ঢাকা শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

প্রশাসকে অসন্তুষ্ট ই-ক্যাব সদস্যরা

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫, ০২:০৬ এএম

প্রশাসকে অসন্তুষ্ট ই-ক্যাব সদস্যরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) প্রশাসকের কাজে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সংগঠনের সদস্যদের মাঝে। ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে না পারা, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে না পারা এবং আওয়ামী লীগের দোসরশম ই-ক্যাবের সাবেক সভাপতি শমী কায়সারপন্থিদের পুনর্বহালের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সদস্যদের। নির্বাচন আয়োজনে প্রশাসকের গঠিত ই-ক্যাব সহায়ক কমিটির একাংশের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ই-ক্যাবের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভনের বিরুদ্ধে। সদস্যদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে অবশ্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছে শোভনকে। তবে সদস্যদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শোভন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলী।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ই-ক্যাবের তৎকালীন সভাপতি শমী কায়সার গত বছরের ১৩ আগস্ট পদত্যাগ করেন। এর কয়েক দিন পর গোটা পরিচালনা পরিষদই পদত্যাগ করে। গত ১০  সেপ্টেম্বর ই-ক্যাবের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের উপসচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলী। ই-ক্যাবে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার প্রস্তুতির জন্য একই বছরের  ২০ নভেম্বর সদস্যদের মধ্যে থেকে ১৫ জনকে নিয়ে একটি সহায়ক কমিটি গঠন করেন প্রশাসক। গত ১৪ জানুয়ারি সহায়ক কমিটি বড় করে ৩৬ সদস্যবিশিষ্ট করা হয়। নতুন সদস্যদের যুক্ত করার পাশাপাশি আগের কমিটি থেকেও বাদ দেওয়া হয় কয়েকজনকে। তবে সহায়ক কমিটির একাংশ শুরু থেকেই ই-ক্যাবের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভনের অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল। জাহাঙ্গীর আলম শোভন সাবেক সভাপতি শমী কায়সার এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমালের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ সদস্যদের। 

তমালের উপস্থিতিতে সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে আশঙ্কা সহায়ক কমিটির একাংশ সদস্যদের।

শোভনকে ই-ক্যাবের দাপ্তরিক কাজ থেকে দূরে রাখার সুপারিশ ছিল সহায়ক কমিটির। এই সুপারিশ প্রশাসক সাঈদ আলী রাখেননি বলে অভিযোগ করেছেন সদস্যরা। এমন প্রেক্ষাপটে গত ২২ জানুয়ারি ই-ক্যাবের পুনর্গঠিত সহায়ক কমিটির সদস্যদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সহায়ক কমিটির এক সদস্যর সঙ্গে শোভনের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায়। এ নিয়ে পরের দিন প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগি সদস্য মুহাম্মাদ ইসমাইল হুসাইন। গত ২৮ জানুয়ারি বনানী থানায় এ নিয়ে একটি সাধারন ডায়েরি করা হয়েছে বলেও জানা যায়। অন্যদিকে শোভন এবং প্রশাসকের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্টি জানিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন সহায়ক কমিটির আরেক সদস্য সাইফুল ইসলাম। অভিযোগের কপি রয়েছে রূপালী বাংলাদেশের কাছে।

অভিযোগে বলা হয়, দেশের ই-কমার্স খাতের দ্রুত বিকাশ ও উন্নয়নকল্পে সমন্বিত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাণিজ্য সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও দেশে যখন বৈষম্য-দুর্নীতি-অপশাসন বিরোধী বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, তখনই এই সংগঠনটির ঘাড়ে চেপে বসেন ওই দুই ব্যক্তি। তারা বিগত সময়ের সুবিধাভোগী ও দুর্নীতিবাজদের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষার পাশাপাশি অপকৌশলের অংশ হিসেবে ই-ক্যাবকেন্দ্রিক গঠিত সিন্ডিকেট কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে সংগঠনটিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছেন। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে প্রশাসক সাঈদ আলী ও নির্বাহী পরিচালক শোভনকে অপসারণ করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানান সাইফুল ইসলাম।

প্রশাসকের এ ধরনের কার্যক্রমকে সংস্কারবিরোধী কার্যক্রম বলে মনে করে সংগঠনটির সদস্যরা। তারা বলছেন, পুনর্গঠিত সহায়ক কমিটির কিছু সদস্য প্রায়শই সংস্কারপন্থি সদস্যদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে কথা বলেন।

এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কখনো কখনো তারা সহায়ক কমিটির যোগাযোগের জন্য খোলা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অশোভন শব্দ ও বাক্যের ব্যবহার করেন। ওই গ্রুপে প্রশাসক সাঈদ আলীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তবে তিনি এখন পর্যন্ত এ ধরনের বাক্য ব্যবহারের বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেননি।

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, প্রথম সহায়ক কমিটি ই-ক্যাবের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও সে বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বরং সহায়ক কমিটির সদস্যদের মধ্যে যাতে বিরোধ সৃষ্টি করা যায় সে জন্য কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৬ জন করা হয়। ই-ক্যাবের নির্বাহী কমিটির আকারই সর্বোচ্চ ১১ সদস্য নিয়ে হয়। এত বড় সহায়ক কমিটি কেন করা হয়েছে তা খুবই স্পষ্ট। আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, ভুয়া ভোটার তৈরীর কারিগর, দুর্নীতিবাজদের পুনর্বাসন করার উদ্দেশ্যেই এভাবে কমিটিতে নিজের পক্ষের লোকদের দিয়ে দল ভারী করা হচ্ছে।

তবে এসব অভিযোগ করে প্রশাসক সাঈদ আলী বলেন, নির্বাচন দিতে পারিনি এটা ঠিক। তবে কোনো পক্ষকেই সুবিধা দিচ্ছি না। নির্বাহী পরিচালক না থাকলে আমি সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারব না, কারণ ই-ক্যাবের বিষয়ে আমি কিছু জানি না, সদস্যদেরও চিনি না। দাপ্তরিক কাজ করা যাবে না তাকে ছাড়া। তাই তাকে অপসারণ করিনি। কিন্তু বাকি সব কাজ নিয়ম অনুযায়ীই হচ্ছে।

নিজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জাহাঙ্গীর আলম শোভন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগ মিথ্যা। তবুও সদস্যদের দাবির মুখে আমি দায়িত্ব থেকে সরে এসেছি। আমাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, আমি ছুটিতে যাচ্ছি। আমি কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত নই।

আরবি/জেডআরে

Link copied!