ঢাকা সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ব্যর্থ হচ্ছে অর্থনীতির সব সূত্রই

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫, ০১:০৩ এএম

ব্যর্থ হচ্ছে অর্থনীতির সব সূত্রই

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে চলছে না। বাজার অর্থনীতিতেও অর্থনীতির সূত্র কাজ করছে না। এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য যে কৌশলই নেওয়া হচ্ছে তা ব্যর্থ হচ্ছে। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ জন্য ১০টি গবেষণাপত্র বা পলিসি নোট প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্থ বিভাগকে। এসব গবেষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া ৪৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সভা এসপিএফএমএস প্রোগ্রামের আওতায় কম্পোনেন্ট-১ এর পিআইটি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ অনুবিভাগ বাংলাদেশের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপর ১০টি গবেষণাপত্র পলিসি নোট প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগের এসপিএফএমএস প্রোগ্রামের সিনিয়র কনসাস্ট্যান্টি পদ এ অনুবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে গবেষণাপত্র পলিসি নোটগুলো প্রস্তুত করবেন। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজরের অনুমোদন নিয়ে গবেষণার বিষয় পরিবর্তন করা যাবে।

গবেষণাপত্রগুলো সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগ সামষ্টিক অর্থনীতি-১ এর ১০ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অধিশাখা পর্যায়ে প্রত্যেক তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা এবং অনুবিভাগ পর্যায়ে সামগ্রিকভাবে সুপারভাইজর হিসেবে অনুবিভাগ প্রধানসহ প্রত্যেকে এক লাখ করে টাকা করে এ গবেষণা কার্যক্রমের জন্য সম্মানী হিসেবে পাবেন। এই গবেষণার ব্যয় এসপিএফএমএস প্রোগ্রামের কম্পোনেন্ট-১ থেকে ব্যয় করা হবে।

যে ১০টি বিষয়ের ওপর গবেষণা করা হবে তা হচ্ছে চাহিদা-পুল বনাম খরচ-পুল ফ্যাক্টরে মুদ্রাস্ফীতি।

বাংলাদেশ মুদ্রাস্ফীতির ওপর উৎপাদন ব্যবধানের প্রভাব এবং চাহিদা-পুল এবং খরচ-পুল ফ্যাক্টরের আপেক্ষিক অবদান পরীক্ষা করা। সংবেদনশীলতা বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি এবং পরিবর্তনের প্রতি উৎপাদন ব্যবধান টেলরের প্যারামিটারের নিয়মে মুদ্রাস্ফীতি, উৎপাদন এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর প্যারামিটারের পরিবর্তনের (মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা, উৎপাদন ব্যবধান ও প্রকৃত সুদের হার) প্রভাব।

বাংলাদেশে প্রকৃত ব্যক্তিগত খরচের নির্ধারক: একটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ। তাই বাংলাদেশে ব্যক্তিগত খরচকে প্রভাবিত করে এমন প্রধান কারণগুলো মূল্যায়ন করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে নিষ্পত্তিযোগ্য আয়, মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা, রেমিট্যান্স এবং সরকারি সামাজিক সুরক্ষা জাল। বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি এবং বিনিময় হারের ওপর সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাবের মধ্যে থাকবে রেমিট্যান্স বাংলাদেশে জিডিপি ত্বরান্বিতকরণ, সম্ভাব্য জিডিপি এবং প্রকৃত সুদের হারের পরিবর্তনের জন্য প্রকৃত বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর প্রভাব।

বাংলাদেশে জিডিপি ডিফ্লেটরের নির্ধারক বিশ্লেষণ: মুদ্রাস্ফীতিমূলক চাপ এবং খাতভিত্তিক অবদানের পরিমাণগত মূল্যায়ন। এতে থাকবে বাংলাদেশের জিডিপি ডিফ্যাক্টরের মূল নির্ধারকগুলো অনুসন্ধান করুন, যার মধ্যে রয়েছে খাতভিত্তিক উৎপাদন পরিবর্তন, পণ্যমূল্যের ওঠানামা এবং নীতিগত হস্তক্ষেপ। জিডিপি ডিফ্যাক্টর এবং ভোক্তা মুদ্রাস্ফীতির (সিপিআই) মধ্যে সম্পর্ক মূল্যায়ন করা।

বাংলাদেশে অর্থের চাহিদার নির্ধারক: একটি অভিজ্ঞতামূলক গবেষণা করা হবে। যার মধ্যে থাকবে বাংলাদেশে অর্থের চাহিদার ওপর প্রভাব ফেলার মূল কারণগুলো (যেমন, আয়, সুদের হার, মুদ্রাস্ফীতি, প্রত্যাশা) এবং মুদ্রানীতি কীভাবে সাড়া দিতে পারে তা অনুসন্ধান করা হবে।

বাংলাদেশের আমদানি চাহিদার একটি অভিজ্ঞতামূলক বিশ্লেষণ: একটি নীতিগত দৃষ্টিকোণ। এতে থাকবে বাস্তব জিডিপিতে কীভাবে পরিবর্তন হয়, তার বিশ্লেষণ।

আরইইআর এবং বৈশ্বিক পণ্যের দাম, যেমন তেল বা খাদ্যের দাম, বাংলাদেশের আমদানি চাহিদাকে প্রভাবিত করে এবং কোন কৌশলগুলো অর্থনীতির প্রভাব প্রশমিত করে।

রপ্তানি কার্যক্রমের ওপর বিনিময় হার এবং অংশীদারদের জিডিপি এবং বাণিজ্য নীতির প্রভাব বাংলাদেশের। এতে থাকবে বিনিময় হারের ওঠানামা, অংশীদারদের জিডিপি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য চুক্তি (যেমন- বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি) কীভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে তা তুলে আনা।

বাংলাদেশে বেকারত্ব এবং আউটপুট গ্যাপের মধ্যে সম্পর্ক অন্বেষণ: একটি অভিজ্ঞতামূলক বিশ্লেষণ। এতে থাকবে কর্মক্ষমতা। বেকারত্বের হার এবং উৎপাদন ব্যবধানের মধ্যে সম্পর্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্লেষণের প্রেক্ষাপটে প্রযোজ্যতা।

বিশেষ করে, এটি পরীক্ষা করবে যে উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওঠানামা কীভাবে বেকারত্বকে প্রভাবিত করে এবং আইন দ্বারা প্রস্তাবিত ঐতিহাসিক সম্পর্ক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রযোজ্য কি না।

এদিকে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি গত কয়েক বছর থেকেই শুরু হয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ও ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে এ মাসে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে ফেলছে। ধারদেনা করছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষায় খরচ কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। সানেমের একটি জরিপে উঠে এসেছে, সঞ্চয় ভাঙিয়ে ব্যবহার করেছে ৩৫.৩ শতাংশ পরিবার, সন্তানের পড়ালেখার খরচ কমিয়েছে ১০.৪ শতাংশ পরিবার, মাংস খাওয়া কমিয়েছে ৯৬.৪ শতাংশ পরিবার, মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮.২২ শতাংশ পরিবার, ডিম খাওয়া কমিয়েছে ৭৭ শতাংশ পরিবার। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের ৩৭ শতাংশ পরিবার তিন বেলার মধ্যে এক বেলা খেতে পারছে না। ৪০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এমন অনেক দিন তাদের ঘরে কোনো খাবার ছিল না। এ সময় এমনও দিন গেছে, পুরো দিন না খেয়ে কেটেছে ১৮ শতাংশ পরিবারের।

আরবি/জেডআর

Link copied!