ঢাকা সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

দাবির ইস্যুতে ক্লান্ত ঢাকা

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫, ১২:৪০ এএম

দাবির ইস্যুতে ক্লান্ত ঢাকা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ঢাকার রাজপথে আন্দোলন হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের চিত্র। নানা দাবিতে কথায় কথায় চলছে সড়ক অবরোধ। কোথাও কোথাও সংঘাত-সহিংসতার ঘটনাও এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

কারো দাবি চাকরি স্থায়ীকরণ, কেউ চান সরকারিকরণ। বদলি নিয়োগ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন। ঢাকার কাঁধে এখন শুধু আন্দোলনের চাপ। দাবির ইস্যুতে ক্লান্ত ঢাকা। আন্দোলনকারীদের বেশির ভাগ ব্যানারে লেখা বঞ্চিত আর বৈষম্যের শিকার জাতীয় শব্দ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় ছয় মাসের অধিক সময়ে সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষ বা হতাহতের ঘটনাও কম ঘটেনি। মাঝখানে কিছুটা বিরতি থাকলেও সম্প্রতি ঘন ঘন সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটছে। শুধু রাজপথের আন্দোলনই নয়, দীর্ঘ ১৫ বছরের বঞ্চিত বলে দাবি-দাওয়া আদায়ে অবস্থান-অনশন হয়েছে সচিবালয়সহ সরকারি অফিসেও। এমএলএসএস থেকে শুরু করে বাদ যায়নি ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও।

নতুন বছরে গত এক মাসে আন্দোলন হয়েছে অন্তত ৪৫টি। এসব আন্দোলন-বিক্ষোভ আর সড়ক অবরোধে প্রতিনিয়ত স্থবির হয়ে পড়ছে ঢাকা শহর, সীমাহীন দুর্ভোগে নগরবাসী। এতে বিপর্যস্ত, বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ তারা। সরকার শুরু থেকে যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের অধিকারকে সমর্থন করলেও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন না করতে বারবার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! লাগাম টানা যাচ্ছে না বহুমুখী আন্দোলনের। ফলে ভোগান্তির শেষ নেই ঢাকাবাসীর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেখ হাসিনার আমলে কেউ দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়কে নামতে পারত না। পুলিশের লাঠিচার্জ-গুলি, পাশাপাশি হেলমেটবাহিনীর তাণ্ডবে আন্দোলন থমকে যেত। মানুষ এখন একটু ফ্রিলি কথা বলতে পারছে। ফলে তারা চাইছে আন্দোলন করে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে। এতে করে যানজটে স্থবির সড়কে আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভুগতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অফিস শেষে হেঁটে বাসায় ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন লাখো মানুষ। তবে রাজপথ চলমান রাখতে আন্দোলন ইস্যুতে উপদেষ্টাদের নিয়ে একটি সেল গঠন করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

গত ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুর দিকেই আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। সচিবালয় ঘেরাও করে ১৯ আগস্টের আন্দোলন ছিল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় স্থগিত এইএচএসসি পরীক্ষাগুলো না নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফল প্রকাশের দাবিতে। এর বিপরীতে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতেও আন্দোলন হয়। পরে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফল ঘোষণা হয়। তাতে যারা পাস করেননি, তারাও নামেন আন্দোলনে, ঘেরাও করেন শিক্ষাবোর্ড। এক ১৯ আগস্টেই আরও নানা দাবিতে রাজধানীর ১৭টি পয়েন্টে চলে অবরোধ, আন্দোলন। কারো দাবি চাকরি স্থায়ীকরণ, কেউ চান সরকারিকরণ-বদলি নিয়োগসহ নানা ইস্যু। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের আন্দোলন চলে টানা ৯ দিন। দিনের বিভিন্ন সময়ে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ করে রাখেন তারা। এরপর আন্দোলনে নামেন আনসার সদস্যরা।

২৫ আগস্ট সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ করে রাখেন সচিবালয়। রাজপথের আন্দোলনই নয়, এতদিনের বঞ্চিত বলে দাবি-দাওয়া আদায়ে অবস্থান-অনশন হয় সচিবালয়সহ সরকারি অফিসেও। আন্দোলন করে ৪৩ বিসিএসএ বাদপড়ারাও। ৪০ ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত এসআইদের, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ইস্যুতে সচিবালয় অবস্থান-অনশন কর্মসূচি চলে দুই দিন। পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী শব্দ নিয়ে আন্দোলন-সংঘর্ষ হয় চার দিন। এ ছাড়া বিডিআর সদস্যদের পরিবার ও চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরাও নামেন রাজপথে। গত মঙ্গলবার সারা দেশে রেল চলাচলই বন্ধ করে দিলেন রানিং স্টাফরা। সাধারণ মানুষের প্রশ্নÑ এখনই কেন এত দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন? কেনইবা একমাত্র পথ রাজপথ? গতকাল রোববারও এক দিনে ৫-৬টি আন্দোলন কর্মসূচি ছিল। গতকাল তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণার দাবিতে মহাখালীতে কলেজের সামনের সড়কে বাঁশ দিয়ে অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে চিকিৎসা, পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণের দাবিতে শ্যামলীর প্রধান সড়ক অবরোধ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতেরা। তারা আসাদগেট থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত সড়কের দুপাশে অবস্থান নেন। এতে করে সড়কের দুপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক আহতকে সড়কে শুয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

এর আগে, শনিবার রাত ১১টার দিকে আন্দোলনে আহতেরা একই দাবিতে পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে। এতে করে শ্যামলী থেকে আগারগাঁও সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

তিতুমীর কলেজ ইস্যুতে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সময় বেঁধে দিয়ে কোনো কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবি যৌক্তিক নয়। তিতুমীরসহ ৭ কলেজকে নিয়ে সরকার গঠিত কমিটি স্বতন্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

সময় বেঁধে দিয়ে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করা যৌক্তিক না। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অযৌক্তিকভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব, আর সেটার ভার পরবর্তী সরকারকে বহন করতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারব না।

এ ছাড়াও গতকাল রাজধানীর হাইকোর্ট মাজার চত্বরে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরি হারানো পুলিশ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে নৃশংস জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সেইফ এক্সিট দেওয়ার প্রতিবাদে ও ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে ইনকিলাব মঞ্চকে আটকে দেয় পুলিশ। এভাবেই প্রতিনিয়ত এসব নানা আন্দোলনে সীমাহীন দুর্ভোগে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। এমনকি লাগামহীন এসব আন্দোলনের ফলে বেচাকেনাও বন্ধ হয়ে যায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এ অবস্থায় আইন করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে রফিকুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, শাহবাগ যাব বলে মিরপুর থেকে বাসে উঠেছি। আগারগাঁও পর্যন্ত এসে দেখি রাস্তা বন্ধ। দুই দিন পর পর এখানে কোনো না কোনো আন্দোলন হয়। এর আগেও শিক্ষকরা আন্দোলন করেছে, শুনেছি তিতুমীরের শিক্ষার্থীরও আন্দোলন করছে। ঢাকা শহর এখন আন্দোলন আর দাবি আদায়ের শহর হয়ে গেছে। আরেক পথচারী রোজিনা খাতুন বলেন, মানুষ একটু ফ্রিলি কথা বলতে পারতেছে। এ জন্য মানুষ চাইতেছে একটু আন্দোলন করে অধিকারটা আদায় করে নিতে। আগের সরকার পুলিশ অথবা লাঠিচার্জের মাধ্যমে আন্দোলনটা থামায়ে দিত। বাট এখন সেটা করতেছে না। ফলে যার যত দাবি সব নিয়ে রাস্তায়। এতে যে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অবস্থা নাজেহাল সেইদিকে কারো খেয়াল নেই।

ঢাকাতে আন্দোলন ও ব্যাপক যানজটের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক অবস্থা খুবই নাজুক। মানুষ খুবই কষ্ট করছে। আমার নিজেরও কষ্ট লাগে। যখন দেখি মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকে। ছোট একটা দাবি নিয়ে বিশজন লোক রাস্তা আটকে দেয়। আমি তাদের বলব আপনারা ছোট দাবি নিয়ে রাস্তা আটকায়েন না। আপনারা ফুটপাতে অবস্থান করুন। কিন্তু খুবই দুঃখজনক যেকোনো দাবি-দাওয়ার মোক্ষম স্থল হয়ে গেছে রাস্তা অবরোধ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, এতদিন একপক্ষ সুবিধা নিয়েছে। বঞ্চিতরা তাই ব্যস্ত দ্রুত নিজেদের ঘাটতি মেটাতে। এ জন্য তারা দাবি আদায়ে রাজপথে নামছেন। তারা মনে করছেন, একটা অপরচুনিটি সামনে আসছে, এই সময়টাকে ইউটিলাইজ করতে সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের স্বার্থগোষ্ঠী তারা তাদের স্বার্থ আদায়ের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছেন। তবে আন্দোলন করতে গিয়ে যাতে মানুষের জনদুর্ভোগ না হয় সেই দিকে সবার দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে রাজপথ চলমান রাখতে আন্দোলন ইস্যুতে উপদেষ্টাদের নিয়ে একটি সেল করার পরামর্শ ড. সাব্বির আহমদের। মানবাধিকার কর্মী নূর খান এ প্রসঙ্গে বলেন, যারা আন্দোলন করছেন তাদের দাবির যৌক্তিকতা আছে। গত ১৫ বছরে অনেক বৈষম্য এবং অনিয়মে অনেকেই বঞ্চিত। ফলে বঞ্চিতরা মনে করছেন, এখনই সময় এই বৈষম্য অবসানের। কিন্তু তারা এই দাবি জানাতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক পথে না গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করছেন।

কখনো সচিবালয়ে ঢুকে পড়ছেন, কখনো প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বসে পড়ছেন। ঢাকার রাস্তা দখল করে আন্দোলন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন, যা দুঃখজনক। তিনি বলেন, সব দাবি সরকার একবারে পূরণ করতে পারবে না। তাই উভয় পক্ষকেই সহনশীল হতে হবে।

গত ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরুদ্ধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুধু সায়েন্স ল্যাবই নয়, এ সময় পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার ও মিরপুর টেকনিক্যাল মোড়ও অবরোধ করে তারা। এতে চতুর্মুখী সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায় রাজধানীতে চলাচল করা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষদের। আর এ ঘটনা থেকেই ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এই ঘটনা উভয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাংবাদিক ও কয়েকজন পথচারীসহ অনেকে আহত হয়েছেন।

তার আগে এদিন দুপুরে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণাসহ ছয় দফা দাবিতে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোট। অবস্থান কর্মসূচি থেকে স্মারকলিপি দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করলে শাহবাগ মোড়ে লাঠিপেটা করে পুলিশ। পাশাপাশি জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। আন্দোলন করা শিক্ষকদের মঙ্গলবারও শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নেয়। গত ২৪ জানুয়ারি দশম গ্রেড বেতন স্কেলের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। 

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার জন্য পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। তবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়, এমন কর্মসূচি পালন না করতে আমরা অনুরোধ করছি।

আরবি/জেডআর

Link copied!