ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করেন পলিসি অ্যাডভাইজর

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ১২:৪৬ এএম

প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করেন পলিসি অ্যাডভাইজর

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কোনো ধরনের লিখিত অনুমতি ছাড়াই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের একটি প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করছিলেন বিভাগের পলিসি অ্যাডভাইজর (সমন্বয় এবং সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ বা আইডিয়া প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করলেও এর সঙ্গে প্রকল্পের কার্যক্রমের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না।

উপরন্তু, গাড়ি ব্যবহার করলেও তার লগ বইতে স্বাক্ষর করেননি পলিসি অ্যাডভাইজর ফয়েজ তৈয়্যব।

ফয়েজ তৈয়্যবের গাড়ি ব্যবহারের পেছনে খরচ হয়েছে ৬৬০ লিটার জ্বালানি তেল আর ২০০ ঘণ্টা ওভারটাইম ডিউটি করেছেন গাড়ির চালক।

সবমিলিয়ে ফয়েজ তৈয়্যবের কাছে ৮৫ হাজার ৩০০ টাকা চাওয়া হয়েছে আইডিয়া প্রকল্প থেকে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর আইসিটি বিভাগের পলিসি অ্যাডভাইজরের (সমন্বয় এবং সংস্কার) দায়িত্ব পান ফয়েজ তৈয়্যব।

জানা যায়, উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির মাধ্যমে নিয়োগকৃত হয়ে সরকারের সাহায্যে দায়িত্ব পালন করছেন ফয়েজ তৈয়্যব। ইউএনডিপি থেকে তিনি কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না। 

এদিকে আইডিয়া প্রকল্পের গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৮২৭৭ নম্বর প্লেটের জিপ গাড়িটি ব্যবহার করছিলেন ফয়েজ তৈয়্যব।

তবে এই গাড়িটি বরাদ্দে কোনো লিখিত অনুমোদন ছিল না বলেও জানা যায়। গাড়িটির বিষয়ে ফয়েজ তৈয়্যবকে প্রকল্প কার্যালয় থেকে দেওয়া এক চিঠি অনুযায়ী, স্রেফ মৌখিক নির্দেশনায় গাড়িটি ব্যবহার করছিলেন তিনি।

সে সময় প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন নজরুল ইসলাম। শুধু তাই নয়, গাড়ি ব্যবহার করলেও এর লগ বইতে স্বাক্ষর করতেন না ফয়েজ তৈয়্যব।

নজরুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশে প্রকল্পের অ্যাসোসিয়েট (ডকুমেন্টেশন) মাহমুদুল হাসান লগ বইতে সাক্ষর করে আসছিলেন। 

সম্প্রতি প্রকল্পের পরিচালক পরিবর্তিত হলে নতুন পরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান গাড়িটি প্রকল্পে ফিরিয়ে আনেন।

পাশাপাশি গাড়িটি ব্যবহারের জন্য জ্বালানি ব্যয় ও চালকের ওভারটাইম বাবদ ৮৫ হাজার ৩০০ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার অনুরোধ করে ফয়েজ তৈয়্যবকে চিঠি দেন প্রকল্প পরিচালক কামরুজ্জামান।

চিঠি উল্লেখ করা হয়, গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তিতে গাড়িটি ব্যবহার করেন পলিসি অ্যাডভাইজর।

এ সময় মোট ৩ হাজার ৬৫৩ কিলোমিটার যাত্রার জন্য ৬৬০ লিটার জ্বালানি তেল খরচ হয়। এই জ্বালানির ব্যয় আইডিয়া প্রকল্পের জ্বালানি খাত থেকে বহন করা হয়।

প্রতি লিটার ১০৫ টাকা হারে জ্বালানি বাবদ খরচ হয় ৬৯ হাজার ৩০০ টাকা। পাশাপাশি গাড়িটি ব্যবহারের ফলে এর চালক ফারুক শেখ অতিরিক্ত ২০০ ঘণ্টা ওভারটাইম ডিউটি করেন।

প্রতি ঘণ্টা ৮০ টাকা হারে চালকের ওভারটাইম ব্যয় দাঁড়ায় ১৬ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে গাড়িটির পেছনে প্রকল্পের ব্যয় হয় ৮৫ হাজার ৩০০ টাকা।

গত ৩০ ডিসেম্বর এই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার পাশাপাশি গাড়িটি প্রকল্প কার্যালয়ে ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ফয়েজ তৈয়্যবকে অনুরোধ করেছেন আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক কামরুজ্জামান।

মৌখিক নির্দেশনায় পলিসি অ্যাডভাইজরের এমন গাড়ি ব্যবহারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের মাঝে।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আগের (আওয়ামী লীগ) সরকারের সময় আমলাদের গাড়িসংক্রান্ত নানা অনিয়মের সংবাদ আসত।

নতুন সরকারে যারা আসছেন তাদের প্রতি সেসব আচরণ কাম্য নয়। বিশেষ করে যিনি সংস্কারের দায়িত্বে এসেছেন, তিনিই যদি আগের মতো কাজ করেন তাহলে সংস্কার করবে কে?

গাড়িটির বরাদ্দের বিষয়ে আইডিয়া প্রকল্পের তৎকালীন পরিচালক নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই (মৌখিক) গাড়ি দেওয়া হয়েছিল।

অবশ্য গাড়ি বরাদ্দ এবং চিঠির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বর্তমান পরিচালক কামরুজ্জামান।

সরকারি দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের এমন আচরণ ‘দুর্ভাগ্য’ বলে মন্তব্য জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞদের।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সরকারের সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ইউএনডিপির সঙ্গে সরকারের যদি সুনির্দিষ্ট চুক্তি না থাকে তাকে গাড়ি দেওয়ার বিষয়ে, তাহলে বিষয়টি ঠিক হয়নি।

মুখে মুখে শুদ্ধাচারের কথা বলি, সুশাসনের কথা বলি কিন্তু সুযোগ পাইলে সবাই অপব্যবহার করি। উনি এ দেশের মানুষ হলেও মনে করি, তিনি একটু ভিন্নভাবে চলবেন কারণ ইউএনডিপিতে জবাবদিহিতা আছে, স্বচ্ছতা আছে।

এখন ইউএনডিপি থেকে বেতন নিয়েও যদি আমরা এমন অনাচার করি, তাহলে এটা দুর্ভাগ্য।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গত শনিবার যোগাযোগ করা হয় আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে। গতকাল সোমবার দেখা করে মন্তব্য করবেন জানালেও দিনভর চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

একই সঙ্গে কয়েক দফা হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করলেও মন্তব্য করেননি অভিযুক্ত পলিসি অ্যাডভাইজর ফয়েজ তৈয়্যব।

মন্তব্য চেয়ে বার্তাগুলো পড়লেও কোনো সাড়া দেননি তিনি।

আরবি/জেডআর

Link copied!