ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

১৫৭ কোটি টাকা ১০ কিস্তিতে দেবে বাংলালিংক

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৫, ১২:৩৪ এএম

১৫৭ কোটি টাকা ১০ কিস্তিতে দেবে বাংলালিংক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

তরঙ্গ বরাদ্দ ফি’র ১৫৭ কোটি ৮ লাখ টাকা ১০ কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ পেয়েছে বেসরকারি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও) বাংলালিংক। অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ সুবিধায় বাংলালিংককে এই সুযোগ দিয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। বাংলালিংকের কাছে বিটিআরসির পাওনা ৮৭০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এই অর্থ পরিশোধের পরিকল্পনা চাওয়া হলেও বিটিআরসিকে দেয়নি বাংলালিংক। তবুও তরঙ্গ বরাদ্দ ফি’র তৃতীয় কিস্তির অর্থ ১০টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য না করলেও বিটিআরসিকে বাংলালিংক জানিয়েছে যে, ক্যাশ ফ্লো এবং রেভিনিউ কম হওয়াতে তরঙ্গ বরাদ্দের ফি দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

২০২২ সালে ২৩০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ৪০.০০ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম বরাদ্দ পায় বাংলালিংক। এই তরঙ্গ বরাদ্দের ফি ১ হাজার ৫৭০ কোটি ৮১ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪৫ টাকা ২০২২ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে পরিশোধ করার কথা বাংলালিংকের। সেই হিসাবে তৃতীয় কিস্তির ১৫৭ কোটি ৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৫ টাকা পরিশোধের তারিখ ছিল গত ১৬ আগস্ট। তবে নির্ধারিত তারিখে কিস্তির টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ওই অর্থ ১৫ শতাংশ বিলম্ব ফিসহ ১০টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধে বিটিআরসিতে আবেদন করে বাংলালিংক।

বাংলালিংকের আবেদন বিষয়ে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মতামতসংক্রান্ত এক নথি রয়েছে রূপালী বাংলাদেশের কাছে।

স্পেকট্রাম বিভাগ নিজেদের মতামতে জানায়, তরঙ্গ বরাদ্দ ফি দেরিতে দেওয়ার সুযোগ নেই। নিলাম নির্দেশিকা, তরঙ্গ বরাদ্দপত্র এবং ডিমান্ড নোটে বর্ণিত শর্ত ও সময় অনুযায়ী বরাদ্দ ফি প্রদান বাধ্যতামূলক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফি বা চার্জ প্রদানে ব্যর্থ হলে তরঙ্গ বাতিল হবে এবং পূর্বে পরিশোধিত সব অর্থ বাজেয়াপ্তও হতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে তৃতীয় কিস্তির অর্থ পরিশোধে বাংলালিংককে চিঠি দেয় কমিশন। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেও ফি জমা দেয়নি বাংলালিংক। উলটো গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে তৃতীয় কিস্তির টাকা ১০ শতাংশ হারে ১৫ শতাংশ বিলম্ব ফিসহ বিটিআরসিতে জমা দেয় বাংলালিংক। তৃতীয় কিস্তির ৩১ কোটি ৪১ লাখ ৬৩ হাজার ৯১১ টাকা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করেছে অপারেটরটি।

তবে তরঙ্গ বরাদ্দ ফি, আইএসএ অডিট এবং টু-জি ভ্যাট মামলার বিলম্ব ফি বাবদ বাংলালিংকের কাছে বিটিআরসির বকেয়া ৮৭০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। তরঙ্গ বরাদ্দের তৃতীয় কিস্তি বিলম্বে পরিশোধসহ এই ৮৭০ কোটি টাকার বিষয়ে গত মাসে বাংলালিংকের সঙ্গে বৈঠক করে বিটিআরসি। বৈঠকে ‘ক্যাশ ইনফ্লো (নগদ প্রবাহ)’ এবং ‘রেভিনিউ’ পূর্বের তুলনায় হ্রাস হয়েছে বলে জানায় বাংলালিংক। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, ৮৭০ কোটি ১৯ লাখ টাকা পরিশোধের বিষয়টি বাংলালিংক কমিশনে একটি রোডম্যাপ দাখিল করবে। সেই রোডম্যাপ কমিশন সভায় উপস্থাপনের মাধ্যমে বাংলালিংকের বিষয়টি নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ২৪ ডিসেম্বর শুধু ২০২২ সালের বরাদ্দকৃত স্পেকট্রাম ফি’র তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১৫৭ কোটি ৮ লাখ টাকা ১০টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের রোডম্যাপ দিয়েছে বাংলালিংক। কিন্তু বাকি ৭২৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার বিষয়ে কিছুই জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি। অবশ্য কাক্সিক্ষত পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ না দিলেও তৃতীয় কিস্তি ১০টি মাসিক কিস্তিতে দেওয়ার সুযোগ ঠিকই পেয়েছে বাংলালিংক। আগামী জুনের মধ্যে তৃতীয় কিস্তির ১৫৭ কোটি ৮ লাখ টাকা ১৫ শতাংশ বিলম্ব ফি’সহ পরিশোধ করতে পারবে বাংলালিংক। অর্থাৎ স্পেকট্রাম বিভাগের মতামত উপেক্ষা করে বাংলালিংককে এই সুবিধাটি দিয়েছে কমিশন।

এ বিষয়ে রোববার বাংলালিংকের কাছে লিখিত বক্তব্য চাওয়া হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় যোগাযোগ করা হলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলালিংকের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি গতকাল বুধবার বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী এবং অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের পরিচালক রাশেদুল ওয়াদুদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।

আরবি/জেডআর

Link copied!