০ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশনের এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনি স্থপতি হিসেবে যোগ দেন। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এ পদের জন্য কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক এবং ন্যূতম পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। কিন্তু সিরাজুল ইসলামের এ দুটির একটিও নেই। না তিনি স্নাতক, না অভিজ্ঞ। 

তিনি স্রেফ ডিপ্লোমাধারী এবং ডিপ্লোমা করার মাত্র ৩ বছর ৫ মাস ২১ দিনের মাথায় আবেদন করেন। তবু তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনের আশীর্বাদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত ও তপশিল ছুড়ে ফেলে দিয়ে তাকে স্থপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

শুধু তাই নয়, ২০০৪ সালে ডিসিসির এক দাপ্তরিক চিঠিতে এক ধাপ লাফ দিয়ে তাকে প্রধান নগর পকিল্পনাবিদের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০১১ সালে ডিসিসি বিভাজিত হয়ে দুই ভাগ হয়ে গেলে সংগত কারণেই দাপ্তরিক চিঠিটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, ২১ বছর ধরে কোনো দাপ্তরিক আদেশ ছাড়াই তিনি অবলীলায় প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে মেয়র বদল হয়ে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস আসেন। তবু তার চেয়ার নড়েনি।

রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানকালীন নির্ভরযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিরাজুল ইসলামকে একের পর এক তিন প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। সেসব প্রকল্পের ব্যয়-বরাদ্দ ছিল অন্তত ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

এসব প্রকল্পে অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ থাকলেও তার টিকিটিও স্পর্শ করা যায়নি। শুধু নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্প থেকেই কমপক্ষে ৩৮ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবু তিনি অধরাই থেকে গেছেন বরাবর। কারণ, দুই মেয়রের আশ্রয়-প্রশ্রয়।

এখনো এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। আরও অভিযোগ পাওয়া যায় যে, প্রকল্প প্রণয়নের নামে সিরাজুল ইসলাম নানা নয়ছয়ের আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি কখনো কখনো তিনি জাল-জালিয়াতি করতেও পিছপা হননি।

ছাত্রলীগের নেতা সাজিয়ে একটি প্রকল্পে তিনি প্রকৌশলী পর্যন্ত নিয়োগ দিয়েছেন। ডিসিসি প্রশাসন তবু কোনো রকম ভ্রুক্ষেপ করেনি। 

সিরাজকে দেওয়া প্রকল্প
সিরাজুল ইসলামকে যেসব প্রকল্পের পিডি নিয়োগ করা হয়েছে সেগুলো হলো: প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার আরবান রিজিলেন্স প্রকল্প (মেয়াদকাল ২০১৫-২০২৩), প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ঢাকা সিটি নেবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্ট (ডিসিএনইউপি) মেয়াদকাল ২০০৯-২০২৪, ৮০০ কোটি টাকার নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্প (কেইস) মেয়াদকাল ২০০৯-২০০২১৪ এবং ইন্টিগ্রেটেড মাস্টার প্ল্যান ফর ঢাকা (২০২০-২০২৩)।

অভিযোগ রয়েছে, এসব বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সিরাজুল ইসলাম নগর পরিকল্পনা বিভাগকে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মো. সিরাজুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল। কোনো কোনো মহল আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে।

অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কেন ২১ বছর ধরে আমাকে একই পদে রাখা হয়েছে, তা কর্তৃপক্ষই ভালো জানেন।’ 

সিরাজুল ইসলাম দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, তার নিয়োগে বিজ্ঞপ্তির কোনো শর্তই ভঙ্গ করা হয়নি।

আরবি/জেডআর

Link copied!