ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

জোরপূর্বক পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি দখল জিল্লুরের

মেহেদী হাসান খাজা
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মৌলভীবাজার-৩ (রাজনগর-মৌলভীবাজার সদর) আসনের সাবেক এমপি ওলিলা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের জেলা কমিটির উপদেষ্টা মো. জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকা ঋণ জালিয়াতিসহ বিয়ানীবাজার পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে।

সূত্রমতে, মো. জিল্লুর রহমানের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে দীর্ঘদিন অবৈধ পথে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। রাজনৈতিক মাঠের অভিজ্ঞতা না থাকলেও একেবারে সাধারণ মানুষ থেকে এমপি হন জিল্লুর।

সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে শতকোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি, বিদেশে টাকা পাচারসহ জোরপূর্বক দখল-প্রভাব বিস্তারের বেশকিছু প্রমাণ হাতে এসেছে। অভিযোগ আছে, জিল্লুর রহমান কোম্পানি কেনার কথা বলে নামমাত্র টাকা দিয়ে চুক্তি করেন, পরে সেটা দখলে নিয়ে ওই কোম্পানির নামে মামলা দায়ের করেন। সাবেক এমপি জিল্লুর এভাবে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ মিলেছে।

সূত্রের দাবি, তিনি এসব প্রতারণার জন্য ওলিলা গ্রুপকে ব্যবহার করেন। ওলিলা গ্রুপ বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সময় দেশ থেকে শতকোটি টাকা লোপাট করেছে। প্রতারণার জন্য ৫ আগস্টের পর তিনি তার অফিসে একজন সেনা কর্মকর্তাকে বসিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে চিটিং করে আসছেন।

সম্প্রতি ওলিলা গ্রুপের গুলশানের নিকেতনের অফিসে একটি অনুসন্ধানী প্রতিনিধি গেলে উল্টো রাজনৈতিক ভয় দেখিয়ে একটি মিডিয়াকে ব্যবহার করেন ওই অফিসের নির্বাহী ব্যবস্থাপক একেএম রফিক হক। অভিযোগ ছিল, ওলিলা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিল্লুর রহমান বিয়ানীবাজার পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি জালিয়াতি করে নিজ নামে লিখে নেন।

একইসঙ্গে, প্রবাসী আবুল কালামের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে মামলা করেন। আমেরিকান প্রবাসী আবুল কালামসহ প্রবাসীদের কষ্টের অর্থে কেনা কোম্পানিটি কেড়ে নেওয়ার পর কয়েকটি মামলা করেন। সেই মিথ্যা মামলায় আবুল কালাম জেলে যান। এরপর কালাম আমেরিকায় যেতে বাধ্য হন।

সূত্র জানায়, কোম্পানির উত্তরাধিকারী আবুল কালামকে বিয়ানীবাজার পাওয়ার জেনারেশন বিক্রি করার সুবাদে মোট ২ ধাপে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার পর তাকে টাকা দিতে গড়িমসি করেন ওলিলা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিল্লুর রহমান।

পরে তার পাতানো ফাদে সর্বশান্ত হওয়া আবুল কালাম টাকা চাইলে তার নামে মানিলডারিং মামলা দেন এবং তাকে আবারও জেলে পাঠান। জেল থেকে বের হয়ে তিনি আবারও ওলিলা গ্রুপের কাছে টাকা চাইতে যান। তখন তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন জিল্লুর রহমানের লোকজনÑ এ অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

এক ভুক্তভোগী জানান, ওলিলা গ্রুপের এমডি মো. জিল্লুর রহমান বিয়ানীবাজার পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ২০১৭ সালে ওলিলা গ্রুপের এমডি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে চুক্তিপত্র হয়।

এই মর্মে বাংলাদেশ ইরেকটরস লিমিটেড কোম্পানির পাওনা টাকা ও বিয়ানীবাজার পাওয়ার জেনারেশনের পাওনা টাকা পরিশোধ করবেন এই মর্মে চুক্তিপত্র হয়। বায়নাস্বরূপ ওলিলা গ্রুপের এমডি মো. জিল্লুর রহমান ২০ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন চুক্তির সাক্ষী আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে বিয়ানি বাজার পাওয়ার জেনারেশনের চেয়ারম্যান বরাবর।

কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত উনি বাকি পাওনা টাকা দেননি। ২০২১ সালে আবুল কালাম বাংলাদেশে এসে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন তিনি কোনো যোগাযোগ ও সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেননি। দীর্ঘ ৭ বছর অপেক্ষা করার পর বাংলাদেশ ইরেকটরস লিমিটেড কোম্পানি কোনো টাকা পায়নি।

এই ভুক্তভোগীর দাবি, জিল্লুর রহমান আমার ও বাংলাদেশ ইরেকটরসের পাওনা টাকা দেওয়ার কথা। সে টাকা না দিয়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ইরেকটরসের সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে মামলা করে। আমাকে জেল পাঠায়। অপমানে আমি আত্মহত্যার চেষ্টাও করি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির উত্তরাধিকারী আবুল কালাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কোম্পানি বিক্রি করে দীর্ঘ ৭ বছর অপেক্ষা করার পর বাংলাদেশ ইরেকটরস লিমিটেড কোম্পানি কোনো টাকা পায়নি। এই টাকার জন্য আমাদের তিনজন মানুষ মারা গেছেন।

সাবেক এমপি জিল্লুর রহমান প্রলোভন দেখিয়ে ও জোরপূর্বক পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি দখল করেছে। বিচারের অভাবে আত্মহত্যা চেষ্টা করেছিলাম। কারণ আমি ধ্বংস হয়ে গেছি, রাস্তায় নেমে পড়েছি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে কোম্পানিটি নিয়ে মাত্র সামান্য কিছু টাকা দিয়েছে। বাকিটা জালিয়াতি করেছে। তিনি বলেন, আমাকে যে চেক দিয়েছে ওলিলা গ্রুপ সেটাও ভুয়া ছিল। তিনি শুধু আমার সঙ্গে নয়, এমন অসংখ্য মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

এ বিষয়ে সাবেক এমপি জিল্লুর রহমানের কোম্পানি ওলিলা গ্রুপের নির্বাহী ব্যবস্থাপক মেজর (অব.) একে এম রফিক হক জানান, বিয়ানীবাজার পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির উত্তরাধিকারী আবুল কালাম যদি ওলিলা গ্রুপের কাছে টাকা পেয়ে থাকে, তাহলে হিসাব করে তার টাকা দেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে সাবেক এমপি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তর ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও খুনের অভিযোগে কয়েকটি মামলা রয়েছে। সে এজাহারভুক্ত আসামি। তার সন্ধান পেলে আটক করা হবে।